ডুমুরিয়া প্রতিনিধি:
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দকে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্নমন্ত্রী’র পদ মর্যদা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় নেতাকর্মী আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে মন্ত্রী’র শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ডুমুরিয়া বাস স্ট্যান্ড চত্বরে উপজেলা আ’লীগ ও তার অংগসংঠনের উদ্যোগে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ওই অনুষ্ঠান দেখানোর আয়োজন করা হয়। শপথবাক্য পাঠ শেষে দলের নেতৃবৃন্দ খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে আনন্দ মিছিল প্রদক্ষিনসহ ব্যাপক আতসবাজী ফুটায়। পরে বাস স্ট্যান্ড চত্বরে নেতাকর্মীরা মিষ্টিমুখ করেন। এসময়ে উপস্থিত ছিলেন রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল খোকন, শাহনেওয়াজ জোয়াদ্দার, আবু সাঈদ সরদার, খান আবু বক্কার, খান নজরুল ইসলাম, আছফর জোয়াদ্দার, জেলা পরিষদের সদস্য শোভা রানী হালদার, জেলা পরিষদের সদস্য অভিজিত চন্দ, জিএম ফারুক হোসেন, গোবিন্দ ঘোষ, মোল্যা সোহেল রানা, শেখ ইকবাল হোসেন, ইউপি সদস্য সিরাজ সরদার, শেখ আছাদুজ্জামান মিন্টুসহ শতশত নেতাকর্মী। এদিকে নারায়ন চন্দ্র চন্দের পূর্ণমন্ত্রীর শপথ শেষে উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান হিমাংশু বিশ্বাস, শোভনা ইউপি চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত কুমার বৈদ্য, মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা, আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ্এ্যাড প্রতাপ রায়ের নেতৃত্বে তাদের ইউনিয়নে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ’র জন্ম ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের উলা গ্রামের কালিপদ চন্দের মেঝো ছেলে তিনি। তার মায়ের নাম রেনুকা বালা চন্দ। স্ত্রী ঊষা রানী চন্দও পেশায় একজন শিক্ষক। চার সন্তানের জনক নারায়ন চন্দের তিন ছেলে ও এক মেয়ে।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ১৯৬১ সালে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরে তিনি ডুমুরিয়ার সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৭৩ সালের ৭মে নারায়ন চন্দ্র চন্দ খুলনার ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এই বিদ্যালয় থেকেই তিনি মেট্রিক পাশ করেছিলেন। তার প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র চালু হয়। এরআগে অত্র এলাকার পরীক্ষার্থীদেরকে খুলনা শহরে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পরপরই তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তিনি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে নারায়ন চন্দ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তিনি ২০০৫ সালের ১১ মার্চ শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহন করেন।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ ছাত্র জীবন শেষ করে ১৯৬৭ সালেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর ১৯৮৪ সালে চন্দ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৯৫ সালে তিনি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০০৩ সালে গঠিত উপজেলা কমিটিতেও তিনি আবারো সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই থেকে আজো তিনি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নিষ্ঠার সাথে।
বাংলাদেশে প্রথম অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ পদে তিনি ছয় বার নির্বাচিত হন। সেই সময়কালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে নারায়ন চন্দ্র চন্দ প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোটের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয়, সুমিষ্টভাষি, সদালাপী, পরিশ্রমী ও পরিছন্ন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত নারায়ন চন্দ্র চন্দ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি নির্বাচিত হন এবং ১২ জানুয়ারী তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী’র পদপর্যাদা লাভ করেন। দীর্ঘ ৪ বছর ওই মন্ত্রনালয়ে প্রতিমন্ত্রী’র দায়িত্বে থেকে মৎস্য সেক্টরে দেশে ব্যাপক সফলতা অর্জন করায় এবং সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃতু হওয়ায় চন্দকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বভার দেন সরকার।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া বাজারে মাহেন্দ্র মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কসহ বাজারের প্রধান সড়কে আনন্দ মিছিল প্রদক্ষিন শেষে বাসস্ট্যান্ড চত্বরে মাহেন্দ্র মালিক সমিতির সভাপতি শেখ শওকত হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্যদেন সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম মফিজ, কাজী আব্দুল মজিদ, সিরাজুল বিশ্বাস, জিয়াউর রহমান গাজী, আনিচ বিশ্বাস, মাহাবুর রহমান মোল্যা, রশিদ খান, আমজাদ ফকির, কামরুল ইসলাম, সজিবুল শেখ, আলামীন মোড়ল, জাহাঙ্গীর বিশ্বাস প্রমুখ। অপরদিকে নোয়াকাটি বাজারে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাহস ইউনিয়ন আ’লীগের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল শেষে মিষ্টি বিতরণ ও আতশবাজী ফোটানো হয়। পরে বাজার চত্বরে ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি শেখ আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে বক্তব্যদেন, নির্মল কুমার দেবনাথ, আকরাম হোসেন মোল্যা, গোপাল চন্দ্র দে, আশীষ কুন্ডু, মোঃ হায়দার আলী শেখ, মোল্যা জাহিদুল ইসলাম, শিলা রানী মন্ডল, অজেদ আলী শেখ, নুরমোহম্মদ মোড়ল, বিল্লাল মোল্যা, শফিকুল শেখ, খান আবুল বাসার, শংকর গাইন, আজগর আলী সানা, আব্দুল জলিল শেখ, যুবলীগ নেতা মোঃ শাহাজালাল মোড়ল, হাসনা হেনা হাসি, ছাত্রলীগের মোঃ হাসানুর রহমান শেখ, আবু হাসান, আশিক প্রমুখ।#