কে এইচ এম:
এক সময় খুলনার শিপইয়ার্ড লিমিটেড যুদ্ধাহত পঙ্গুর মতো অব্যাহত লোকসানের মুখে নুয়ে পড়েছিল বছরের পর বছর। নিজের ব্যয় বহনের ভার বইতে না পেরে বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখন সেই শিপইয়ার্ড লোকসান কাটিয়ে এখন লাভের মুখ দেখেন। খুলনার করদাতা হিসেবে এবারও শীর্ষ রয়েছেন এই প্রতিষ্ঠান। আগামীতে বড়গুনা তালতলিতে ১৬২ একর জমির ওপর বড় ধরনের শিপইয়ার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এল) এনইউপি, পিএসসি কমরোড আনিসুর রহমান মোল্লা এক সাক্ষাত কারে এই সব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমšতী এবং আমাদের নৌকাজান বোর্ডঅফ ডাইরেক্টর এর নির্দেশে বড়গুনার তালতলিতে ১৬২ একর জমির ওপর বড় ধরনের শিপইয়ার্ড করতে যাচিছ। এই জমিটি ক্রয় বিষয়ে সম্পুর্ণ হওয়া পথে। সেখানে বড় বড় জাহাজ বা বানিজ্যিক জাহাজ এবং যুদ্ধ জাহাজ নির্মান করা সম্ভব হবে। এছাড়া মংলা জয়মনিগোলে তাদের প্রতিষ্ঠানের ৪৩ একর জায়গা আছে। ওই জায়গাটি ২০১১ সালে ক্রয় করেছিলে। সেখানে ফরওয়ার্ড শিপইয়ার্ড করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। যদি বড়গুনায় বড় শিপইয়ার্ড হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ওই জায়গাটি অন্য কোন পরিবেশ বান্ধব ইন্ড্রাস্ট্রিজ করা যায় কি না। সেই বিষয়ও চিšতা ভাবনা করা হচেছ।
কমরোড আনিসুর রহমান মোল্লা আরও বলেন, বড়গুনা তালতলিতে ১৬২ একর জায়গাটি ইতিমধ্যে বোর্ডের সম্মতি ও শিল্প মšতনালয়ের সাথে কথাও হয়েছে। এখন বড়গুনা ডিসি কাছে কাগজপত্র জমা রয়েছে। এছাড়া ওই জমি ক্রয় করার জন্য আমাদের ফ্যান্ডও যোগার হয়েগেছে উলেলখ করে বলেন, ওই জায়গাটি ক্রয় করতে ২২-২৩ কোটি লাগবে।
তিনি বলেন, এবারও খুলনার শীর্ষের করদাতা হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠান রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এবার প্রায় ৫০ কোটি টাকা কর দিয়েছেন। এবার সরকারকে ৫০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব দেয়ার পরেও ৫০ কোটি টাকা লাভ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, যখন ১৯৯৯ সালে যখন ওই প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাছে হস্তানান্তর করা হয় তখন প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো দেনায় ছিলেন। তারা দায়িত্ব নেয়ার পর ২-১ বছরের মধ্যেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। দুটি এলপিসি ও দুইটি টার্স্কবোর্ড নির্মান রয়েছে। এটি মাননীয় রাষ্ট্রপতি উদ্বোধন করবেন। তাছাড়া কোস্টগার্ডের ইনসুল পট্রোল ভ্যাসলো আছে ৩টি, কোস্ট গার্ডের জন্য হাই স্প্রিড বোর্ড আছে ৬টি, কোস্ট গার্ডের জন্য ক্রেইন বোর্ড আছে, নেভির জন্য সার্ভে ভ্যাসেল আছে ২টি, পায়রা বন্দরের জণ্য ২টি পাইলট ভ্যাসেল আছে। এছাড়া তারা নেভি, কোষ্ট গার্ড ও বডার গার্ডে বিভিন্ন জাহাজও মেরামত করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পুর্বে আমরা ৫টি জাহাজ নির্মান করেছি। এবার তার চেয়ে একটু বড় জাহাজ নির্মান করেছি। এভাবে তৈরি হতে থাকলে এবং এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আমাদের দক্ষ এক্সপার্ট গড়ে উঠবে। ভবিষ্যতে বিদেশেও অর্ডার পাওয়ার আশাবাদী বলে তিনি মনে করেন।
জানা গেছে, ১৯৫৭ সালের ২৩ নভেম্বর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে যাত্রা শুরু করে খুলনা শিপইয়ার্ড। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন জার্মান ও বিট্রিশ প্রযুক্তিবিদরা। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্থান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (ইপিআইডিসি) এর দায়িত্ব নেয়। দেশ স্বাধীনের পর খুলনা শিপইয়ার্ডের অভিভাবকত্ব পায় বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (বিআইডিসি)। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (বিএসইসি) গঠিত হয়। তখন বিএসইসির আওতায় চলে খুলনা শিপইয়ার্ড। এত দিন লাভজনকভাবে চলা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯০ সালের দিকে এসে লোকসানে পড়ে, আস্তে আস্তে রুগ্ন শিল্পের তালিকায় জায়গা হয়, বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব হস্তাšতর করা হয়। নৌবাহিনী যখন দায়িত্ব নেয়, তখন প্রতিষ্ঠানটির দেনা ছিল ৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সেই দায় মিটে গেছে, এখন রয়েছে মুনাফায়। ##