অনলাইন ডেস্কঃ
বছর ঘুরে শুরু হচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। এ মাসকে বলা হয় আত্মসংযমের মাস। অথচ এ মাসটিজুড়েই অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন খুচরা বাজারের ক্রেতারা। চাহিদা বাড়লেও দেশের পাইকারি বাজারে মসলার তেমন সংকট না থাকায় দাম বাড়ারও কোনও যৌক্তিকতা নেই।
কিন্তু প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান আসার আগেই দেশের ক্রেতা সাধারণের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা জেগে উঠেছে। না জানি কোনও পণ্যে কত টাকা বেড়ে যায়! এমন ভীতির পুরো ফায়দা নিতে ওঁত পেতে থাকে বিক্রেতারা। অন্যান্য বছর রমজান শুরুর পর নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও এবার বেড়েছে একটু আগেভাগে। বিশেষত মসলার বাজারে রোজার আগেই আগুন লেগেছে। দাম বৃদ্ধি নিয়ে এরইমধ্যে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে ক্ষোভ ও অভিযোগ জানানো হচ্ছে। কিন্তু সমাধান মিলছে না। মিলবে যে, তারও কোনও সম্ভাবনা মনে হচ্ছে না।
যদিও সিটি করপোরেশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবরের মতো এবারও বলে আসছে- রোজায় কোনও পণ্যের বাড়তি দাম হাঁকানো যাবে না। সেটি করা হলে দণ্ড ভোগ করতে হবে। কিন্তু সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- এসব নির্দেশনার যেন কোনও বালাই-ই নেই বাজারে।
পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এমনকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে দ্রব্যমূল্য না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন দক্ষিণ ঢাকার মেয়র সাঈদ খোকন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে নিত্যপণ্যে দাম বৃদ্ধির চিত্র। শান্তিনগর বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম নামে একজন চাকুরিজীবীর সঙ্গে কথা হলে তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘মাসখানেক আগেও যেসব মসলার দাম কম ছিলো আজ তার ব্যাপক বেড়েছে। পাশাপাশি রসুন ও আদাসহ সবকিছুর বাজারই চড়া। ব্যবসায়ী এবং মজুতদারদের কারসাজিতে প্রতিবছর রমজান মাসের আগে মসলার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যায়। সে কারণে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের বিপাকে পড়তে হয়। এটা যেন সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা দাম বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করেন। বিক্রেতারা জানান, মসলার চাহিদা বেশি হয় কোরবানির ঈদে। এখন দাম স্বাভাবিক। বরং আগের চেয়ে মসলার দাম অনেকটা কম।
এবার মসলার দাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। আবার কোনটায় ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাড়তি দামের বিষয়ে হাতিরপুল বাজারের জাকির স্টোরের মসলা বিক্রেতা মো: সোহেল বলেন, ‘কিছু কিছু মসলার দাম বেড়েছে। সামনে কমবে কি না বলতে পারছি না। তবে ঈদের আগে কমার সম্ভাবনা নেই।’
সোহেলের দোকানের অদূরেই জসিম মোল্লা বিভিন্ন ধরনের মসলার পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। তার সঙ্গেও কথা হয়। তিনি বলেন, ‘কোনও ক্রেতা নেই। মসলার বাজার জমে ওঠেনি এখনও, এখনও বিক্রি তেমন আরম্ভ হয়নি। মসলার বাজার জমে উঠে ইদুল আজাহায়।’ দাম বাড়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাম তেমন বাড়েনি। তবে কিছু কিছু মসলার দাম ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বেড়েছে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা বেশি দামে কিনে আনি, তাই একটু বেশি দামে বেচতে হয়।’
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জাহাঙ্গীর আলম। রমজান সামনে রেখে তিনি পরিবারের জন্য সারা মাসের মসলা একটু আগেভাগেই কিনে রাখতে চান। কিন্তু বাজারে এসে তাকে চরম অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়। হাতিরপুলে বাজার করতে এসে হতাশা নিয়ে তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘প্রতিবার ঈদ এলে মসলার দাম বাড়ে, এটাই স্বাভাবিক; বরং না বাড়াটাই অস্বাভাবিক। ঈদের কয়েক দিন আগে দাম বেড়ে যেতেই পারে। তবে রমজানের আগেই বাড়াটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।’
রোজায় নিত্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া হবে এটা প্রায় সবারই জানা। তাই যাদের হাতে পয়সা থাকে তারা কিছুটা সাশ্রয়ের চিন্তা করে আগে থেকে অপচনশীন নিত্যপণ্য কিনে রাখতে চান। কিন্তু এবার যেন সে সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ মে) রাজধানীর মতিঝিল, হাতিরপুল, শান্তিনগর ও যাত্রাবাড়ী এলাকার নিত্যপণ্যের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি জিরা ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, তেঁজপাতা ২০০ থেকে ২২০, দারচিনি ২৮০থেকে৩০০ , লবঙ্গ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০, এলাচ ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার , কালো গোলমরিচ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০, জয়ফল ৯০০ থেকে ১ হাজার, জৈত্রীক ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০, কিসমিস ৩০০ থেকে ৪৫০ , আলু বোখারা ৬৫০থেকে ৭০০, কাঠবাদাম ৬৫০ থেকে ৭০০ , পোস্তাদানা ৮৫০ থেকে ১ হাজার আদা ১০০ থেকে ১৩৫, রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিন মসলা কেনার উদ্দেশ্যে বাজারে আসা এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যেকেই চাইছেন রমজানে যেন মসলার দাম আর না বাড়ে। তাহলে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এজন্য সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। সাধারণ ক্রেতাদের মতে, সরকার যদি মসলার বাজার নিয়মিত নজরদারিতে রাখে, তাহলে হয়তো মসলার দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।