খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষে ভর্তিকৃত নবাগত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। তিনি বলেন বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের অফুরন্ত ভান্ডার, যার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। এখানে শিক্ষার শেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শেখায় কীভাবে শিখতে হবে, শিক্ষকবৃন্দ কেবল জ্ঞানের দরজা ফাঁক করে দেন, সে দরজা খোলার দায়িত্ব, প্রবেশের যোগ্যতা অর্জনের দায়িত্ব শিক্ষার্থীর। জ্ঞানকে কেবল সার্টিফিকেট দিয়ে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। পরিবর্তনশীল বিশ্বে সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে বেশি দূর অগ্রসর হওয়া যাবে না। এ জন্য কোর্স-কারিকুলা ভিত্তিক লেখাপড়ার সাথে নতুন নতুন বিদ্যা, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়লে মানুষ উদার হয়, অসাম্প্রদায়িক হয়, সৃজনশীল হয়, মানবিক হয়, মুল্যবোধ সম্পন্ন হয়, দেশপ্রেমিক হয়। তিনি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের শতভাগ দেশপ্রেমিক হওয়ার আহবান জানান। তিনি আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস জানার আহবান জানিয়ে এ প্রসঙ্গে বলেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী না জানা, না পড়া অন্যায়, পাপ। তিনি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেরকে আমাদের শহীদদের রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে শহীদদের স্বপ্ন পূরণে, প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে দেশ সেবার আহবান জানান। তিনি মাদক ও জঙ্গীবাদকে দেশের অন্যতম বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন মাদক একটি পরিবারকে ধংস করে দিতে পারে। জঙ্গীবাদকে ভ্রান্ত ধারণা ও আদর্শ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন অন্যায়ভাবে মানুষ মেরে, জোর করে কখনো ধর্ম গ্রহণ করানো যায় না।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন জাতীয় সঙ্গীত একটি দেশের অত্যন্ত পবিত্র বিষয় এবং এর পিছনে অনেক ইতিহাস থাকে। কতো মূল্য দিয়ে তা অর্জন করতে হয় তা আমরা জানি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি নানা ঘটনা, ইতিহাসের তথ্য-উপাত্ত, নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সারগর্ভ বক্তব্য রাখেন যা নবাগত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত জীবন চলার পথে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথা অনুযায়ী নবাগত শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান ও পরে বক্তব্য রাখেন। উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সর্বতভাবে কাজ করছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার বিশেষ দিক এবং অর্জিত সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন আমরা ১ জানুয়ারি শিক্ষাবর্ষ শুরু করে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২টি টার্ম সম্পন্ন করছি যা অন্যকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্ভব হয়েছে বলে জানা নাই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণার মানোন্নয়নে শিক্ষক মÐলীর আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন আমরা সম্মিলিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
নবাগত শিক্ষার্থীদেরকে তিনি স্বাগত জানিয়ে বলেন তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান তাদের পরিবার এবং দেশের কাজে লাগানোর আহবান জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন খুবির ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওরিয়েন্টেশন আয়োজক কমিটির সভাপতি প্রফেসর এ কে ফজলুল হক। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. সাবিহা হক, আইন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ ওয়ালিউল হাসনাত, জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর এ কে ফজলুল হক, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমেদ, বিজ্ঞান প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল হক, সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. শাহনেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহমেদ, চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান স্ব স্ব স্কুল ও ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম রফিজুল হক। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. আশীষ কুমার দাস, নবাগত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুভ‚তি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন আইন ও বিচার ডিসিপ্লিনের ছাত্র সুষ্মিত সাইফ আহমেদ এবং সিনিয়রদের পক্ষে বাংলা ডিসিপ্লিনের মিতা দাস। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি ইউজিসির চেয়ারম্যানকে ক্রেস্ট উপহার দেন উপাচার্য। এছাড়া সন্ধ্যায় ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের উদ্যোগে বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক ও নির্মাতা একুশে পদক বিজয়ী তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘সীমান্তরেখা’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছিলে উপাচার্য তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে ইউজিসির চেয়ারম্যানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। উল্লেখ্য, এবার ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য ৬টি স্কুল ও ১টি ইনস্টিটিউটের আওতায় ২৮টি ডিসিপ্লিনে মোট ১২০৪ জন নবাগত শিক্ষার্থী এই ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি #