টাইমস সম্পাদকীয় : অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। এ অবস্থায় কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের নিচু এলাকা ভরাট করার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ কাজটি করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার। জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নাফ নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। অভিযোগ উঠেছে, এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়সহ শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার যথাযথ নিয়ম মেনে এ কাজ করবে, এটা প্রত্যাশিত হলেও বাস্তবে তা লক্ষ করা যায়নি। জানা গেছে, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ভরাটের নামে উল্লিখিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাফ নদী থেকে বালু তুলে বাইরে বিক্রি করেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন চায়না হারবারকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এ ধরনের কাজে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিয়েছে, তাদেরও খুঁজে বের করা দরকার। কয়েক মাস আগে শাহপরীর দ্বীপের কয়েক হাজার মানুষ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করলেও চায়না হারবার তা আমলে নেয়নি। দুঃখজনক হলো, প্রতিষ্ঠানটি বালু উত্তোলন শুরুর আগে পরিবেশ ছাড়পত্রও নেয়নি। তারা পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই কেন কাজ শুরু করল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। দ্বীপের মানুষ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে যেসব অভিযোগ তুলে ধরেছে-স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উচিত সেসব অভিযোগের বাস্তব ভিত্তি আছে কিনা, তা যাচাই করে দেখা। সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক চালু হলে স্থানীয় মানুষ নানাভাবে উপকৃত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কোনো উন্নয়ন কর্মকাÐে তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় না নিয়ে যে কোনো উন্নয়ন কর্মকাÐ পরিচালনা করলে দ্বীপের বহু মানুষ পথে বসতে বাধ্য হবে। অতীতে ড্রেজিংয়ের নামে দেশে বহু অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। জোয়ারের ধাক্কায় ফসলি জমি, মৎস্য খামারের পাশাপাশি বসতঘরও সাগরে বিলীন হওয়ার ঘটনা দ্বীপ ও উপক‚লীয় এলাকায় অহরহ ঘটে। কাজেই যে কোনো দ্বীপ রক্ষায় নির্মিত বাঁধ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে, এমন কোনো কর্মকাÐের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো উন্নয়ন কর্মকাÐে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব হলে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে নানারকম জটিলতাও সৃষ্টি হয়। কাজেই এসব বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা আশা করি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।