আজো ভুলেনি দর্শকরা!

0
509

অনলাইন ডেস্ক : হলিউড, বলিউড ও ঢালিউড, পুরো পৃথিবীতে ‘আইকনিক’ বিশেষণটি যার সঙ্গে বেশ মানানসই তিনি হলেন চার্লি চ্যাপলিন। মূলত ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা ছিলেন তিনি। হলিউড সিনেমার শুরু থেকে মধ্যকাল পর্যন্ত চার্লি তার অভিনয় ও পরিচালনা দিয়ে সাফল্যের শিখরে অবস্থান করেছিলেন। গান্ধী থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইনও তার ‘ফ্যান’ ছিলেন।

চার্লি চ্যাপলিনকে সিনেমায় শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতাদের একজন বলেও বিবেচনা করা হয়। চলচ্চিত্র শিল্প জগতে তার প্রভাব এক কথায় অনস্বীকার্য। বিশেষ করে তার ‘ভবঘুরে’ চরিত্রটি আজো সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়। তার কাজ শুধু দর্শকরা দেখেননা রীতিমত মনে বেঁধে রাখেন। চার্লি চ্যাপলিনের কিছু মামুলি বৈশিষ্ট্য ও জানা-অজানা অধ্যায়

১. কালো মোচ, কালো টুপি, হাতে বেত, পায়ে অতি পুরনো বুটজুতো আর পাতিহাঁসের মতো চলনভঙ্গি যা দেখলেই মানুষজন বুঝেন, এটাই চার্লি চ্যাপলিন, নয়তো তার নকল কেউ। তবে আসল চার্লিকে আজো ভুলেননি দর্শক।

২. চার্লি চ্যাপলিন তার ‘ট্র্যাম্প’ বা ‘ভবঘুরে’ চরিত্রে প্রথম আবির্ভূত হন ১৯২১ সালে ‘দ্য কিড’ ছবিতে। হাসিঠাট্টা আর বিষণ্ণতা, ভাঁড়ামো আর হতাশা মিলে এক অদ্ভুত রস সৃষ্টি হয়েছে এই অদ্ভুত চরিত্রটিতে।

৩. চার্লি চ্যাপলিনের জন্ম ১৮৮৯ সালে, খুব সম্ভবত লন্ডনে। তিনি পরলোকগমন করেন ১৯৭৭ সালে, সুইজারল্যান্ডে। দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়েছে তার শৈশবকাল। কাজেই চ্যাপলিন জানতেন, দারিদ্র্য ও হতাশার মধ্যে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে আশা ও স্বপ্ন। এর একটা দিক ফুটে উঠেছে তার ‘গোল্ড রাশ’-এর মতো ছবিতে (১৯২৫)। একদিকে ক্ষুধা, অন্যদিকে ঐশ্বর্য ও সুখাদ্যের স্বপ্ন।

৪. চার্লি চ্যাপলিনের শুরু ও জনপ্রিয়তা নির্বাক ছায়াছবি দিয়ে। সাইলেন্ট ফিল্ম ‘টকিজ’-এ তার উত্তরণ ১৯৩১ সালে, ‘সিটি লাইটস’ ছবির মধ্য দিয়ে। তবে সবাক ছবিতে চ্যাপলিনকে কোনোদিনই বিশেষ ভালো লাগেনি। তাই তিনি নির্বাক ছবি তৈরি চালিয়ে যান, আবার প্রয়োজনে সংলাপও ব্যবহার করেছেন।

৫. মহিলাদের হৃদয় জয় করতে চার্লি চ্যাপলিনের জুড়ি ছিল না। তার পছন্দ ছিল অনেক কম বয়সের মেয়েদের। যা নিয়ে কেলেংকারিও কম হয়নি, দুর্নাম হয়েছে অনেক।

৬. সিনেমায় চার্লি চ্যাপলিন যে চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছিলেন তা আধুনিক পরিভাষায় ‘আন্ডারডগ’ বা নীচের তলার মানুষ। যেখানে নিজের বুদ্ধি ও চাতুর্যের ওপর নির্ভর করে যাদের জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। ‘আন্ডারডগ’ বলতে কিন্তু ‘লুজার’ বা হেরো বোঝায় না। হেরোকেই হিরো করে তুলেছিলেন চ্যাপলিন। আবার ‘মডার্ন টাইমস’-এর মতো ছবিতে ফুটে উঠেছে ‘আধুনিক’ যন্ত্রসভ্যতা ও তার হৃদয়হীনতা সম্পর্কে সমালোচনা।

৭. ১৯৪০ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’, যেখানে হিটলার ও নাৎসিদের খোলাখুলি ব্যঙ্গ করেছেন চ্যাপলিন। খোদ হিটলার নাকি ছবিটি একাধিকবার দেখেছিলেন। চ্যাপলিন অবশ্য পরে বলেছেন, নাৎসি বন্দিশিবিরের বিভীষিকার কথা জানা থাকলে তিনি ছবিটি করতে পারতেন না।

৮. চার্লি চ্যাপলিনের ‘লাইমলাইট’ ছবিটি প্রথম মুক্তি পায় লন্ডনে, ১৯৫২ সালে। এর স্বল্প আগে চ্যাপলিনের মার্কিন মুলুকে আসা নিষিদ্ধ হয়েছিল, তিনি কমিউনিস্ট সন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রে তথাকথিত ‘ম্যাককার্থি আমলে’ যা বহু বুদ্ধিজীবীর কপালে জুটেছিল।

‘লাইমলাইট’ ছবিতে চ্যাপলিন মঞ্চাভিনেতা হিসেবে তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু দিয়েছেন।
৯. চ্যাপলিন দশ বছর ধরে কোনো ছবি না করার পর, ১৯৬৭ সালে মুক্তি পায় তার ‘এ কাউন্টেস ফ্রম হংকং’ ছবিটি। মার্লন ব্র্যান্ডো ও সোফিয়া লোরেনের মতো তারকারা থাকা সত্ত্বেও ছবিটি বক্স অফিসে ফ্লপ করে।
১০. চ্যাপলিন তার জীবনের শেষ দশকগুলি কাটিয়েছেন সুইজারল্যান্ডে। এই সময়ে শুধুমাত্র একবার যুক্তরাষ্ট্র্রে ফিরেছিলেন তিনি, ১৯৭২ সালে।

১১. চ্যাপলিন নয়, তবে তার সৃষ্ট ট্র্যাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রটি বোধহয় বিজ্ঞাপনের জগতের প্রথম বেওয়ারিশ কিন্তু বিশ্বায়িত প্রতীক। কাজেই সব রকমের পণ্য বা বিজ্ঞাপনে চ্যাপলিনের মুখ দেখে অভ্যস্ত আমরা। কস্টিউম বল বা কার্নিভালে চ্যাপলিন সাজেন অনেকেই। তবে সার্কাসের ভাঁড়দের মধ্যে চ্যাপলিনের ছোঁয়া আজো জাগ্রত।

১২. চ্যাপলিন কিংবদন্তির নায়ক, আবার নিজেই কিংবদন্তি। বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে অনধিকার প্রবেশ করে শেষমেষ ইতিহাস জুড়ে থাকা মানুষটি নিজের স্থান-কাল-পাত্রের সীমানা অতিক্রম করে মহাকালের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন।