স্পোর্টস ডেস্কঃ
ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। ফ্রান্সের মাঝমাঠের প্রাণও তিনিই, রাশিয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার বল কেড়ে নেওয়ার রেকর্ডও তাঁর। সেই এনগোলো কান্তেই কিনা লজ্জায় বিশ্বকাপ ট্রফি ধরতে চাননি!
বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে এই একটিই ছবি এনগোলো কান্তের। টুইটার।বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে এই একটিই ছবি এনগোলো কান্তের। টুইটার।
প্রতিটি ফুটবলারের আজন্মলালিত স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ ট্রফি একবার হলেও হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে। সবাই সেই সুযোগ পান না, যারা পান তাঁরা সুযোগটা লুফে নেন। কিন্তু সুযোগ পেয়েও বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নিতে চাচ্ছেন না এমন কারও কথা শুনেছেন? এনগোলো কান্তে কিন্তু তেমনি একজন।
রোববার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে ফ্রান্স। ম্যাচ শেষে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বকাপ ট্রফিটি ফরাসি দলের হাতে তুলে দেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ফরাসি খেলোয়াড়েরা একে একে ট্রফি হাতে নিয়ে উল্লাস করলেও কান্তে নাকি বেজায় লজ্জা পাচ্ছিলেন। তিনি একবারের জন্যও মুখ ফুটে ট্রফিটি কারও কাছে চাননি। শেষ পর্যন্ত সতীর্থ স্টিভেন এনজোনজি ব্যাপারটি লক্ষ করে কান্তের হাতে প্রায় জোর করেই ট্রফিটি তুলে দেন। শিরোপা হাতে নিয়ে কান্তের সে কি লজ্জা! যেন মুখ তুলে চাইতেই পারছিলেন না ক্যামেরার দিকে। অনেক কষ্টে আলোকচিত্রীরা ট্রফি হাতে কন্তের ছবি তুললেন। সেটি করেই ট্রফিটা অন্য কারও হাতে দিয়ে কান্তে যেন রীতিমতো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন!
ফ্রান্স দলের সতীর্থেরা কান্তেকে নিয়ে এরই মধ্যে গানও রচনা করে ফেলেছেন। যেখানে উঠে এসেছেন লিওনেল মেসিও। শেষ ষোলোর ম্যাচে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মেসিকে আটকাতে কান্তেই যে ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। সেই গানের লাইন গুলো এ রকম,‘এনগোলো কান্তে, পা লা লা লা, সে ছোটখাটো দুর্দান্ত একজন মানুষ, সে আটকেছে লিও মেসিকে।’ এই গান নিয়ে আপত্তি আছে কান্তের। সতীর্থেরা যখনই গানটি গেয়ে ওঠেন তখনই লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে গান থামাতে বলেন কান্তে। পগবা-এমবাপ্পেরা সেটি শুনলে তো! ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাসভবনের নিমন্ত্রণেও কান্তেকে নিয়ে রচিত গানটি গেয়েছেন পল পগবা।
আসলে কান্তের জীবনটাই যে এমন। উঠে এসেছেন অনেক নিচু তলা থেকে। বছর পাঁচেক আগেও খেলতেন ফ্রান্সের তৃতীয় বিভাগের এক ক্লাবে। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগ ও ২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্রথম বিভাগে তাঁর খেলা দেখে ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটি তাঁকে কিনে নেয়। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ফুটবল দুনিয়াকে হতবাক করে দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ জিতে বসে লেস্টার। লেস্টারের সেই দলের ফুসফুস ছিলেন কান্তে। রিয়াদ মাহরেজ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেও পর্দার আড়ালের কলকাঠি নেড়েছিলেন কান্তেই।
পরের বছরই নাম লিখিয়েছেন চেলসিতে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছে চেলসিও। এবার আর আড়ালে নন, সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন কান্তে। প্রিমিয়ার লিগের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও হন তিনি। এবার দুর্দান্ত খেলেই ফ্রান্সকে জেতালেন বিশ্বকাপের শিরোপা।
সময় কান্তেকে বদলে দেয়নি। ফুটবল খেলাটাকে জীবিকা হিসেবে নিয়েছিলেন দুবেলা ভালো খাবারের আশায়। সেই ফুটবলই তাকে বড় তারকা বানিয়েছে। কিন্তু তাঁকে বদলে দিতে পারেনি।