অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত : দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা চিকিৎসক

0
4111

কুমিল্লার কৃত্বি সন্তান, চান্দিনার বাসির গর্ব
ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার একজন খ্যাতিমান মহৎ চিকিৎসক। তাঁর মত একজন কীর্তিমান চিকিৎসকের জন্ম এ কুমিল্লা’র মাটিতে। তিনি তিন যুগেরও বেশি সময় জুড়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিচরণ, তিনি কেবল একজন চিকিৎসকই নন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবেও ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছেন। এই কর্মযোগী কুমিল্লা’র
চান্দিনা উপজেলাস্থিত মহিচাইল গ্রামে এক সভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫৩সনের পহেলা অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা প্রয়াত কালাচাঁদ দত্ত ও মা প্রয়াত কিরণ প্রভা দত্ত এর ঘর আলোকিত করে এই কীর্তিমান মহান চিকিৎসক এ ধরাধামে আর্বিভূত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ নিরন্তর ইএনটি ও হেড এন্ড নেক এর দূরারোগ্য সমস্যার আধূনিক
চিকিৎসা পদ্ধতির প্রবর্তনে সচেষ্ট একজন দক্ষ অটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট এবং অডিও ফিজিশিয়ান হিসেবে বাংলাদেশের
সনাতনী চিকিৎসা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনে সচেষ্ট। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি অনুন্নত দেশ। দ্রুত নগরায়ণ ও জনসংখ্যায় বাড়তি চাপের ফলে পরিবেশ দুষণ ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতায় ইএনটি ও হেড এ্ন্ড
নেক বিষয়ে জটিলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাছাড়া প্রতিবছর দুঘর্টনা জনিত সমস্যাও
প্রকট হয়ে উঠেছে। এ সমস্ত রোগের
চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরবর্তী সমস্যা কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে নিরলস কাজ করে চলেছেন। এ মহা মানব। যে সমস্ত শিশু জন্মগত বাক্ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী তাদেরকে এক সময় সমাজের বোঝা হিসেবে মনে করা হতো। ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত জীবনের প্রথম থেকে এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে আসছেন,
যার ফলে এখন এ ধরনের প্রতিবন্ধীরা আজ আর সমাজের বোঝা নয়, সমাজের মূল স্রোতধারার একটা অংশ।
প্রফেসর দত্ত ছাত্রজীবন থেকেই অত্যন্ত
কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে ১৯৭৬সালে চট্টগ্রাম
মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন
বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মুখ সমরে অংশ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৮১সালে ঢাকা থেকে এফ.সি.পি.এস একই বছর তিনি তাঁর প্রিয় বিষয় অটোলারিঙ্গোলজি বিষয়ে এম.এস করেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ওদেসা ষ্টেট মেডিকেল ইন্সটিটিউট থেকে। ১৯৮৩ সনে তিনি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার
ইউনিভার্সিটি থেকে অডিও ওলজিক্যাল
মেডিসিন বিষয়ে এম.এস.সি করেন। প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত জ্ঞানার্জনে নিরন্তর অধ্যবসায়ি ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে অবস্থিত রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জনস থেকে এফ.আর.সি.এস ফেলোশিপ অর্জন করেন। এর পরের বছর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জনস তাঁকে এফ.সি.পি.এস ফেলোশিপ প্রদান করেন।
প্রফেসর দত্ত শিক্ষা ক্ষেত্রে এ সকল কৃতিত্ব অর্জনকে বলা যায় পেশার ক্ষেত্রে দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা এবং সুবিবেচনা প্রসূত কর্মদক্ষতার বিকাশমান ধারা। তাই অদ্যাবধি ইএনটি এবং হেড এন্ড নেক সার্জারি বিষয়ে নিরন্তর
গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর গবেষণামুলক
প্রকাশনার সংখ্যা যে কোন গবেষকের জন্য ঈর্ষণীয়। তাঁর প্রকাশিত গবেষণামুলক প্রবন্ধের সংখ্যা ছ’ত্রিশ। এসব প্রবন্ধে ডা. পি. জি দত্ত দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে বিদ্যমান রোগ
ও রোগতত্ত্ব বিষয়ে নিরীক্ষণগত নানা তথ্য- উপাত্ত তুলে ধরেছেন। দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত এসব প্রবন্ধ বহুল পঠিত এবং প্রশংসিত। এ সব মৌলিক গবেষণাকর্মে প্রফেসর দত্ত বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার সব বয়সের মানুষের শ্রবণ ও বাকযন্ত্রের নানা সমস্যা এবং দ্রুত নগরায়ণের ফলে এসব যন্ত্রে যে সমস্ত সমস্যা দেখা দেয় সেগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। এসব সমস্যা চিহিৃতকরণের পাশা-
পাশি তিনি এগুলো সমাধানে শৈল্য চিকিৎসার নানা খুঁটিনাটি দিক অত্যন্ত
গুরুত্বে দিয়ে তুলে ধরেছেন।
জানা যায়- এ পর্যন্ত প্রফেসর ডা. প্রাণ
গোপাল দত্তের প্রকাশিত রিভিউ ও
এডিটরিয়ালের সংখ্যা আট। জাতীয় ও
আর্ন্তজাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সার সংক্ষেপের সংখ্যা-৭। বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশের জনগনের ইএনটি জনিত সমস্যা চিহিৃত করে এই স্বাস্থ্য সমস্যাকে কাটিয়ে উঠতে চিকিৎসক ও চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে বিনিময় করেছেন। এর ফলে প্রজন্ম- প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের দীপ্তি। প্রফেসর দত্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমন্ত্রিত
হয়ে ইএনটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ যে, প্রফেসর দত্ত সমস্ত দেশ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তা হল- অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, জার্মান ও সিঙ্গাপুর। বিদেশ
থেকে ইএনটি বিষয়কে মাইক্রোসার্জারি ও
অডিওলজিক্যাল মেডিসিনের উপর উচ্চতর
প্রশিক্ষণ নিয়েছেন প্রফেসর দত্ত।
যে সমস্ত শিশু জন্ম গত বাক্ ও শ্রবণ যন্ত্রের ক্রটিতে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা ও সামাজিক
পুনর্বাসন নিয়ে তিনি বারংবার ভাবিত। এই
ভাবনাকে তিনি তাঁর দীর্ঘ কর্মময়
জীবনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে তুলে ধরেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্য যে হল- এপ্রিল-২০১০ এর দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ কনফারেন্স। অক্টোবর-২০০৮ এ
সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত ৪র্থ অটোল্যারিঙ্গোলজি এন্ড হেড এন্ড নেক সার্জারি বিষয়ক সম্মেলন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ডেনভার, নিউঅর্লিন্স, নিউইয়র্ক, কানাডার টরেন্টো, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার,
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, তুরস্কের ইস্তাম্বুল,
ফিলিপাইনের ম্যানিলা, জাপান,
হংকং এবং দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে দেশের জন্য বিরল গৌরব বয়ে এনেছেন কুমিল্লা’র কৃত্বি সন্তান ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। এ সমস্ত সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্সে বিশ্বের প্রতিথযথা চিকিৎসগণের সামনে প্রসেফরস দত্ত নিজের অভিজ্ঞতা ও
জ্ঞানকে প্রোজ্জ্বল করে তুলেছেন।
শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রফেসর দত্ত
নানা সামাজিক সংগঠনের
সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন
সে গুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি’র আজীবন সদস্য, আবুলিয়া চেরিটেবল ডিসপেন্সারি’র জীবন সদস্য, সোসাইটি ফর এসিসটেন্স টু হেয়ারিং ইমপেয়ার্ড চিলড্রেন এর আজীবন সদস্য।

সূত্র: ফেসবুক