আইন অমান্য করে কার্যক্রম চালাচ্ছে অবৈধ করাতকলগুলো

0
645

আজিজুর রহমান, খুলনাটাইমস :
খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়ক ঘেঁষে অবৈধভাবে ১৯টি করাতকল গড়ে উঠেছে। আইন অমান্য করে গড়ে ওঠা এসব করাতকল গত কয়েকবছরে উচ্ছেদ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ করাতকল (স’মিল) প্রকাশ্যেই কার্যক্রম চালালেও নজরে আসেনা প্রশাসনের!

জানা গেছে, এসব অবৈধ করাতকলে সুন্দরবন থেকে পাচার হয়ে আসা বিভিন্ন প্রকারের সরকার নিষিদ্ধ গাছ চেরাই করে চালাচ্ছে জমজমাট ব্যবসা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের বনজসম্পদ। আর এসব থেকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমানের রাজস্ব।
উপজেলার কৈলাশগঞ্জ, বাজুয়া ও চালনা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসকল অবৈধ করাতকলের কারণে যানবাহনের চালক ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় করাতকল থাকায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

সুত্রে জানা যায়, উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবৈধভাবে ১৯টি করাত কল গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে দুইটি করাতকলের লাইসেন্স রয়েছে। বনবিভাগের নীতিমালায় (সংরক্ষিত আইন) সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন সম্পর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরেও নীতিমালা ভেঙ্গে সরকার দলীয় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় লাইসেন্সবিহীন গড়ে ওঠা এসব করাতকলে দিনরাত অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রকারের কাঠ চেরাই করে যাচ্ছে।

উপজেলা ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায় বলেন, এসব অবৈধ করাতকলের মালিকরা বনবিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলেমিশে অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করে দীর্ঘদিন যাবৎ রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। মাঝে মাঝে লোক দেখামাত্র প্রশাসন অভিযান চালালেও বন্ধ হয় না অবৈধ করাতকলগুলো। শুধু তাই নয় সুন্দরবনের মূল্যবান কাঠ অবৈধভাবে সংগ্রহ করে ওসব করাতকলে চেরাই করে থাকে মালিকরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ অনেক দিন পরপর প্রশাসন এসব করাতকলের দু’একটিতে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করলেও কখনো সম্পূর্ণ বদ্ধ হতে দেখা যায়নি। প্রশাসন কর্মকর্তাদের নির্দেশ না মেনে বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ করাতকল মালিকেরা। সুন্দরবনের বিপর্যয় আশষ্কা নিয়ে তাঁরা আরও বলেন, বিশ্বব্যাপি যখন সুন্দরবন নিয়ে আন্দোলন করে, তখন কিছু স্বার্থনাশী লোকেরা সুন্দরবনকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। তার একটি উদাহরণ এসকল অবৈধ করাতকল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, রাস্তার পাশে করাতকল থাকায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে সমস্যা হয়। যখন করাতকল চলে, তখন শব্দ দূষণসহ কাঠেরগুড়া বাতাসে ছড়িয়ে নিঃশ্বাসের সঙ্গে নাকের ভিতর দিয়ে মানব শরীরে প্রবেশ করে। এতে মানুষের শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

খুটাখালী বাজারের করাতকল মালিক মির্জা সাইফুল ইসলাম বলেন এ উপজেলাতে করাতকলের জন্য কোনো লাইসেন্স দেয়না কর্তৃপক্ষ। বৈধ অনুমতি না থাকলেও সরকার নিষিদ্ধ কোন প্রকার গাছ কাটায় না বলে দাবী করে তিনি। তিনি আরও বলেন, অনুমতিপত্র পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে তার করাতকলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের সুতারখালী ষ্টেশন কর্মকর্তা মো. দাউদ মিয়া খুলনাটাইমসকে বলেন, বনবিভাগ অবৈধভাবে স্থাপিত এসব করাতকল সরিয়ে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার বাহিরে স্থাপন পূর্বক সরকারি লাইসেন্স নিয়ে পরিচালনার জন্য নোটিশ দেন প্রতিবছর। তবে এবছরে এখনও উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা তেমন কোনো নির্দেশ দেয়নি। নির্দেশ পেলে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ওইসব করাতকল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্জীব দাশ খুলনাটাইমসকে জানান, অবৈধ করাতকলের জন্য জোর তাগিদ দেয়া হবে, বিশেষ করে প্রত্যেকটা করাতকলে গিয়ে লাইসেন্স তদন্ত করা হবে। লাইসেন্স সঠিক না থাকলে ‘স’মিল মালিকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় করাতকল আইনের নীতিমালা না মেনে পরিবেশের ক্ষতি করলে এসকল করাতকলের লাইসেন্স বাতিল করে ‘স’মিল বন্ধ করে দেওয়া হবে।