কামরুল হোসেন মনি : খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে পূর্ব রূপসা রিসোর্ট সেন্টারের মালিক কামরুজ্জামান কামরুল (৫৩) ও ম্যানেজার মোঃ বাহার উল্লাহ (৪০) আটক করেছেন। অভিযানে রূপসা কোস্ট গার্ড অফিসের সন্নিকটে অবস্থিত রিসোর্ট সেন্টার থেকে দর্শনার ৩১ বোতল হুস্ককি (৭৫০ মিঃ গ্রাম), একটি বিয়ার ও সিসা খাওয়ার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে পূর্ব রূপসায় অবস্থিত রিসোর্ট সেন্টারের এ অভিযান চালানো হয়। এদিকে রিসোর্ট সেন্টারের মালিক কামরুজ্জামান কামরুল গ্রেফতার হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা মুখ খুলতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে তা এ রিসোর্ট সেন্টারের আড়ালে বিভিন্ন মাদক সেবন ও ঘন্টাপ্রতি রুম ভাড়া দিয়ে অসামাজিক কার্যাকলাপের অভিযোগ রয়েছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্র মতে, সংস্থার উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধায়নে ‘ক’, ‘খ’ গোয়েন্দা শাখার নিয়ে গঠিত বিশেষ টিম বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রূপসা থানাধীন রূপসা রিসোর্ট সেন্টারের অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ওই রিসোর্ট থেকে ৩১ বোতল হুইস্কি, একটি বিদেশী বিয়ার ও সিসা খাওয়ার সরঞ্জামসহ রিসোর্ট সেন্টারের মালিক আব্দুুল ওহাবের পুত্র কামরুজ্জামান কামরুল ও ম্যানেজার আঃ রউফ শেখের পুত্র মোঃ বাহার উল্লাহকে আটক করা হয়। আটক কামরুল নগরীর ৪৫, বসুপাড়া মেইন রোডে আব্দুল ওহাবের পুত্র। আটক মদ ও বিয়ারের মুল্য ৩৮ হাজার টাকার।
উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে রিসোর্ট সেন্টারের মধ্যে মালিক কামরুজ্জামান কামরুল মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এমন গোপন সংবাদ পাওয়ার পর আমরা সেখানে গোয়েন্দা নজরদারি বৃৃদ্ধি করি। বৃহস্পতিবার অভিযানে দর্শনার কেরু কোম্পানীর ৩১ বোতল হুইস্কি ও বিয়ার ও সিসা খাওয়ার সরঞ্জাম উদ্ধারসহ ওই দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ আবুল হোসেন, সহকারি পরিচালক শিরিন আক্তার, পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাওলাদার সিরাজুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন, কেএম হানিফ। এ ব্যাপারে উপ-পরিদর্শক উপ-পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বাদী দুই জনের বিরুদ্ধে রপসা থানায় মামলা দায়ের করেন। অপর অভিযানে নগরীর টুটপাড়া জোড়াকল বাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ তুহিন হাওলাদারের পুত্র মোঃ তানভির হাওলাদারকে ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জামসহ আটক করেন। জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানে উপস্থিত ছিলেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক হাওলাদার মোঃ সিরাজুল ইসলাম। পরবর্তীতে উক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রম্যমান আদালত পরিচালনা করে আটক তুহিনকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের অভিযানে মদ বিয়ারসহ আটক কামরুজ্জামান কামরুল গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এতো দিন তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহসি পায়নি। সে সব সময় তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রূপসা ব্রিজের পূর্ব পাশে কোস্ট গার্ডের সন্নিকটে রিসোর্ট এর ভেতরে রয়েছে ৩-৪ টি রুম। সেখানে ঘন্টা হিসেবে যুবক-যুবতীদের ভাড়া দিয়ে থাকেন। প্রতি ঘন্টা হিসেবে ভাড়া বাবদ ৫০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। রাতেও থাকার ব্যবস্থার জন্য ভাড়া ৪-৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন। দিনের পর দিন চলে অসামাজিক কার্যাকলাপ। আইন বহির্ভুত বিভিন্ন অপকর্মের স্বার্গরাজ্য বলে অনেকে মন্তব্য করেন। দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে মাসিক মাসোহারা মাধ্যমে এ ব্যবসার চালিয়ে যাচ্ছে বলে এমন অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এ ব্যাপারে রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আটক দুই জনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অফিসার বাদী হয়ে মাদকের আইনের মামলা দায়ের করেছেন। রিসোর্ট সেন্টারের মধ্যে মাদক ব্যবসা বা অসামাজিক কার্যাকলাপের বিষয়ে তিনি অবগত নন।