অশুভ চক্রে অস্তিত্ব সংকটে কপিলমুনির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান : ভূমি দখল প্রতিরোধে কমিটি গঠন

0
210

কপিলমুনি প্রতিনিধি:
মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় অস্থিত্ব নিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে কপিলমুনির ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন কে.কে.এস.পি, আনসার ও ভিডিপি ক্লাব, বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয়সহ একাধিক সামজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আধুনিক কপিলমুনির (বিনোদগঞ্জ) প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর রেখে যাওয়া সরকারের অর্পিত সম্পত্তিতে গড়ে ওঠা এসকল প্রতিষ্ঠান রক্ষায় শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে নেমেছেন সচেতন কপিলমুনিবাসী। ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে, ভূমি দখল প্রতিরোধ কমিটি। অনেকের অভিমত, আইনী জটিলতা কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কি শেষ রক্ষা হবে? নাকি আইনি মারপ্যাচের দোলাচলে আটকে যাবে তাদের ভবিষ্যত? এমন অনেক প্রশ্ন সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে কপিলমুনি ভূমি দখল প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্বে কপিলমুনিবাসী। দক্ষিণ খুলনার ইতিহাস-ঐতিহ্যের আঁধার আধুনিক কপিলমুনির অন্যতম জনক রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু জনপদ ও জনপদের মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নিজ অর্থে কপিলমুনিতে প্রতিষ্ঠা করেন, ভরত চন্দ্র হাসপাতাল, যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেন্সরি ,অমৃতময়ী টেকনিক্যাল স্কুল, কপিলমুনি সহচারী বিদ্যা মন্দির, গণ-সৌচাগার, সহচারী সরোবর, বিনোদ গঞ্জ বাজার, সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক, পাবলিক ষ্টেডিয়ামসহ নানা জনহিতকর প্রতিষ্ঠান।
স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের পালা বদলে দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন হলেও দৃশ্যত কপিলমুনির উন্নয়ন হয়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে বে-দখল হয়েছে তাঁর রেখে যাওয়া অনেক সম্পত্তি। সুষ্ঠু তদারকি ও নীরিক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়েছে সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক, আধুনিক বাণিজ্য বিপণী প্রতিষ্ঠায় বালু ভরাট হয়েছে সহচরী সরোবর, ব্রিটিশ আমলের চা পট্টিরও ভগ্নদশা। ইতোমধ্যে অনেকে বন্দোবস্ত নিয়ে এর ঐতিহ্য নষ্ট করেছে। পাল হাটায় বন্দোবস্ত নিয়ে সেজেছে ভিন্ন পসরায়। পাবলিক ষ্টেডিয়ামটিতে ১৯৮৫/৮৬ সাল পর্যন্ত খেলাধুলা চালু ছিল। খেলা-ধুলার পাশাপাশি এক সময় দ্বাপর যুগের ঐতিহ্যের বারুণী মেলাও বসত এখানে। পর্যায়ক্রমে শুরু হতে থাকে মাঠটির দখল প্রক্রিয়া। এক পর্যায়ে মাঠের পূর্ব প্রান্তে গড়ে ওঠে কপিলমুনি প্রেসক্লাব, ১৯৯২ সালে বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয়, আনসার ও ভিডিপি ক্লাব, কে.কে.এস.পি, পাবলিক লাইব্রেরী, এবং শেষের দিকে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ি, মুক্তি যুদ্ধ স্মৃতি সংসদ ও জামে মসজিদ। অবৈধ দখল প্রক্রিয়া ঠেকিয়ে অন্তত গতি হয় পাবলিক স্টেডিয়ামের সম্পত্তির। শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে সুফলও পাচ্ছেন জনপদের মানুষ। তবে স্টেডিয়ামের সম্পত্তির দখল নিতে থেমে থাকেনি কতিপয় চক্র। ১৯৭৬ সালে পাশ্ববর্তী কাজী মাহমুদ (মাখন কাজী) গং একাধিক পন বিহিন তঞ্চকি বেদড়া দলিল তৈরী করে বিভিন্ন সময়ে দখল প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। যে কারণে সর্বশেষ জরিপেও দলিলগুলি উপস্থাপিত হয়নি। এরপর তারা সেখান থেকে দু’টি প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদ করতে পরিকল্পিতভাবে পাইকগাছা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ১৯/৯৯নং বাটোয়ারা মোকদ্দমা করেন। মামলায় ২৩/১১/০৬ তারিখে রায় ও ২৯/১১/০৬ তারিখে খারিজের ডিক্রী হয়। পরাজিত হয়ে তারা খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৭৬/০৭ নং আপিল মামলা করেন। পরে আদালতকে ভূল বুঝিয়ে তারা একটি বিতর্কিত এক তরফা রায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলি উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এদিকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন ট্রাইবুনাল, খুলনায় কাজী মাহমুদ হোসেন দিং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসককে আসামী করে একটি মামলা করলে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপংকর বিশ্বাস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন দরখাস্তকারীগণের দাবিকৃত জমি বাবদ ইং ১৬/৮/৭৬, ১০/০৬/৭৬, ০৫/০৭/০৪ তারিখের কোবলা, ওয়াকফ ও দানপত্র দলিল,২৭/১০/০৩, ২৭/১১/৭৬, ০৭/০৬/৭৮ ও ১২/০৬/৭৯ তারিখের কোবলা দরিল সমূহ বেআইনী, পনবিহীন, অকায্যৃকরী, ভিত্তিহীন, বেদাড়া ও যোগসাজসী উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, কপিলমুনির রুপকার রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু একটি পাবলিক স্টেডিয়াম তৈরীর মানষে ১৯৩৩ সালে ছেলে যমুনা বিহারী সাধুর নামে এসএ ৬৪,৬৫,৬৬,৬৭,৬৮ ও ৬৯ খতিয়ানের ৪৩৫ দাগের ১.০৩ একর সম্পত্তি কোবলামুলে খরিদ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৬৫ সালে স্থায়ীভাবে দেশত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত যমুনা বিহারী সাধু স্বত্ত্ববান ভোগ দখলকার থাকেন। পরে কপিলমুনির আরেক রুপকার শেখ আমজাদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সেখানে প্রতিষ্ঠা পায় পাবলিক স্টেডিয়াম। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালের ১৭ জুলাই ত্যাক্ত জমি পরিত্যাক্ত অবস্থায় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভূক্ত করেন। এরপর ভিপি লীজ কেস নং ৩৮/৭৭-৭৮ এর মাধ্যমে রাজস্ব গ্রহনে ইজারা প্রদান শুরু করেন। সর্বশেষ দকলদারদের অপতৎপরতায় রীতিমত ফুঁসে উঠেছে কপিলমুনিবাসী। ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে ভূমি দখল প্রতিরোধ কমিটি। জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষায় একটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়েছে। কমিটির পক্ষে আন্দোলনে সামিল হতে সর্বস্তরের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। কপিলমুনি বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোঃ মজিবর রহমান বলেন, সরকারের আইন মেনে গত ২৮ বছর ধরে তারা সরকারের কাছ থেকে ডি,সি,আর মুলে উক্ত জমির ইজারা গ্রহণ করে স্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এসময় তিনি বলেন, শুধু বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয় নয়, সকল প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদের সময় এসেছে।