নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুসলিম লীগ শাসনামলে ১৯৫১ সালে খুলনায় আওয়ামী লীগের যাত্রা। সে হিসেবে এখানকার আওয়ামী লীগের বয়স ৬৭ বছর । প্রায় সাত যুগের এই দীর্ঘ সময়ে দলের সফলতা-ব্যর্থতা দুটোই রয়েছে। সবচেয়ে বড় সফলতা পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী খান-এ-সবুরকে ১৯৭০সালের জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত করা।
জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষ ও সমাজতন্ত্র এ চার মূলনীতির ওপর ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগকে এ পর্যন্ত মুসলীম লীগ, জাসদ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হয়। ৫৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১২টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৬৬ সালের ৬দফা, ৬৯’র গণঅভুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৮২ পরবর্তী স্বৈরাশাসকের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে হয়েছে। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ২২বছর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ আব্দুল আজিজ। পূর্ব পাকিস্তান মুসলীগ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। এই প্রবীণ নেতা জীবিত আছেন। ১৯৭৩ সালে মন্ত্রী সভায় যোগাযোগ, পরে কৃষি ও পশু সম্প মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাফল্য :
১৯৭০ সালে খুলনা ৬ আসন থেকে খান এ সবুরকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমএ গফুর জয়ী হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ মনোনীত প্রার্থী শেখ রাজ্জাক আলীকে খুলনা ২ আসন থেকে পরাজিত করে এমএ বারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর খুলনা ২ আসনে একটানা পরাজয়। ২০১৪ সালে খুলনা ২ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ মিজানুর রহমান মিজান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে সবকটি আসনে, ১৯৭৯ সালে ৩টি আসনে, ১৯৯৬ সালে ৫টি আসনে, ২০০৮সালে ৫টি আসনে এবং ২০১৪ সালে ৬টি আসনে জয়ী হয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে রূপসা নদীর ওপর পীর খানজাহান আলী (রাঃ) সেতুর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস, মংলায় ইপিজেড, রূপসা উপজেলায় বঙ্গবন্ধু মহাবিদ্যালয়, ডুমুরিয়ায় শাহপুর মধুগ্রাম কলেজ, খালিশপুর হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজ, ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা-মংলা রেল লাইনের প্রস্তুতি, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ, মংলা, রামপাল, তেরখাদা, বটিয়াঘাটায় অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন, খুলনা আধুনিক রেল ষ্টেশন আওয়ামী লীগ সরকারের বড় সাফল্য। দেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৭সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত মোঃ এনায়েত আলী খুলনা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দীর্ঘ সময় পর ২০০৮ সালে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। সর্বশেষ চলতি বছর খুলনা সিটি নির্বাচনে নগর সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক ২য় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন।
নির্বাচন :
গত ৬৭ বছরে ১০টি জাতীয় নির্বাচন, ৪দফা উপজেলা, ৭দফা পৌরসভা ও দুটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪, ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ নিলেও জাপা সরকারের অধীনে ১৯৮৮ এবং বিএনপি সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারী আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জণ করে। ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালে খুলনার সালাউদ্দিন ইউসুফ স্বাস্থ্য মন্ত্রী, নগর সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী, ২০০৮ সালে বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও ২০১৪ সালে ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ মৎস প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ চলতি বছর খুলনা সিটি নির্বাচনে নগর সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক ২য় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন।
সংকট:
বড় ধরণের সংকট সৃষ্টি হয় ১৯৭২ সালে ২১-২৩ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে সংগঠনটি দ্বিধা-বিভক্তি হলে অধিকাংশই শাসক দলের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সাংগঠনিক কাঠামো দূর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৮২ সালে জেঃ এরশাদের নেতৃত্বে জাপা সরকার গঠন হলে দলের এক সময়খার ত্যাগী নেতা এড. মোমিন উদ্দিন আহমেদ, লেঃ কর্ণেল (অব:) এইচএমএ গফফার বীর উত্তম, শিল্পপতি ইউ আহমেদ, কাজী আব্দুস সালাম, সম বাবর আলী, ডাঃ মুনসুর আলী, আবুল কাশেম ইঞ্জিনিয়ার, সরদার রবিউল ইসলাম, কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, মোঃ এনায়েত আলী দল ত্যাগ করলে সাময়িক সময়ের জন্য নেতৃত্বে সংকট দেখা দেয়।
নিহত নেতৃবৃন্দ :
স্বাধীনতা উত্তরকালে সংসদ সদস্য এমএ গফুর, শ্রমিক নেতা আবু সুফিয়ান, এসএমএ রব, এড. মঞ্জুরুল ইমাম, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হুমায়ূন কবীর বালু, সরদার হারুনুর রশীদ, সরদার আব্দুর রাজ্জাক, যুবলীগ নেতা শহী ইকবাল বিথার, ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যাম গাজী আব্দুল হালিমসহ উল্লেখযোগ্য নেতা দুবৃত্তদের হাতে নিহত হয়।