নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্লাগারিজম (অন্যের লেখা নকল) এর অভিযোগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক ও দুই ছাত্রকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৬২তম সভায় প্লাগারিজম এর সুস্পষ্ট অভিযোগে এবং এ সম্পর্কিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ, সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ-আল-বারী ও এনার্জী সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ হাসান আলী এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র মোঃ মেজবাহ-উল-ইসলাম ও মোঃ শাহাদত হোসেনকে শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
শাস্তি হিসাবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট (বেতনবৃদ্ধি) আগামী তিন (০৩) বছরের জন্য স্থগিত এবং আগামী পাঁচ (০৫) বছরের জন্য হায়ার গ্রেড/স্কেল/পোষ্ট স্থগিত করা হয়। সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল বারীর বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট (বেতনবৃদ্ধি) আগামী তিন (০৩) বছরের জন্য স্থগিত এবং আগামী দুই (০২) বছরের জন্য উচ্চতর পোষ্ট/প্রোমোশন স্থগিত করা হয়। এনার্জী সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ হাসান আলীকে সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে অবদমিত করে প্রভাষক পদে পদায়ন করা, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট (বেতনবৃদ্ধি) আগামী দুই (০২) বছরের জন্য স্থগিত এবং আগামী দুই (০২) বছরের জন্য উচ্চতর পোষ্ট/প্রোমোশন স্থগিত করা হয়।
এছাড়া, শাস্তি হিসাবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র মোঃ মেজবাহ-উল-ইসলাম এর সিজিপিএ ০.০৫ এবং মোঃ শাহাদত হোসেন এর সিজিপিএ ০.০২৫ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উল্লেখ্য, উল্লেখিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্লাগারিজমের অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হলে ২৪/১২/২০১৭ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ^বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৫৮ তম সভায় বিষয়টি তদন্তের জন্য কুয়েটের আইআইসিটি’র পরিচালক প্রফেসর ড. বাসুদেব চন্দ্র ঘোষ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অব এক্সিলেন্স এর পরিচালক প্রফেসর ড. আফরোজা পারভীন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইট জাফর রাজা চৌধুরী এর সমন্বয়ে ৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ^বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট উল্লেখিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।
অভিযোগে জানা যায়, ২০০৪ সালে মিটসুবিসু মটরস এর টেকনিক্যাল রিভিউতে (নম্বর-১৬) প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধের প্রায় শতভাগ হুবহু নকল করে কুয়েটের উল্লেখিত শিক্ষকবৃন্দ ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ভলিউম-২ ইস্যু-১) এবং আইসিএমআইএমই ২০১৩ এ দুইটি টেকনিক্যাল পেপার প্রকাশ করে। উক্ত পেপার সমূহের বিষয়বস্তু, ফলাফলসহ অন্য লেখকের গবেষণার সাথে মিলের পরিমাণ নিরিক্ষণের জন্য প্রেরিত দেশের খ্যাতনামা ৪ জন গবেষক ও শিক্ষকের কাছ থেকে পৃথক পৃথকভাবে প্লাগারিজম এর সত্যতা পাওয়ার পর অভিযোগটি সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তন্দ কমিটি বাংলাদেশ ‘কপিরাইট আইন ২০০০’ (সংশোধিত ২০০৫) এবং বিশ^বিদ্যালয়ের ‘দ্বিতীয় সংবিধি ২০০৫’ এর আলোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে অপরাধীদের দন্ড প্রদানের সুপারিশ করে।