অভয়নগরে কর্মসংস্থান প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে কাবিটা প্রকল্পের রাস্তা সংস্কারের অভিযোগ

0
136

অভয়নগর প্রতিনিধি :
অভয়নগরে ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ কর্মসূচির (ইজিপিজি) শ্রমিক দিয়ে কাবিটার (কাজের বিনিময়ে টাকা) রাস্তা সংস্কার কাজের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার ও ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান মনা যোগসাজসে এ কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
আবার ৪০ দিনের এই ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ প্রকল্পের আওতায় প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিক কম খাটিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের হাজিরা দেখিয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান মনার বিরুদ্ধে ওই টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কাজের বিনিময়ে টাকা প্রকল্পে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিভাºী গ্রামে বিভাºী ঈদগাহ রবির বাড়ি হতে ইটের সলিং পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। রাস্তার দৈর্ঘ্য ৬০০ মিটার এবং প্রস্থ তিন মিটার। প্রকল্পের সভাপতি বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার।
জানা গেছে, উপজেলার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০ দিনের প্রকল্পের আওতায় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান মনা তার নিজ এলাকা’ বিভাগদী গ্রামের সাইফুলের বাড়ি থেকে ইয়ার আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার’ কাজে ১৭ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করছেন। একই এলাকায় কাজের বিনিময়ে টাকা(কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ ৬৭ হাজার ৬০০ টাকায় রাস্তা মেরামতের কাজ হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার ও ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান মনা যোগসাজসে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে কাবিটা প্রকল্পের রাস্তা নির্মানের কাজ করছেন।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে এ অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায় কাজের ২ টি স্থানে কোনো সাইনবোর্ড নাই। কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত ১৭ জন শ্রমিকের পরিবর্তে ৭ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ মোট ১১ জন শ্রমিক একটি পকুুর থেকে মাটি এনে ভাঙ্গা রাস্তার উপর ফেলে সংস্কারের কাজ করছেন। শ্রমিক সরদার আলম হোসেন বলেন, চল্লিশ দিনের শ্রমিক আমরা। মেম্বার যেভাবে বলে আমরা সেভাবে কাজ করি। তার কথামত আমরা দুটি প্রকল্পের কাজ করছি। ১৭ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও আজ ১১ জন শ্রমিক কাজ করছে। মাঝে মাঝে ১২ জন শ্রমিক কাজ করে। বাকি ৫/৬ জন শ্রমিকের বিষয়টি মেম্বার মনা বলতে পারবে। শ্রমিক পারুল বেগম বলেন, আমরা ঈদগাহের সামনে রাস্তায় ৬ দিন কাজ করেছি। এজন্য আলাদা টাকা পাইনি।
শ্রমিক সাধনা বিশ্বাস বলেন, আমরা এই কাজের পাশাপাশি অন্য একটি প্রকল্পের কাজ করছি।ওই কাজ করতে গিয়ে এখানে কাজ কম হয়েছে। তাই ছুটির দিনে এখানে কাজ করে পুষিয়ে দিচ্ছি।
কাবিটা প্রকল্পের ঈদগাহে রবির বাড়ি গিয়ে দেখা যায় সেখানে প্রায় ১৫০ মিটার রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার করা হয়েছে। রাস্তায় কোথায় ৮ ইঞ্চি আবার কোথাও এক ফুট পর্যন্ত মাটি দেয়া হয়েছে। ওই কাজ ৪০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান মনা বলেন, গোপন করার বিষয় না। ১৭ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও প্রতিদিন ১২/১৩ জন শ্রমিক কাজ করে। রাস্তাটি ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ প্রকল্পের আওতায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি ভাল বলতে পারব না। চেয়ারম্যান সাহেব ভাল বলতে পারবেন। তিনি আমাকে শ্রমিক দিয়ে কাজটি করে দিতে বলেছেন। বিনিময়ে তিনি আমাকে খরচ দিতে চেয়েছেন। আমি কাজটি ৪০ দিনের শ্রমিক দিয়ে করছি। এটি ওপেন সিক্রেট। সবজাগায় এটা হচ্ছে।
বিভাºী গ্রামের আব্দুল গফুর বলেন, শুনেছি কাজটি কাবিটা প্রকল্পের কিš‘ কাজ করা হচ্ছে ৪০ দিনের শ্রমিক দিয়ে।
অভয়নগর উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিত্যানন্দ দিরখাস্ত করে মেয়াদ বাড়িবেশ্বাস বলেন, বাজেট কম থাকায় সাইনবোর্ড দেওযা হয়নি। আজ গিয়ে ১১ জন শ্রমিক পেয়েছি। ওটাই হাজিরায় তুলেছি। মাঝে ২৭ দিন কাজ বন্ধ থাকায় ছুটির দিনেও কর্মসংস্থানের কাজ করা হচ্ছে। ওই শ্রমিক দিয়ে কাবিটা প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুইদিন কাজ শুরু করেছিল এমন সংবাদ পেয়ে আমরা গিয়ে শ্রমিকদের উঠিয়ে দিয়ে আসছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিজিবুল ইসলাম বলেন, কর্মসংস্থান প্রকল্পের শ্রমিকদের দিয়ে কাবিটা প্রকল্পের কাজ করানোর কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তা অনিয়ম প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আলাদা শ্রমিক দিয়ে কাবিটার রাস্তায় মাটি দেওয়ার কাজ করছি। ৪০ দিনের কর্মসুচির শ্রমিক দিয়ে কাজ করায়নি। তবে ছুটির দিনে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কমৃসুচির শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছি। এজন্য মনা মেম্বারকে অলরেডি কুঁড়ি হাজার টাকাও দিয়েছি। এ পর্যন্ত বারোআনা কাজ শেষ হয়েছে। কাজ খুব ভাল হওয়ায় অনেকে ইর্ষন্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।
শেখ জাকারিয়া রহমান