আগস্টের শোক নেই, আনন্দের মধ্যদিয়ে পুরষ্কার বিতরণ

0
307

নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘কাঁদো বাঙালি, কাঁদো’ লেখা পোস্টারে ছেয়ে গেছে চারদিক। নেতা-কর্মীদের বুকে ঝুলছে শোকের চিহ্ন কালো ব্যাজ। কালো জমিনের ওপর ব্যানারে লেখা ‘জাতীয় শোক দিবস’। এর সবকিছুই মিলে উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রতিদিন শোকের আয়োজনের সঙ্গে। শুধু মেলে না উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খানের আনন্দ-উল্লাসের মধ্যদিয়ে পুরষ্কার বিতরণ।
খুলনার দাকোপ উপজেলায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামার প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে শোক সভা হয়। এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪ তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। কিন্তু অন্যদিকে আগস্টের শোক উদ্যাপন না করে গত বুধবার বিকেলে উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের সোনার বাংলা কলেজ প্রাঙ্গণে ‘নীলকমল স্মৃতি’ উপলক্ষে আট দলীয় ফুটবল টুনামেন্টের চ‚ড়ান্ত খেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনন্দ-উল্লাসের মধ্যদিয়ে খেলায় বিজয়ীদের মাঝে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান পুরষ্কার বিতরণ করে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রেনেড হামলার দিনটিতে এমন কর্মকাÐ করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী ও জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
কামিনীবাসিয়া গ্রামের অন্তত ১২ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ওই দিনে সোনার বাংলা কলেজ প্রাঙ্গণে নীলকমল স্মৃতি সংঘের উদ্যোগে ফাইনাল খেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা আরও জানায়, দুটি দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্ব›দ্ব থাকায় এই দিনেই খেলার চ‚ড়ান্ত ম্যাচ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। তবে বিশেষ এই দিনটি নিয়ে একবারও কেউ ভাবেনি।
স্থানীয় সাবেক নারী ইউপি সদস্য সুলেখা সানা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, খেলাটি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে যদিও দ্ব›দ্ব ছিল। কিন্তু এই দিনে খেলাটি না দিয়ে শোকাবহ মাসের পরে অন্য কোনো দিনে অনুষ্ঠিত হলে ভাল হতো।
চেয়ারম্যানের হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও আনন্দ-উল্লাসে ভরা পরিবেশ দেখে মনে হতেই পারে, এটা কোনো শোকের মাস না। আগস্টের শোক নেই, আনন্দের মধ্যদিয়ে পুরষ্কার বিতরণ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মাঝে। এমন কার্মকÐে অনেকেই নানা মন্তব্য করে বলেন আয়োজকেরা ভুল করতেই পারেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের মাথাও কি ক্ষমতার মোহে এত খারাপ হয়ে গেছে যে, ভুলেই গেছে এটা শোকের মাস?
আয়োজক কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য সুপ্রভাত মÐল মুঠোফেনে বলেন, স্থানীয়দের মধ্যে দ্ব›দ্ব থাকায় পরিচালনার জন্য নামমাত্র কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে খেলোয়াড়রা না বুঝেই ওই দিনে ফাইনাল খেলার আয়োজন করে। কিন্তু গ্রেনেড হামলার শোক সভা পালন করে খেলার শেষের দিকে সেখানে আমরা যায়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন খুলনাটাইমসকে বলেন, আগস্ট মাস আমাদের জন্য একটি শোকাবহ মাস। এই মাসের ১৫ আগস্ট কালোরাতে ঘাতকেরা নির্মমভাবে হত্যা করে কেড়ে নেয় জাতির জনক ও তাঁর স্বপরিবারকে। আবার ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বশূণ্য করার জন্য গ্রেনেড হামলা চালায় বিএনপি। আর সেই শোকের দিনে উপজেলা চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান ঢাকঢোল পিটিয়ে খেলার মাঠে বিজয়ীদের পুরষ্কার তুলে দেন। যা জাতির জন্য একটি কলঙ্কময়। এর প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ প্রকাশ করে থাকে। তিনি বলেন শোকের মাসে আনন্দ-উল্লাস করা মোটেও কাম্য নয়। এমনটি করলে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
এ বিষয়ে দাকোপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান মুঠোফোনে খুলনাটাইমসকে বলেন, সেখানকার ফাইনাল খেলায় গিয়ে ছিলাম। দুদলের খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্ব›েদ্বর কারণে আমাকে ডাকলে সমাধানের জন্য যায়। তবে সেখানে গিয়ে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে আলোচনা করে থাকি। আর শোকের মাসে আনন্দ-উল্লাস করতে নিষেধও করি। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেছিলাম।