শরণখোলায় সরকারী রাস্তা দখল করে ভবন নির্মাণ

0
969
Exif_JPEG_420

শেখ মোহাম্মদ আলী, শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :
বাগেরহাটের শরণখোলায় সরকারী সম্পত্তি নিজের দাবী করে উপজেলা সরকারী খাদ্য গুদামের মালামাল পরিবহন ও যানবাহন সহ এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্র সড়কে পাঁকা ইমারত নির্মান করে তা দখল করে নিয়েছে আঃ ছালাম চৌকিদার নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী। যার ফলে গুদামের খাদ্যশষ্য সহ মালামাল পরিবহনে সংকট দেখা দিয়েছে। বিঘিœত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে তৎকালীন সরকার উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজার এলাকায় ধান, চাল, গম সহ নানা শষ্য সংরক্ষনে খাদ্য গুদাম নির্মাণের উদ্দেশ্যে স্থানীয় বাসিন্দা এরফান উদ্দিন গংদের কাছ থেকে ৯ নং রায়েন্দা মৌজার এস, এ ৪৪৪ নং খতিয়ানের ৫৩৬, ৫৩৭, ৫৩৯, ৫৩৪, ৫৩৫ নং দাগ থেকে ১ একর ১৩ শতক সম্পত্তি অধিগ্রহন করে ওই জমিতে খাদ্য গুদাম সহ কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মান করেন। পরবর্তীতে খাদ্য গুদামের পাশ থেকে স্থানীয় জনসাধারন ও যানবাহন চলাচলের রাস্তার জন্য জনস্বার্থে ১২০/৬ ফুট জমি ছেড়ে দেয়া হয়। একই সময় খাদ্য বিভাগের সীমানা প্রচীর নির্মান প্রাককালে প্রাচীরের বাহির থেকে আরও দেড় ফুট করে জায়গা ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৮০ দশকে জমি দাতার উত্তরাধীকারী মৃতঃ নুর মোহাম্মদ হাওলাদারের ছেলে প্রভাবশালী আঃ ছালাম হাওলাদার একটি ভুয়া রেকর্ড সৃষ্টি করে জনস্বার্থে ছেড়ে দেয়া খাদ্য বিভাগের ওই সড়কের সম্পত্তি থেকে ৭ শতক সম্পত্তি নিজের বলে দাবী করে তা দখল প্রক্রিয়া শুরু করেন। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা সহ সরকারের পক্ষে খাদ্য বিভাগ ওই প্রভাবশালীকে বাঁধা দেন।কিন্তুু সে গায়ের জোরে রাতারাতি ওই রাস্তার উপর আধা পাকা ভবন নির্মাণ করে।ফলে লোক চলাচল সহ খাদ্য বিভাগের মালামাল পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারী ওই জনগুরুত্বপূর্ন বিভাগের কার্যক্রম এক প্রকার রুদ্ধ করে জমি দখল করে নেয়ায় রীতিমত হতবাক হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খাদ্য দপ্তরের প্রাচীর ঘেষে বিল্ডিং নির্মান করে তা পতিত অবস্থায় ফেলে রাখায় সেখানে প্রতি নিয়ত মাদকসেবীদের আড্ডা বসছে। এতে খাদ্য গুদামটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশংকা করা হচ্ছে।
খাদ্য বিভাগ ও স্থানীয়দের সুত্র জানায়, এক পর্যায়ে দখলবাজ ছালাম সরকারী স্বার্থ ও এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একটি সামাজিক বৈঠকের মাধ্যমে কিছু অর্থের বিনিময়ে দখল থেকে সরে দাড়াবেন মর্মে অঙ্গীকার করে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন। কিন্তু সু-চতুর আঃ ছালাম আপোষ মিমাংশা না করে সম্পত্তির দাবীতে নতুন করে তিনি বাদী হয়ে গোপনে বাগেরহাট আদালতে দেওয়ানী ৯১/১১ একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভূমি কর্মকর্তা, খাদ্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে বিবাদী করেন। এবং মামলা চলাকালীন সময় তিনি পাকা ইমারত (বিল্ডিং নির্মান করে) সড়কটির দখল নেয়। কয়েক মাস পর নি¤œ আদালত ছালামের অনুকুলে একটি রায় প্রদান করলে জনস্বার্থে একই এলাকার বাসিন্দা মোঃ বাদশা মিয়া হাওলাদার এলাকাবাসীর পক্ষে মামলাটি পুন: বিবেচনার জন্য উচ্চ আদালত হাইকোর্টে আপিল করেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত বাদশার আপিল মঞ্জুর করে তা পুনরায় শুনানীর জন্য গত ১২/০২/২০১৫ সালে বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস ও শরিফ উদ্দিন চাকলাদারের দ্বৈত বেঞ্চ নি¤œ আদালতকে ৬ মাসের মধ্যে উক্ত মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে গত ২ বছর ধরে মামলার শুনানী স্থগিত রয়েছে। আপিলকারী বাদশা মিয়া বলেন, আঃ ছালাম জাল জালিয়াতির মাধ্যমে খাদ্য গুদাম ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্পত্তি দখলের জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুষ দিয়ে বহুবার নকল কাগজপত্র তৈরী করেন। এতে তিনি বাধা দেয়ায় তার পরিবারের সদস্যদের একাধিক হয়রানী মুলক মামলায় ফাঁসিয়েছেন কালো টাকার মালিক প্রভাবশালী ছালাম। এছাড়া সরকারী সম্পত্তি দখল মুক্ত করতে গিয়ে ছালামের কাছে একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্টেট (ইউএনও) নাজেহাল হয়েছেন। তবে, এসব বিষয় অস্বীকার করে আঃ ছালাম হাওলাদার দাবী করেন, নির্মানাধীন ওই ভবন তার রেকর্ডীয় সম্পত্তির ওপর। তিনি সরকার কিংবা খাদ্য গুদামের কোন জমি দখল করেননি। এছাড়া তিনি অবৈধ হলে আদালত তার অনুকুলে রায় দিত না। তবে খাদ্য গুদাম ও এলাকাবাসীর স্বার্থে সড়কটির প্রয়োজন রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবদুত রায় জানান, খাদ্য গুদাম ও রায়েন্দা বাজার সহ উপজেলাবাসীকে নানা দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৩৫/১ পোল্ডারের ভেরীবাঁধ নির্মান কাজ চলছে। তা বাস্তবায়িত হলে খাদ্য গুদামের সামনের রায়েন্দা খালটি সংকুচিত হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে মালামাল নিয়ে কোন জাহাজ আর ঘাটে নোঙ্গর করতে পারবে না। তখন দখল হওয়া ওই সড়কটিই মালামাল পরিবহনের একমাত্র অবলম্বন হবে। এছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। রাস্তাটি দখল মুক্ত করা না গেলে খাদ্য গুদামের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে।