আহাদ আলী:
আমের গাছ ও মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্থতম সময় পার করছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের আমচাষিসহ গাছ মালিকরা। আম গাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরু করেছে। নানা ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুলও। আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। মুকুলের সেই সুমিষ্ট সুবাস আন্দোলিত করে তুলছে মানুষের মন। ভালো ফলনের আশায় আমের গাছ ও মুকুলে কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করছেন তারা। মাত্রারিক্ত কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেলে আমের ভালো ফলন হতে বিমুখ হতে পারেন এমন আশঙ্কায় আগেভাগেই তারা পরিচর্যায় নেমে পড়েছেন বলে জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আব্দুল খালেক, নাজমুলকে আম গাছে স্প্রে করতে। তারা জানান, দেড় সপ্তাহ আগে থেকেই গাছে মুকুল দেখা দিতে শুরু করেছে। এখন সময়ের ব্যবধানে তা আরো বাড়ছে। এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি। আমচাষি এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। ভালো ফলনের আশায় গাছ মালিকগণ কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে পোকামাকড় নিবারণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আমরা শ্রমের বিনিময়ে গাছে বিশ প্রয়োগ করছি মাত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময়মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হবে। আর এ কারণেই আশায় বুক বেঁধে আম চাষিরা শুরু করেছেন পরিচর্যা। তাদের আশা, চলতি মৌসুমে তারা আম থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
কীটনাশক বিক্রেতা মিঠুন চক্রব্রতী জানান, কৃষি অফিস হতে আমের মুকুলের পরিচর্যাস্বরূপ পোকা দমনের লক্ষ্যে রিপকট ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যা বোতল প্রতি ১শ টাকা দাম। এক বোতল বিষে ৪/৫টি গাছে ভালোভাবে স্পে করা সম্ভব। গাছ ও বাগান মালিক আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, এ বছর আম গাছগুলোতে যে পরিমাণ মুকুল ধারণ করে আছে তাতে ভালো ফলন পাব বলে শতভাগ আশাবাদী।
অগ্রীম কাঁচা আম গাছ কেনা আম ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, আগেভাগেই ভালো ফলন পাব বলে নেমে পড়েছি বাগান ক্রয়ে। আশাকরি এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাভবান হওয়া সম্ভব হবে।
কৃষি কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ভালো ফলনের আশায় আমগাছ ও মুকুলের প্রয়োজন রয়েছে, তবে ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ম্যানকোজেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমাডোক্লোরিড গ্রুপের দানাদার প্রতি লিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাঙ্নি গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার মুকুল গুটিতে রূপান্তর হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে। এছাড়া পাউডার মিলডিউ নামের এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কখনও গাছে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে অবশ্যই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে মিশিয়ে সাত থেকে ১০ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করতে হবে।
কৃষি কর্মকর্তা এবং গবেষক সুবোধ চন্দ্র রায় জানান, লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তবে গড়ে ওঠা নতুন আম বাগানগুলোর প্রায়ই বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতেরই গাছ বেশি হচ্ছে।
আম বাগান মালিক আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, এ বছরের আবহাওয়া আমের জন্য অনুকূলে রয়েছে। আমের জন্য এখন আর অফ ইয়ার বা অন ইয়ার নেই। বছরজুড়ে গাছের পরিচর্যা করার কারণে এখন প্রতি বছরই আমের ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে গাছে মুকুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই তারা পুরো গাছ সাইপারম্যাঙ্নি ও কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিয়েছেন।
এতে গাছে বাস করা হপার বা শোষকজাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। গত বছরের চেয়ে টানা শীত ও কুয়াশার তীব্রতা এ বছর অনেক কম। গতবারের মতো মৌসুমের শুরুতে শিলাবৃষ্টিও হয়নি। এরই মধ্যে অনেক গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, ফল্গুনের মধ্যে আমগাছ গুলোতে পর্যাপ্ত মুকুল আসবে। তবে মাঝে-মধ্যেই আকাশে মেঘ জমে উঠছে। এ সময় শিলাবৃষ্টি হলে আমের মুকুলের ক্ষতি হবে। এর উপর সামনে কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কাও কাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনূকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।