‘আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বের নিপীড়িত ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের প্রতি মানবিকতা দেখানো সব জাতির দায়িত্ব।’
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে মানবিক ও দায়িত্বশীল নীতি এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের জন্য দুইটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় পৃথক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘দ্য আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘২০১৮ স্পেশাল ডিস্টিংকশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ’ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউ ইয়র্ক, জুরিখ ও হংকংভিত্তিক একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন শেখ হাসিনাকে এই দুটি পুরস্কার প্রদান করে।
জাতিসংঘ সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ‘দ্য আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক উইলিয়াম লাসি সুইং।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবিকবিষয়ক জাতিসংঘ কার্যালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক, আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক কানাডার মন্ত্রী মেরি-ক্লাউড বিবেউ। স্বাগত বক্তব্য দেন আইপিএস ইন্টারন্যাশনালের মহাপরিচালক ফারহানা হক রহমান।
নিউ ইয়র্কের পার্ক অ্যাভিনিউতে আরেক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘২০১৮ স্পেশাল ডিস্টিংকশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ’ প্রদান করেন গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের অনারারি প্রেসিডেন্ট ইরিনা বোকোভা।
শেখ হাসিনা ছাড়াও এই পুরস্কার পেয়েছেন নাইজারের প্রেসিডেন্ট মাহমাদু ইসোফু, তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেজি কাইদ এসেবসি ও গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্স সিপ্রাস।
আইপিএস পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বের নিপীড়িত ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের প্রতি মানবিকতা দেখানো সব জাতির দায়িত্ব। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি এবং পুনঃএকত্রীকরণ নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমারে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের মূলে রয়েছে মিয়ানমার। এ জন্য এর সমাধান মিয়ানমারেই খুঁজতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুস্পষ্ট দায়িত্ব হচ্ছে যে সম্মিলিতভাবে মিয়ানমারকে এই সমস্যার সমাধান করার জন্য চাপ দেওয়া এবং পরবর্তীতে আরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে দেশটির সঙ্গে কার্যকরভাবে কাজ করা।’
‘এ ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মিয়ানমারে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই কেবল রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে পারে।’
আরেক পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিনের উপস্থিতি আমাদের অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।’
মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ সৃষ্টি করতে এবং দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের হৃদয় উজার করে ঘরবাড়ি দান করা ও খাবার ভাগ করে নেওয়া দেশের জনগণকে পুরস্কার দুইটি উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী।