আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতালে  ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু ঝুঁকিতে বৃদ্ধা! 

0
1215

কামরুল হোসেন মনি : হতদরিদ্র বৃদ্ধা ইলিয়াস (৬০)। তার কিডনী নষ্ট হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা কেটে ফেলে দেন। তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্রও দেয়া হয়। বাড়িতে আসলে ২-১ দিনের পর ওখান থেকে পায়খানা আসছে। ইলিয়াসের স্ত্রী প্রথমে মনে করেন, কাটা জায়গায় গরমে ঘাম ঘাম বের হচ্ছে হয়তো। এরপর পুনরায় তার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে আসলেই জানতে পারেন ঘাম না ওটা পায়খানা। নগরীর আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতল এ- ডায়াগণস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিতে এসে ওই রোগী এখন মৃত্যু ঝুকিতে আছে। আবুু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের জুনিয়ার কনস্যালটেন্ট (কার্ডিয়া সার্জারী) ডাঃ শহিদুল ইসলাম মুকুল রোগিটির অপারেশন করেন।
খুলনার বিশেষজ্ঞ সার্জারি চিকিৎসকগণ জানান, কীডনের সাথে খাদ্যনালী স্পর্শ থাকে। কিডনী কেটে ফেলার সময় যদি অসাবধনতা কারণে যদি ওই নালীতে ফুটো বা কেটে ফেলে সেলাই করা হয়।  তাহলে ওখান থেকেই পায়খানা বের হবে। তাহলে ওই রোগীকে পুনরায় অপারেশন করতে হবে।

 

ভুল চিকিৎসার পর সেলাই করা স্থান থেকে মল বের হওয়ার চিত্র..খুলনাটাইমস

 

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এ- ডায়াগণস্টিক সেন্টারে সরেজমিনে গেলে চিকিৎসা নিতে আসা বৃদ্ধা ইলিয়াস ও তার স্ত্রী রিনা বেগমের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। হাসপাতালে নিচ তলায় ভর্তি রোগী ইলিয়াসের রূমে ঢুকলেই পায়খানা দুর্ঘন্ধ নাকে আসে। রিনা বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামীর কিডনী অকেজো হওয়ার কারণে চিকিৎসকদের পরামর্শে এ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর কিছুদিন পর অপারেশন করে তার স্বামী কিডনী কেটে ফেলে দেন চিকিৎসকরা। ২-৩ দিন পর তার স্বামীকে নিয়ে যশোর জেলা নড়াইল উপজেলা কালিয়াথানাধীন পুডুলিয়া গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার পরই দেখেন সেলাইয়ের ক্ষত স্থান থেকে ঘাম ঘাম আঠাজাতিয় বের হচ্ছে। প্রথমে মনে করছি গরমের কারণে ঘাম বের হয়। কিন্তু কাচা পায়খানার মতো দুর্ঘন্ধ আসছিলো। কিছুদিন অপেক্ষা করে বুধবার তার স্বামীকে নিয়ে ওই হাসপাতালে আসেন। এখানে আনার পর তিনি জানতে পারেন ওইখান থেকে পায়খানা বের হচ্ছে।

তিনি বলেন, তার কোন ছেলে নেই। দুই মেয়ে তারাও ভারতে বসাবস করে। বুড়োবুড়ির দেখাশুনা করার মতো কেউ নেই। মেয়ে ভারত থেকে এসে তার বাবা’র চিকিৎসা করিয়ে আবার চলে যান। তার স্বামী চিকিৎসার পেছনে এ পর্যন্ত দুই লাখের ওপর টাকা খরচ হয়েছে। এই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয় তার মেয়েরা করেছেন। কতো লাগছে এ ব্যাপারে তিনি জানেন না।
বৃদ্ধা ইলিয়াস বলেন, খুব যন্ত্রণা হচ্ছে ক্ষত স্থান থেকে। ব্যাথায় ঘমু আসে না। কিডনী ফেলে দেয়ার পর ওই সেলাই জায়াগা থেকে আঠালো ঘাম ঘাম বের হচ্ছে। আমরা অতো শিক্ষিত না, তাই চিকিৎসকরা যা বলে তাই বিশ্বাস করতে হয়।

 

 

ভুল চিকিৎসার পর পুনরায় আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধা ইলিয়াস হোসেন..খুলনাটাইমস

 

 

ওই হাসপাতালে সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর বৃদ্ধা ইলিয়াসকে কিডনীজনিত সমস্যার কারণে  এ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর পর গত ২২ সেপ্টেম্বর তাকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৩ অক্টোবর) তাকে এ হাসপাতালে পুনরায় চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করা হয়েছে। তার কিডনী অপারেশন করেন ডাঃ শহিদুল ইসলাম মুকুল।

এ ব্যাপারে আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের জুনিয়ার কনস্যালট্যান্ট (কার্ডিয়া সার্জারী) ডাঃ শহিদুল ইসলাম মুকুল এ প্রতিবেদককে বলেন, রোগীর কিডনী নষ্টো হয়ে যাওয়ায় কেটে ফেলানো হয়। তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ক্ষত স্থানে ক্যান্সারের কোন ইনফেকশনজনিত কারণে সেলাইয়ের ক্ষত স্থান থেকে পায়খানা বের হচ্ছে বলে মনে হয়। তিনি বলেন, আজ শুক্রবার ইলিয়াসের চিকিৎসার বিষয় নিয়ে আমরা পরীক্ষা করবো। কেন এরকম হচ্ছে। তারপর বলা যাবে প্রকৃত ঘটনা কি হয়েছে। এমনিতে তিনি ক্যান্সারের রোগী  ১- দেড় বছরের বেশি দিন বাচবেন না।

 

 

বিশেষজ্ঞ সার্জারি চিকিৎসকগন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, কিডনী কেটে ফেলার সময় খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ ওই সাথে খাদ্যানালীসহ শরীরের বিভিন্ন বিষয় স্পর্শ থাকে। ভুল বশত যদি খাদ্যনালী বা মলদ্বারা নালী কেটে যাওয়ার পর যদি সেলাই করা হয়। তাহলে ওইখান থেকে মল বের হবে। ক্যান্সার বা অন্য কোন কারণে ওখান থেকে মল বের হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। পুনরায় ওই রোগীকে আবার অপারেশন করে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োগ করতে হবে।

এ ব্যাপারে ওই হাসপাতালের এমডি বেলায়েত হোসেনের শালা পরিচয় দিয়ে ডাঃ রাহাত বিকেল ৫ টা ২২ মিনিটে এ প্রতিবেদককে বলেন, রোগী ইলিয়াস হোসেনকে কিডনীজনিত কারণে তাকে এখানে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে তার কিডনী অপারেশনের জন্য অনকলে আবু নাসেরের ডাঃ শহিদুল ইসলাম মুকুল ওই রোগীকে অপারেশন করেন। রোগীকে কিছুদিন থেকেই তাকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন বাড়িতে থাকার পর ওখান থেকে পুজ জাতীয় বের হচ্ছে। রোগী ইলিয়াস এখানে আসার পর ডাঃ শহিদুল ইসলাম মুকুলকে বিষয়টি অবহিত করি।

তিনি (ডাঃ মুকুল) আমাদেরকে জানান, ক্যান্সারের রোগী। হয়তো বাড়িতে কোন ওষুধ বা অবহেলার জনিত বা ক্যান্সার রোগী হওয়ায় অন্য জায়গায় কিছু হতে পারে। রোগীর পুনরায় অপারেশন করে ওই জায়গায় পাইপের মতো ক্যানেল বসিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে।
আবুু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ হাসপাতালে ডাঃ শহিদুল ইসলাম মুকুল (কার্ডিয়া সার্জারী) জুনিয়ার কনস্যালটেন্ট হিসেবে পদে রয়েছেন।