টাইমস ডেস্ক :
পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির জন্য কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে উদ্বোধন করেন তিনি।
এর আগে সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মাতীরের রূপপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প এলাকায় যে জায়গায় নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর তৈরি হবে, সেখানে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি কর্ণিক দিয়ে নিজে হাতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের’ উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করছে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের যুগে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩২তম দেশ হিসেবে নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হলো।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পৌর এলাকার প্রধান সড়কসহ ১৭ কিলোমিটার পথজুড়ে তোরণ নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। পাশাপাশি রূপপুর প্রকল্প এলাকায় বৃক্ষ রোপণসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করা হয়েছে।
বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। এর আগে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক প্রকল্প এএসই গ্রুপের প্রকৌশল বিভাগ রোসাটম স্টেট অ্যাটোমিক এনার্জি কর্পোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. আলেকজান্ডার খাজিন, রোসাটমের মহাপরিচালক আলেকজি লিখাচেভ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস উসমান। এ সময় রাশিয়া ও ভারতসহ ১০ দেশের অতিথিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী সুইচ টিপে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রের মূল পর্বের প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের শুভ উদ্বোধন করবেন।
জানা যায়, এই প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশি কর্মী মিলে প্রায় এক হাজারের বেশি কর্মী দিন-রাত কাজ করছেন। এ প্রকল্পের জন্য থ্রি প্লাস রিঅ্যাক্টর বসানো হয়েছে। যেটি বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তি। যা শুধু রাশিয়ার একটি বিদ্যুকেন্দ্র রয়েছে। আর বাংলাদেশের রূপপুরেই হবে দ্বিতীয় ব্যবহার।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মাধ্যমেই পাওনিয়ার বেইজ ও ইরেকশন বেইজের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া চলছে প্রটেকশন ড্যাম (বাঁধ) তৈরির কাজ। ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার লম্বা এবং ১৩ মিটার প্রস্থ এ বাঁধের কাজও এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা ছিল। কিন্তু সেটি পর্যাপ্ত না হওয়ায় এরই মধ্যে আরো ৮০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ২১৯ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
এ ছাড়া নতুনভাবে অধিগ্রহণ করা পদ্মার বিশাল চরে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। মূল প্রকল্প এলাকার বাইরে গ্রিনসিটি আবাসন পল্লী নির্মাণের কাজ অনেকটাই শেষ পর্যায়ে। পাবনা গণপূর্ত অধিদফতর এগুলো বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যেই তিনটি সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এ এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা ১১টি বিল্ডিং এবং ১৬ তলা ৮টি বিল্ডিংয়ের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ২২টি সুউচ্চ বিল্ডিং তৈরি হবে এ চত্বরে। এ ছাড়া থাকবে মাল্টিপারপাস হল, মসজিদ ও স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
১৯৬১ সালে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৬২-১৯৬৮ পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার পদ্মা পাড়ে রূপপুরকে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রের স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। তখন কেন্দ্রটির জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ভূমি উন্নয়ন, অফিস, রেস্ট হাউস, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ও কিছু আবাসিক ইউনিটের নির্মাণ কাজ আংশিক শেষ করা হয়। শুরুতে ২০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকার তা বাতিল করে দেয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যদিও পরবর্তিকালে বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার সেই বিদ্যুকেন্দ্রের মূল কাজের উদ্বোধন করা হলো।