বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর পাইকগাছার শহীদ এমএ গফুরের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

0
160

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রবিবার ৬ জুন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক খুলনার পাইকগাছার কৃতি সন্তান সাবেক এমএনএ শহীদ এমএ গফুরের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীন পালন। বিগত বছর গুলোতে মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটি আলোচনাসভা সহ নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে পালিত হলেও মহামারি করোনার প্রভাবে এবছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পালিত হচ্ছে বরেন্য এ মানুষটির মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও মন্দিরে প্রার্থনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন ও বিকালে উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে বলে এমএ গফুরের জৈষ্ট পুত্র, পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার ইকবাল মন্টু নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশত বছর ও মহান ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরোলেও দীর্ঘ এ সময়ে ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ভাষা সৈনিক শহীদ এমএ গফুরের। অপরদিকে স্বাধীনতাযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখলেওÍ অদ্যাবধি মেলেনি স্বাধীনতা পদক। তবে দেরিতে হলেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন শহীদ এম,এ গফুর ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি এবং স্বাধীনতা পদক পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন শহীদ এমএ গফুরের পরিবার ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত উপকূলীয় জনপদের সর্বোস্তরের জনসাধারণ। খুলনার ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শহীদ এমএ গফুর বাংলা ১৩৩২ বঙ্গাব্দে ২৬ বৈশাখ খুলনার (বর্তমান) কয়রা উপজেলার হরিনগর গ্রামের এক সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৃত জনাব আলী সানা, মাতা সোনাবান বিবি। কর্মময় জীবনে তিনি যেমন ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছের মানুষ, তেমনি ছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব। আজও অবহেলিত রয়েছে সংগ্রামী এ ব্যক্তির নামে নিজ এলাকায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো। শহীদ এম এ গফুর ছিলেন ৪ ভাই ও দু’বোনের মধ্যে পঞ্চম। তিনি উপজেলার কপিলমুনি স্কুল থেকে প্রাইমারী শেষ করে পাশ্ববর্তী আশাশুনির বুধহাটা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন খুলনার ঐতিহ্যবাহী বিএল কলেজে। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন (ন্যাপ) রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।

এইচএসসি পাশ করার পর বিএ পড়াকালীন শুরু হয় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার রাজপথে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের রক্তঝরার খবরটি খুলনায় পৌছালে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি রাজপথে ভাষার দাবিতে আন্দোলনে নামে তৎকালীন খুলনার ছাত্রসমাজের নেতৃবৃন্দ। এদিন সমীর আহম্মেদের নেতৃত্বে নগরীর আহসান আহম্মেদ রোডের এ কে শামসুদ্দিন আহমেদ শুনুর আজাদ গ্রহš’াগারে প্রথম বৈঠক করেন খুলনার ছাত্রসমাজ। বৈঠকে এমএ গফুরসহ উপস্থিত ছিলেন আবু মোহাম্মদ ফেরদৌস, এমএ বারী, নূরুল ইসলাম দাদু, এসএম জলিল, জাহিদুল হক ও তোফাজ্জেল হোসেনসহ অনেকেই। বৈঠকে কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্তনেন উপস্থিত সকলেই। পরবর্তী এ আন্দোলনে নেতৃত্বদেন এমএ গফুর। তৎকালীন মুসলিমলীগের নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে গফুরসহ তার সহকর্মীরা পায়ে হেঁটে নগরির স্কুল, কলেজগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন।

পুলিশের হয়রাণীর শিকার ও মিথ্যা মামলায় জেলও খাটেন আন্দোলনে অংম নেওয়া অনেকেই। এর পর এম এ গফুর বিএল কলেজ থেকে বিএ পাশ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগে যোগদান করার মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে ঝাঁপিয়ে পড়েন গণ অভ্যূত্থান আন্দোলনে। ধীরে ধীরে তিনি আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জন করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পাইকগাছা-কয়রা ও আশাশুনি এলাকা থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি । মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ৯নং সেক্টরে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৯ মাসের স্বসস্ত্র সংগ্রামে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসার পর এমএ গফুরের অনুরোধে ভেঁড়ি বাঁধ নির্মানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২২ ফেব্রুয়ারি সফর করেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার আলমতলা এলাকা। ভেঁড়িবাঁধ নির্মানসহ অন্যান্য সামাজিক উন্নয়ন কাজ ও সহজ সরল জীবন যাপনে সাধারণ মানুষের কাছে এমএ গফুর হয়ে ওঠেন একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্শ্বান্তিত হয়ে ওঠে স্বার্থন্বেষী একটি মহল।

১৯৭২ সালের ৬ জুন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক এমএ গফুর। ১৯৯০ সালে মৃত্যুবরন করেন সহধর্মীনি লায়লা বেগম। বরেন্য এ ব্যক্তির নামে জন্মস্থান হরিহরনগর ও পাইকগাছার সরল এলাকায় দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলা সদরে একটি মিলনায়তন ও সরল এলাকার প্রাইমারী স্কুলের সাথেই একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো পড়ে রয়েছে চরম অবহেলায়। বর্তমানে শহীদ এম এ গফুরের ৭ ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হোসনেয়ারা আমেরিকায়, পুত্র আনোয়ার ইকবাল মন্টু পাইকগাছার সরল গ্রামে এবং আনোয়ার জাহিদ, কন্যা নিশাত বানু ও তামারা বানু খুলনায় বসবাস করছেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিলেও এ আন্দোলনে যাদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ তাদের অনেকেরই স্থান হয়নি ইতিহাসের পাতায়। তাদেরই মধ্যে তেমনই একজন শহীদ এমএ গফুর। ভাষা আন্দোলনে এম এ গফুরের অবদান এলাকাবাসী স্মরণ করলেও আজও ভাষা

সৈনিকের স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ এমএ গফুরের। অনুরুপভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হওয়া স্বত্ত্বেও আজও মেলেনি স্বাধীনতা পদক। যদিও সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না পাইকগাছায় যোগদান করার পর তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্ইু দুইবার শহীদ এমএ গফুরকে স্বাধীনতা ও ভাষা সৈনিকের মরোনত্তর সম্মাননা প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে শহীদ এমএ গফুরের জৈষ্ঠ্য পুত্র আনোয়ার ইকবাল মন্টু জানান, ভাষা আন্দোলনে খুলনার অবদানের বিষয়টি ইতিহাসে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। যার ফলে অনেকের ইতিহাসে ঠাঁই মেলেনি। ওই সময় যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছিলো তাদেরকে ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা উচিত। একইসাথে আমার পিতা হিসেবে নয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হওয়ায় আশা রাখি বর্তমান সরকার শহীদ এমএ গফুরকে সঠিক মূল্যায়ন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

খুলনা টাইমস/এমআইআর