সন্ত্রাসী ইসমাইলের অবৈধ অস্ত্রে জিম্মি দেবহাটার নীরিহ ভুমিহীনরা

0
149

দেবহাটা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার দেবহাটায় নোড়ারচক-চারকুনি ও খলিশাখালি ভুমিহীন জনপদের হাজার হাজার মানুষ জিম্মি হয়ে উঠেছে অবৈধ অস্ত্রধারী ভুমিদস্যু ইসমাইল বাহিনীর কাছে। বর্তমানে নোড়ারচক-চারকুনি ও খলিশাখালিসহ গোটা ভুমিহীন জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে বাহিনী প্রধান ইসমাইল সহ তার বাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।
চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে সরকারি জমি বেচাকেনা, টাকার বিনিময়ে বাহিনী দিয়ে জমি দখল, কথায় কথায় ভুমিহীনদের ওপর হামলা, রাতের আধারে খলিশাখালি-নোড়ারচক-চারকুনি ভুমিহীন জনপদের বিস্তৃর্ণ মৎস্য ঘের লুট আর অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি করে পাঁচ শতাধিক নীরিহ ভুমিহীন পরিবারের কাছে মুর্তিমান আতঙ্কে পরিনত হয়েছে বাহিনী প্রধান ভুমিদস্যু ইসমাইল গাজী। বর্তমানে চারকুনি এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল গাজী মৃত আকরাম গাজীর ছেলে।
একসময়ে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ মহাসড়কের পাশে সরকারি জমিতে বসবাস করা ইসমাইল গাজী মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কাঠ মিস্ত্রি ও অন্যের মৎস্য ঘেরের কর্মচারী থেকে এখন বনে গেছে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক। ভুমিহীন জনপদে আধিপত্য ও নিজস্ব বাহিনী থাকায় একসময়ের শিবিরকর্মী অশিক্ষিত ইসমাইল গাজী হয়ে উঠেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আস্থাভাজন ও পোষ্য ক্যাডার। কয়েক বছর আগে অপকর্মের দায়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার হওয়া ভূমিদস্যু ইসমাইল পরবর্তীতে আবারো ওই আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় বাগিয়ে নেন উপজেলা যুবলীগের ত্রান সম্পাদকের পদ। কিছুদিন আগে ভূমিদস্যু ইসমাইল বাহিনী নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে স্বাধীনতা প্রজন্মলীগ থেকে বহিস্কার করা হয় বাহিনী প্রধান ইসমাইলকে।
বহুল আলোচিত ভূমিদস্যু ও অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ইসমাইলের ওপর নজরদারি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান হলেই সেখানে ঢুকে দলীয় নেতাদের গাঁ ঘেষে ছবি তুলে স্যোশাল মিডিয়ায় দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত এবং শালিস বিচারের নামে বাদী-বিবাদী দুপক্ষের কাছ থেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভুমিদস্যু বাহিনীর প্রধান সুচতুর ইসমাইল গাজী।
চাঁদাবাজি, সরকারি জমি বেচাকেনা, বাহিনী দিয়ে জমি দখল, নোড়ারচক-চারকুনি ও সর্বশেষ খলিশাখালির বিস্তৃর্ন মৎস্য ঘের লুটসহ নানা অপকর্মের টাকায় অন্যের জমিতে আলীশান বাড়িও গড়ে তুলছে কাঠমিস্ত্রি থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া ওই ইসমাইল গাজী।
কয়েকমাস আগে নোড়ারচক-চারকুনির একাধিক ভুমিহীন নেতার ওপর হামলা ও তাদেরকে মারপিট করে ওই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে ইসমাইল বাহিনী। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আবদার ও করিমের দুটি পক্ষের কাছ থেকে দেবহাটা থানার তৎকালীন পুলিশ অফিসারদের নাম করে লক্ষাধিক টাকাও হাতিয়ে নেয় সে। ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে ভুমিহীন জনপদ। সম্প্রতি আবারো ভুমিহীন পল্লীতে বিদ্যুতায়নের নামে কয়েকশ ভুমিহীন পরিবারের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, ভুমিহীন মাঠের ১৪ বিঘা সরকারি খাঁস জমি গোপনে একাধিক ব্যাক্তির কাছে বিক্রির নামে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা, ধর্ষণের ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকায় দফারফা, খলিশাখালির বিস্তৃর্ণ মৎস্য ঘের দখলে নেতৃত্ব দিয়ে সেখানকার দখলকৃত জমি থেকে ২৫০ বিঘা জমি এবং পুলিশ প্রশাসনের নাম করে অর্ধকোটি টাকাও হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে অস্ত্রধারী ভূমিদস্যু ইসমাইলের বিরুদ্ধে।
নোড়ারচক-চারকুনি ভুমিহীন সংগ্রাম কমিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কয়েক বছর আগেও ভুমিহীন পল্লীর মানুষরা স্বস্তিতে ছিল। অথচ বর্তমানে ভুমিদস্যু ইসমাইল বাহিনীর অত্যাচার ও অবৈধ অস্ত্রের দাপটে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পৈত্রিক সম্পত্তির মতো ভুমিহীন জনপদের সরকারি খাঁস জমি ও খলিশাখালির বিস্তৃর্ণ মৎস্য ঘের ইসমাইল বাহিনী কর্তৃক দখল, লুটপাট ও বেচাকেনার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি বাহিনী প্রধান ইসমাইলকে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে এসমস্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ভুমিদস্যু বাহিনী প্রধান ইসমাইলের সাথে একাধীকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।