অজ্ঞাত লাশ শনাক্তে সাফল্য

0
445

খুলনা টাইমস ডেস্ক:
প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নে দেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রা বিস্ময়কর হলেও এখন সেটাই নিত্যনৈমিত্তিক বাস্তবতা। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বিজ্ঞানের অভাবনীয় অবদান দেশ তথা সারা বিশ্বকে যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে সেখানে ক্ষমতাবান মানুষের বৈজ্ঞানিক সফলতা এক অভাবনীয় শুভ যোগ। নিত্য-নতুন উদ্ভাবনী শক্তি, আবিষ্কার সমাজ ও জীবনের ক্রমবর্ধমান ধারাকে বিকশিতই করছে না, একইভাবে এমন অনেক প্রযুক্তিগত অভিযোজন অজ্ঞাত, অজানা ঘটনাকে সবার সামনে দক্ষতার সঙ্গে প্রকাশও করছে। সেরকমই এক সফলতা এসেছে অজ্ঞাত লাশ শনাক্তকরণে প্রযুক্তিগত বিদ্যার অবিস্মরণীয় সংযোজনে। এমন দুঃসাহসিক কর্মযজ্ঞের নির্ণায়ক শক্তি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বৈজ্ঞানিক অগ্রগামিতায় যেসব দেশ উন্নয়নের শীর্ষ শিখরে পৌঁছেছে তারাই মূলত এমন সফলতাকে মানুষের কাছে নিয়ে এসেছে। সেই উন্নত প্রযুক্তি আমদানি করে বাংলাদেশও এতদিনের অজানা, অজ্ঞাত অনেক বিষয়ের ওপর সরাসরি কার্যপ্রক্রিয়া চালিয়ে বিশেষ দক্ষতারও পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বিবদমান সংঘর্ষে নিহত হওয়া, গুম-খুনের আওতায় মৃতদেহ, আগুনে ঝলসে যাওয়া প্রাণহীন অবস্থা ছাড়া এমন অনেক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় যেসব লাশের কোন পরিচিতি কিংবা ওয়ারিশ পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ফলে কোন প্রতিষ্ঠানের দায়-দায়িত্বে লাশগুলোর সৎকারের ব্যবস্থা করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও থাকে না। মৃতদেহগুলোর এমন বিকৃত কিংবা অস্পষ্ট অবস্থায় খোঁজ মেলে যার শনাক্তকরণেরও ন্যূনতম সুযোগ থাকে না। তেমন অসম্ভব ব্যবস্থাকে আজ সম্ভাবনাময় অবস্থানে নিয়ে এসেছে পুলিশের পিবিআই-এর কর্মকর্তারা। যার পুরো কৃতিত্ব বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা। এমন অভাবনীয় প্রযুক্তিকে আরও আধুনিক করতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধনে যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যেভাবে অপরাধী নিজেকে বাঁচাতে খুনের সমস্ত আলামত বিনষ্ট করার অপকর্মে শামিল হয় সেটা বোধ হয় বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করে দিচ্ছে। এই বছরের অনেক পচে-গলে যাওয়া লাশ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়। শুধু তাই নয়, অনেক নিখোঁজ সংবাদের জিডি পুলিশী হেফাজতে থাকার কারণে সেখান থেকেও প্রযুক্তিগত সাফল্য নতুন করে সব তথ্য সহজসাধ্য করে দিচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে বলা গত ৩ বছর চার হাজার অজ্ঞাত লাশের ৩/১ ভাগ ছিল নারী। যাদের অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। সৎকার করা সেসব ব্যক্তির আর কোন খোঁজ হয় না। শেষ অবধি তারা অজ্ঞাতনামা হিসেবেই থেকে যায়। তবে কোন আলোচিত কিংবা পরিচিত ব্যক্তিবর্গের খোঁজ অবশ্যই পড়ে যায় এবং শেষ অবধি তাদের হদিসও মেলে। কিন্তু এসব অজ্ঞাতনামা লাশের সিংহভাগই অতি সাধারণ জনগোষ্ঠী। সেসব অখ্যাত, অপরিচিত ব্যক্তি এক সময় চিরতরেই হারিয়ে যায়। নদী, ডোবা, নর্দমা, ঝোপঝাড়, পচা খাল-বিল, কচুরিপানায় ভর্তি পুকুর- এমন সব অপরিষ্কার আবর্জনা থেকে বেনামি লাশ উদ্ধার করে তাদের সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া পানিতে, ডুবে মৃত্যু হওয়া অনেকেরই কোন হদিস মেলে না কিংবা ঝড়ে লঞ্চ, নৌকাডুবিতেও বহু মানুষের প্রাণ সংহার হয়। যাদের পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয় না। কারণ, ডুবে যাওয়ার অনেক পর লাশ সাগর, নদী কিংবা হ্রদে ভেসে ওঠে। ফুলে-ফেঁপে এমন অবস্থা হয় যে, লাশ চেনাই দুঃসাধ্য হয়ে যায়। নব আবিষ্কৃত প্রযুক্তি এমন পচে-গলে যাওয়া দেহকে শনাক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রেখে অপরিচিতদের পরিচয় খুঁজে বের করবে। পিআইবির প্রধান ডিআইজি বনজকুমার মজুমদারের পক্ষ থেকে এমন প্রযুক্তির সত্যতা স্বীকার করে বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানানো হয়। দীর্ঘদিন পর হলেও অজ্ঞাত লাশ শনাক্তকরণে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। এই অনন্য প্রযুক্তিতে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে তাদের লাশ অজ্ঞাতনামা হওয়ার আর কোন সুযোগ থাকবে না। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে আরও সমৃদ্ধ করে এর যথার্থ সফলতাকে প্রত্যেকের কাছে নিয়ে আসা হবে। যন্ত্রটি বহনযোগ্য। ফলে যে কোন স্থানে মৃতদেহ শনাক্ত করতে প্রযুক্তিটিকে নিয়ে যেতে বাধার সৃষ্টি হবে না। বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতে এমন প্রযুক্তিকে পৌঁছে দেয়া হবে। কিন্তু কোন ব্যক্তির পরিচয়পত্র যদি না থাকে তাহলে তার পরিচয় জানা অসম্ভব হবে। শনাক্তকৃত ব্যক্তি যদি অপরাধী কিংবা কোন মামলার আসামি হয় সেটাও এই নতুন যন্ত্রটি বের করে দেবে। বিজ্ঞানের অবিস্মরণীয় সাফল্য যতই মানুষের দ্বারে পৌঁছাবে ততই সে প্রতিদিনের জীবন এগিয়ে নিতে পারবে।