আঞ্চলিক সংস্কৃতি বিকাশে দেশের ৪৮৫টি উপজেলায় সংস্কৃতি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ

0
191

টাইমস ডেস্ক:
সরকার দেশের প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশের জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। কারণ সারাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাতে বর্তমান সরকার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।সেজন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সারাদেশে ৪৮৫টি উপজেলায় ‘সংস্কৃতি ভবন’ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের নানা জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা করতে পারবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি হয়ে গেছে। আর এ মাসেই একনেকে প্রকল্পটি উঠবে বলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারাদেশের ৪শ’ ৮৫টি উপজেলায় ‘উপজেলা সংস্কৃতি ভবন’ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন উপজেলায় জমি খোঁজা হচ্ছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উপজেলা সংস্কৃতি ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের অধীনে এখন পর্যন্ত ৬৩টি উপজেলায় ভবন নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে বাকি সব উপজেলায় ভবন নির্মাণের জন্য জমি খুঁজে বের করা হবে। উপজেলা ভবনগুলোতে তৃণমূল পর্যায়ে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির চর্চা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া ৫শ’ আসনের একটি করে মুক্তমঞ্চ করা হবে। ভবন এলাকায় অন্যান্য বিনোদন হিসেবে মঞ্চের সঙ্গে রয়েছে ফোয়ারা, বাগান, মানুষের চলাফেরা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা। মূলত বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় উপজেলায় সাংস্কৃতিক কর্মকা- বিস্তৃতির লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে সংস্কৃতি ভবন ও মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয়ভাবে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ, চর্চা, প্রচার, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ ও জনগণের মাঝে তুলে ধরার জন্যই এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে গ্রাম পর্যায়ে নতুন প্রজন্ম তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। এর ফলে তাদের মধ্য থেকে অসংখ্য শিল্পী, কলাকুশলী, অভিনেতা, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী জাতীয় পর্যায়ে এসে অবদান রাখতে পারবে।
সূত্র জানায়, দেশে প্রথম ধাপে ১২০টি সংস্কৃতি ভবন নির্মাণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ চলবে। এই প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। গণপূর্ত অধিদফতর কাজটি বাস্তবায়ন করবে। মূলত প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশসহ ওই অঞ্চলের সংস্কৃতি চর্চায় বিশেষ ব্যবস্থাও করা হবে। প্রতিটি অঞ্চলেই প্রশিক্ষক রাখা হবে। তারা অঞ্চল ভিত্তিক গান, বাদ্যযন্ত্রসহ ওই অঞ্চলের সংস্কৃতিকে মানুষের সামনে তুলে নিয়ে আসবে। এটাই হচ্ছে এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। কারণ প্রতিটি অঞ্চলের আলাদা আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে। ওসব সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে চাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের সংস্কৃতি খুব সমৃদ্ধ। কিন্তু ওই সংস্কৃতি দিন দিন আধুনিক সংস্কৃতির কাছে হেরে যাচ্ছে। পাহাড়ী এলাকার মানুষ তাদের সংস্কৃতি চর্চা করতে পারেন তার জন্য সংস্কৃতি ভবনের গুরুত্ব রয়েছে। তাছাড়া শাহ আব্দুল করিম, বিদিত লাল, আকরুম শাহ, উকিল মুন্সী, গিয়াস উদ্দীন আহমেদ, রাধা রমন, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, লালন শাহ, হাছন রাজা, বিজয় সরকার, কানাই লাল শীল, দেবব্রত বিশ্বাস, সিরাজ সাঁইয়ের মতো মরমী গায়কদের স্মৃতি ধরে রাখতেও সংস্কৃতি ভবন নির্মাণ করা জরুরি মনে করছে সরকার।
এদিকে সংস্কৃতি ভবন নির্মাণ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, গণপূর্ত বিভাগ কাজটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করবে। কারণ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের সংস্কৃতি বিকাশে সংস্কৃতি ভবনের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রথম ধাপে ১২০টি ভবন নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক কাজ শেষ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে। কাজটি বাস্তবায়ন অল্পদিনের মধ্যে শুরু করা সম্ভব হবে এবং তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ জবাবদিহিতা রাখা হবে। কোন ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। কারণ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে দেশের শিল্প সাহিত্য ও ঐতিহ্য জড়িত। এখানে কোন ধরনের অনিয়ম হলে ঐতিহ্যের প্রতি আঘাত করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানান, দেশের প্রতিটি এলাকার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনেক অঞ্চলের অনেক মরমী গায়কের গান সুর হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক সংস্কৃতির কাছে দেশের সমৃদ্ধ অতীত হারিয়ে যাচ্ছে। সরকার সেগুলোকে ধরে রাখতেই প্রতিটি এলাকায় সংস্কৃতি ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রথম ধাপে ১২০টি ভবন নির্মাণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো করা হবে। প্রতিটি ভবনের জন্য খরচ হবে ২৭ কোটি টাকা। ওই হিসাবে প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি গণপূর্ত অধিদফতরকে দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। আর সংস্কৃতি ভবনগুলো একই ডিজাইনে হবে।