অবৈধপথে ক্ষমতা দখলে ষড়যন্ত্রের গলি খুঁজছে বিএনপি : কাদের

0
198

টাইমস: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, করোনা মহামারির এ সময় বিএনপি-জামায়াত জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে অবৈধপথে, চোরা গলি দিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য ষড়যন্ত্রের অলিগলি খুঁজে বেড়াচ্ছে। দুঃস্বপ্নে তারা বিভোর হয়ে আছে। গণবিরোধী ও দেশবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এর দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। গতকাল শুক্রবার দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লী, দলের ঢাকা মহানগর শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের গভীর ষড়যন্ত্রের তথ্য উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট কখনওই জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করতে চায় না। সর্বদাই তাদের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। আস্থা, স্বাধীনতাবিরোধী ও দেশবিরোধী অপশক্তির রাজনীতি। আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের আবেগ ভালোবাসা আশা-আকাক্সক্ষা ধারণ করে। কাজে-কর্মে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়। আওয়ামী লীগ কখনও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে না। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বরদাশত করে না। কিন্তু বারে বারে আওয়ামী লীগই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। ‘বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া হয়েছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে দ-প্রাপ্ত একজন আসামি। করোনা সংক্রমণকালে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ মানবিকতা ও উদারতার পরিচয় দিয়ে তাকে জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। এই মানবিকতা বা উদারতাকে বিএনপি দুর্বলতা মনে করলে ভুল করবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনগণের প্রতি আস্থাহীন হয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বারবার ভুল করে আসছে বলেই তারা জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। মহামারির এ সময় তারা জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে অবৈধপথে চোরা গলি দিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য ষড়যন্ত্রের অলিগলি খুঁজে বেড়াচ্ছে। দুঃস্বপ্নে তারা বিভোর হয়ে আছেন। আমরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, গণবিরোধী ও দেশবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়েই তার দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতির ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে আমরা এ শপথ গ্রহণ করছি। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যাতে আওয়ামী লীগে জায়গা না পায় সেজন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। দলের সভাপতিম-লীর সভায় দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। হঠাৎ করে কেউ দলে এলে তাকে প্রথমেই নেতা বানানো যাবে না। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোনও অবস্থাতেই অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না। সব বাধা বিপত্তি ডিঙিয়ে পথ চলাই এদেশের মানুষের চিরায়ত রীতি উল্লেখ করে মন্ত্রী কাদের বলেন, দেশের মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জীবনের সঙ্গে জীবিকার চাকা সচল হয়েছে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সীমিত পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকা- শুরু করেছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে পরে ৩১টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। করোনা সংক্রমনের বাস্তব কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে অধিকাংশ পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় দফতরে জমা পড়েছে। দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই, কমিটি গঠনে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় নেতৃত্বে নির্দেশনা দিয়েছেন। তা মেনেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। হঠাৎ করে কেউ দলে এলে তাকে প্রথমেই নেতা বানাতে হবে এমন কোনও কথা নেই। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোনও অবস্থাতেই অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না। বিষয়টি আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি: আপনারা যারা কমিটি করেছেন বা করবেন, তাদের এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। আসন্ন সাংগঠনিক সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আটটি বিভাগের জন্য আটটি টিম, সাংগঠনিকভাবে আমরা প্রস্তুত, নেত্রীর কাছে তালিকা জমা দিয়েছি। অনুমোদন দিলে এই টিমগুলো আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি সর্বদা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কর্মসূচি পরিচলনা নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই সম্মেলনের পরে আমাদের সামনে ছিল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের আমরা অনেকটা গৃহবন্দি ছিলাম। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আমরা শতবার্ষিকীর কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করতে হয়েছে। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ দেওয়ার ঘটনা স্মরণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে সারা দুনিয়ার সব বাঙালিকে ধন্য করেন। গৌরবান্বিত করেন। করোনার সংকটের কারণে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে বাংলা ভাষণ দেওয়ার দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে পারিনি। তিনি বলেন, অদৃশ্য করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেশের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস ছিল উল্লেখ করার মতো। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সারা দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছে এবং করোনাকালে তিনি একমাত্র ট্রাস্টেড সিঙ্গেল ফেস হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মানুষের কষ্ট লাঘবে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও করোনা মোকাবিলায় সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। মন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণকালে প্রধানমন্ত্রীর সুনিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সুনিপুণ ব্যবস্থাপনায় মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে অন্যান্য দেশের চেয়ে আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক সক্ষম হয়েছি। তিনি দক্ষ নাবিকের মতো দিশেহারা জনগোষ্ঠীকে সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে পথ দেখিয়েছেন। দেশের মানুষের দুর্ভোগ দুর্দশা লাঘবে ৭৩ বছর পেরিয়েও তিনি অবিরাম ছুটে বেড়িয়েছেন। এই বয়সেও তার গতি অ্যারাবিয়ান হর্স এর মতো। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জন্মদিনে কোনও ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বঙ্গবন্ধু কন্যার পছন্দ নয়। জন্ম দিবস পালনে নেত্রী তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এটা পালন করতেও চান না। তারপরও আমাদের এটা দায়িত্ব। শেখ হাসিনার জন্মদিন বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বঙ্গবন্ধু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার রোল মডেল। হাসিনা আমাদের উন্নয়ন এবং অর্জনের রোল মডেল। বিশ্ব দরবারে তিনি বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তার জন্মদিন পালন না করলে আমরা জাতির কাছে অকৃতজ্ঞ থেকে যাব। এসময় ওবায়দুল কাদের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ দিনটি উপলক্ষে সারাদেশের সব মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা-গির্জাসহ সব উপসানালয় বিশেষ প্রার্থনা এবং সীমিত পরিসরে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত হতে হবে। একটি সিট ফাঁকা রেখে অন্য আরেকটি সিটে বসতে হবে। কোনও অবস্থাতে বেশি জনসমাগম করা যাবে না।