আবারও বাড়ল তেল-পেঁয়াজের দাম

0
183

টাইমস ডেক্স: করোনা মহামারির মধ্যে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। অবশ্য রমজান মাসের শেষ দিকে দাম কিছুটা কমে আসে। কিন্তু ঈদের পর নতুন করে দাম বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে খোলা সয়াবিনের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা এবং পাম ও সুপার পাম তেলের দাম আড়াই টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজের দামও কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। তেমন হেরফের নেই অন্যান্য পণ্যের দামে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় সয়াবিনের দাম প্রতি মণে ৪০০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া পাম ও সুপার পাম তেলের দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। এ হিসাবে কেজিতে পাঁচ টাকার বেশি পড়ে। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে পাইকারিতে প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৮০০ টাকায়। এতে করে লিটার প্রতি পাইকারি দাম ১১৭ টাকা। ঈদের আগে মণ ছিল চার হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া পাম ও সুপার পাম তেল যথাক্রমে চার হাজার ৩০০ ও চার হাজার ৪৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে তেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই প্রায় সব কোম্পানি সব ধরনের খোলা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পাইকারিতে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। খুচরায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১২২ থেকে ১২৫ এবং পাম ও সুপার পাম ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানা যায়, ঈদের আগে দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করে ট্যারিফ কমিশনকে জানিয়েছিল কোম্পানিগুলো। তখন রমজানে দাম না বাড়ানোর পরামর্শ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সিটি গ্রæপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারদর বেশি থাকায় আগের দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। এখন দেশি পেঁয়াজ খুচরায় আবারও ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে ঈদের আগে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগি এবং গরু ও ছাগলের মাংসের দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা কম থাকায় এখন মাংসের দাম কিছুটা কমেছে। সামনে মুরগির দাম আরও কমতে পারে। তবে গরু ও ছাগলের মাংসের দাম কমার সম্ভাবনা কম। এদিকে মুরগি এবং গরু ও ছাগলের মাংসের দাম কমলেও সবজির দাম অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে। সেই সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, যা ঈদের আগের দিন ৬৫০ টাকায় উঠেছিল। আর ৯৫০ টাকায় ওঠা খাসির মাংস ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অপরদিকে ঈদের আগে ১৬০ টাকায় উঠে যাওয়া ব্রয়লার মুরগির কেজি কমে ১৪০ টাকায় নেমেছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা, যা ঈদের আগে ৩২০ টাকায় উঠেছিল। ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে লাল লেয়ার মুরগি। আগের মতো লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। গরুর মাংসের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী আশরাফ বলেন, ঈদের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা হয়েছিল। এখন দাম কমে ৫৮০ টাকা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা কম। তবে গরুর মাংসের দাম এর চেয়ে কমার সম্ভাবনা কম। মালিবাগের ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ বলেন, গরুর মাংসের কেজি ৫৮০-৬০০ টাকা সবাই মানিয়ে নিয়েছে। এই দামটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবে ঈদের আগে বাড়তি চাহিদার কারণে দাম বেড়ে গিয়েছিল। এখন আবার আগের দামে ফিরে এসেছে। মুরগির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মিলন শেখ বলেন, ঈদের পর ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কমেছে। তবে লাল লেয়ার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আমাদের ধারণা, লেয়ার মুরগির দাম কয়েকদিনের মধ্যে কমে আসবে। কারণ সোনালি মুরগি ও লেয়ার মুরগির দাম সমান হওয়ায় এখন লেয়ারের চাহিদা কমে গেছে। এদিকে ঈদের আগে খোলা ও প্যাকেট উভয় ধরনের চিনির দাম বেড়ে যায়। এখন সেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। খোলা চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা। আর প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকা কেজি। চিনির মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। আর বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা। এদিকে সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আগের মতো ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। মানভেদে শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ঝিঙে আগের মতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক কেজি কচুরলতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। উস্তের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ইদ্রিস ব্যাপারী বলেন, ঈদের পরে সাধারণত সবজির দাম বাড়ে। তবে এবার সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। সবজির দাম অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কিছুদিন পর সবজির দাম বাড়তে পারে।