অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিলেন ব্রায়ান লারা

0
398

খুলনাটাইমস স্পোর্টস: বিশ্বরেকর্ড গড়া ইনিংসের ১০ বছর পর আবার রেকর্ড গড়া, ক্রিকেটীয় বাস্তবতায় এক মহাবিস্ময়। সেই প্রায় অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিলেন ব্রায়ান লারা। তার ৩৭৫ ও ৪০০ রানের ইনিংস দুটি নিয়ে চর্চা হয় আজও, হতে থাকবে হয়তো যুগে যুগে। তবে মাঠে থেকে যারা ইতিহাসগড়া দুটি মুহূর্তের স্বাক্ষী, তাদের নিয়েও তো একটু আলোচনা দাবি রাখে! মাঠে থেকে লারার দুটি মহাকীর্তিই দেখেছিলেন গ্রাহাম থর্প ও ড্যারেল হেয়ার। দুজনের ভূমিকা যদিও ছিল ভিন্ন। স্বাক্ষী হিসেবে আলাদা করে উল্লেখ করতে হবে অ্যাঙ্গাস ফ্রেজারের নামটিও। তিনিও দুবারই ছিলেন মাঠে। তবে ১০ বছর আগে-পরে বদলে গিয়েছিল তার ভূমিকা। ২০০৪ সালের ১২ এপ্রিল নিজের হারানো বিশ্বরেকর্ড পুনরুদ্ধার করেছিলেন লারা। রেকর্ড গড়া ও পুনরুদ্ধার, দুবারই তার প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে খেলেছিলেন ৩৭৫ রানের ইনিংস। স্যার গ্যারি সোবার্সের ৩৬৫ রানের রেকর্ড অবশেষে পেছনে পড়ে যায় ৩৬ বছর পর। লারার ৩৭৫ রানের রেকর্ড টিকে ছিল সাড়ে ৯ বছর। ২০০৩ সালের অক্টোবরে সেটি টপকে যান ম্যাথু হেইডেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পার্থে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার খেলেন ৩৮০ রানের ইনিংস। নিশ্চিতভাবেই লারার অহমে লেগেছিল তা। ৬ মাস পরই পুনরুদ্ধার করেন রেকর্ড। এবার শুধু হেইডেনকে টপকে যাওয়াই নয়, টেস্ট ক্রিকেটকে উপহার দেন প্রথম ‘কোয়াড্রপল সেঞ্চুরি’, অপরাজিত ৪০০। কাকতালীয়ভাবে ভেন্যুও ছিল একই। দুবারই অ্যান্টিগার রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে লারা সাজিয়েছিলেন বিনোদনের পসরা। তবে গ্রাহাম থর্পের খুব বেশি বিনোদন পাওয়ার কথা নয়। দুবারই যে তিনি প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিলেন মাঠে! দুই দল মিলিয়েই, ক্রিকেটার হিসেবে লারার দুই রেকর্ডগড়া ইনিংসের স্বাক্ষী কেবল ইংলিশ ব্যাটসম্যান থর্প। ইংল্যান্ডের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলা থর্প নিজে অবশ্য দুই ম্যাচে করতে পারেননি তেমন কিছুই। ১৯৯৪ সালের ম্যাচটিতে একমাত্র ইনিংসে করেছিলেন ৯ রান। ২০০৪ সালে প্রথম ইনিংসে ১০, দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২৩। ড্যারেল হেয়ারের দুটি ইনিংসেরই স্বাক্ষী হওয়াটা বড় এক কাকতাল। দুই ম্যাচেই তিনি ছিলেন আম্পায়ার! ১৯৯৪ সালে আম্পায়ার হিসেবে তার সঙ্গী ছিলেন স্টিভ বাকনর, ২০০৪ সালে আলিম দার। মুত্তিয়া মুরালিধরনকে চাকিংয়ের জন্য ‘নো’ বল ডাকা, পাকিস্তান-ইংল্যান্ড টেস্টে বল টেম্পারিংসহ ক্যারিয়ারজুড়ে নানা বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন হেয়ার। তবে ৭৮ টেস্টের আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে অন্তত লারার ওই দুই টেস্ট পরিচালনার কারণে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবতেই পারেন এই অস্ট্রেলিয়ান। মাঠে থাকা তৃতীয় স্বাক্ষীর ঘটনা একটু বিচিত্র। অ্যাঙ্গাস ফ্রেজার দুবার ছিলেন ভিন্ন দুই ভূমিকায়। একবার খেলেছেন, আরেকবার লিখেছেন! ১৯৯৪ সালে লারার রেকর্ড তৃষ্ণার একজন ভুক্তভুগি ছিলেন ফ্রেজার। ৪৩ ওভার বোলিং করে এই পেসার ১২১ রানে নিতে পেরেছিলেন ২ উইকেট। ২০০৪ সালেও তিনি ছিলেন মাঠে, তবে এবার যন্ত্রণা ছিল কম। তিনি যে ছিলেন প্রেসবক্সে! ৪৬ টেস্ট ও ৪২ ওয়ানডে খেলা পেসার খেলোয়াড়ী জীবন শেষে নাম লিখিয়েছিলেন সাংবাদিকতায়, ওই ম্যাচ কাভার করছিলেন ‘ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর ক্রিকেট প্রতিনিধি হিসেবে। দুই দেশের সংবাদকর্মীদের মধ্যে আরও কয়েকজন অবশ্য কাভার করেছিলে দুটি ম্যাচই। তবে ফ্রেজার যে আলাদা, সেটি তো বলার অপেক্ষা রাখে না! ফ্রেজারকে স্বাক্ষী হিসেবে বিবেচনায় নিলে অবশ্য আরও দুইজনের কথাও বলতে হয়। দুই ম্যাচের একাদশে না থাকলেও তারা ছিলেন মাঠেই। শিবনারায়ণ চন্দরপল ও নাসের হুসেইন। ১৯৯৪ সালের ম্যাচটিতে রেকর্ড ছোঁয়ার সময় লারার সঙ্গী ছিলেন চন্দরপল। ২১৯ রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন। চন্দরপল অপরাজিত ছিলেন ৭৫ রানে। ২০০৪ সালের সিরিজেও প্রথম তিন ম্যাচে খেলেছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু শেষ টেস্টের একাদশে জায়গা পাননি। সেবার তাই ড্রেসিং রুম থেকেই দেখতে হয়েছিল রেকর্ড। হুসেইনের অভিজ্ঞতাও একই, তবে সময়টা উল্টো। ১৯৯৪ সালে তিনি ছিলেন ড্রেসিং রুমে, ইংল্যান্ডের স্কোয়াডে থাকলেও সুযোগ পাননি একাদশে। ২০০৪ সালে তিনি ছিলেন মাঠের ভেতরেই। প্রথম ইনিংসে ৩ রানে ফিরে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৫৬। এই হলো লারার দুই কীর্তির স্বাক্ষীদের গল্প। ও হ্যাঁ, দুই ম্যাচেই দর্শক হিসেবে কতজন গ্যালারিতে ছিলেন, সেই সংখ্যা জানা নেই কারও। তাদেরও নিশ্চয়ই আছে অনেক গল্প!