অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থায়ী অগ্রগতির জন্য ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক বাণিজ্য খুবই জরুরি। কিন্তু এখন পর্যন্ত রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণই বেশি।
এর একটি প্রধান কারণ রপ্তানিতে তৈরি পণ্যের অভাব। পাট, চা, চামড়া, চিংড়ির মতো কিছু প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত পণ্যের বাইরে তৈরি পোশাকই এখন পর্যন্ত আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ওষুধ, চামড়াজাত পণ্যসহ আরো কিছু তৈরি পণ্য রপ্তানির তালিকায় থাকছে। এ ছাড়া পর্যটন খাত, জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ আরো কিছু খাতে লক্ষণীয় অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু এসব সেবা ও পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতাও ক্রমে তীব্র হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বাজার সৃষ্টিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা জরুরি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কম্বোডিয়া সফর তেমনই একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তাঁর এই সফরের সময় গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে মোট ৯টি সমঝোতা স্মারক এবং একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। আশা করা যায়, এসব সমঝোতা ও চুক্তির ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো গতিশীল হবে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা ও চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে পর্যটন খাতে সহযোগিতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা, জয়েন্ট ট্রেড কাউন্সিলের অধীনে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সহযোগিতা, শ্রম ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও অংশীদারি, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ইত্যাদি। কম্বোডিয়া বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী দেশগুলোর একটি। দেশটির সঙ্গে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশি দূর এগোয়নি। দুই দেশের মধ্যে বছরে বাণিজ্যিক লেনদেন মাত্র ৬৭ লাখ ডলার। লেনদেনের এই পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়া কোনো কঠিন বিষয় নয়, যদি কার্যকরভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া যায়। পর্যটনক্ষেত্রে কম্বোডিয়ার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে, যা দেশটিকে বিশ্ব পর্যটনের একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশ লাভবান হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নামে বাংলাদেশের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ কক্ষপথে যুক্ত হবে। কম্বোডিয়া তারও সেবা নিতে পারবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও কম্বোডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটেও কম্বোডিয়া গুরুত্বপূূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুই দেশের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
কম্বোডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর খুবই ইতিবাচক হয়েছে। এই সফরের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে আরো জোরদার ও গতিশীল করতে হবে। একইভাবে উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে।