বিজ্ঞপ্তি : ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জনসমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তফসিল ঘোষণার পর স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলের প্রতি সমান ও ন্যায্য আচরণ এবং সুযোগ তৈরী হবে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোন স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের বিরোধী মত দমনে পূর্বের ভূমিকার কোন পরিবর্তন না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল- প্রতিদ্বন্ধী রানৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের অবাধ বিচরণ এবং ভয়ভীতিমুক্ত নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ। কেসিসি নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ ‘ লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতকরণের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্মারকলিপি পেশ করেছে খুলনা মহানগর বিএনপি।
রিটার্নিং অফিসার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (চলতি) মোঃ ইউনুস আলী তার কার্যালয়ে এ স্মারকলিপি গ্রহনকালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এসময় অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন এবং বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নগর শাখার সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু’র নেতৃত্বে এগারো সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন।স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, মীর কায়সেদ আলী, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, আব্দুল জলিল খান কালাম, সিরাজুল ইসলাম মেঝোভাই, স ম আব্দুর রহমান, মোঃ ফকরুল আলম ও আসাদুজ্জামান মুরাদ।
স্মারকলিপিতে উল্লিখিত সুপারিশ বা দাবি সমূহ হচ্ছে- বিগত বছরগুলোতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনসমূহে সরকারি দলের পৃষ্ঠপোষকতায় ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জোরপূর্বক ব্যালটে সীল মারা, ভোট শুরুর পূর্বে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা, পেশীশক্তির মাধ্যমে চরম ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে নিকৃষ্ট নেতিবাচক অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচনকালীন সময়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতীক ‘সেনাবাহিনী’কে নিয়োগ করতে হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে বিগত দিনে চরম দলবাজ হিসেবে ভূমিকা পালনকারী কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। বিএনপিকে দমনে সিদ্ধহস্ত, অতিউৎসাহী এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার/বদলী/অপসারণ করে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভূক্ত পুলিশ প্রশাসনের সকল স্তরে দক্ষ, পেশাদার এবং দলনিরপেক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। ভোট গ্রহণে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বিতর্কিত এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার না করার জন্য আমরা জোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিতর্কিত রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে সরকারি দলের বিশ্বস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন প্রদান করা যাবে না; দল নিরপক্ষে পেশাদার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সতর্কতার সাথে নিয়োগ করতে হবে। কোন কারণেই তা ঢালাওভাবে করা যাবে না। নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট, বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাবে হ্যাভি ম্যানেজিং কমিটির দলীয় প্রভাবে যেকোন সময়ের তুলনায় মারাত্মক আকার ধারণ করায়-সেখান থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগে সুসম্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে দলটি। এছাড়া, বিগত বছরগুলোতে সরকারি দলের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত দুষ্কর্মের বিষয়গুলি বিবেচনায় নিয়ে সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকা প্রস্তুত এবং নির্বাচনী কার্যক্রমকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং ভীতিমুক্ত করতে তাদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা অত্যাবশ্যক; আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া, সরকারি দলের মন্ত্রী, এমপি এবং সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যাতে কোনক্রমেই নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করতে না পারে তার জন্য শুরু থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।