নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য খুলনা শিপইয়ার্ড লিঃ এ নির্মিত ২য় ব্যাচের ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট্ এর একটি বানৌজা শহীদ দৌলত এর লঞ্চিং অনুষ্ঠান সোমবার (১৪ ফেব্রæয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (ম্যাটেরিয়েল) ও খুশিলি বিওডি’র ভাইস চেয়ারম্যান, রিয়ার এডমিরাল এম শফিউল আজম, এনইউপি, এনডিসি, পিএসসি। এছাড়াও কমান্ডার খুলনা নেভাল এরিয়া, কমফ্লোট ওয়েস্ট সহ অন্যান্য উধ্বর্তন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রমতে, বানৌজা শহীদ দৌলত একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ। এর আকার আয়তন অপেক্ষাকৃতভাবে কিছুটা ছোট হলেও এর সক্ষমতা অধুনা বিশ্বে ব্যবহৃত স্টেট অব দা আর্ট টেকনোলজি সম্বলিত অন্যান্য যুদ্ধ জাহাজের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এই জাহাজে রয়েছে আধুনিক সামরিক সক্ষমতা যেমন ১টি ৪০/৬০ মি.মি. বফরস্ গান এবং ২টি ১২.৭ মি.মি. মেশিন গান। বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক বিশাল সমুদ্র এলাকা লাভ করেছে।
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ বিশাল সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অর্জিত এ সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা, সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের নিমিত্তে এই ধরণের যুদ্ধ জাহাজের বিকল্প না। দেশের মাটিতে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিতব্য প্রায় ৫৩২ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রথম জাহাজটির লঞ্চিং এর মধ্য দিয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডের প্রগতিশীল উন্নয়নের ধারায় আরেকটি ঐতিহাসিক অধ্যায় সূচিত হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য ২য় ব্যাচের এই ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট্ খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃক সিএসওসি, চায়না এর কারিগরী সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে। এই জাহাজে ব্যবহৃত আধুনিক প্রযুক্তি এবং সুক্ষাতিসূ² নির্মাণ কৌশল এ শিপইয়ার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা ক্যাপাসিটি এনহ্যান্সমেন্ট এ যথেষ্ট অবদান রেখেছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মধ্যে ২য় ব্যাচের ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট্ বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। উপরোক্ত জাহাজ ৫টি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযোজনের মাধ্যমে নৌবাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।

বানৌজা শহীদ দৌলত (প্যাট্রোল ক্রাফট্ -১) এর সাধারণ বৈশিষ্ট হচ্ছে, সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৫১ দশমিক ৬৫ মিটার, প্রস্থ ৭ দশমিক ৫০ মিটার, গভীরতা ৪ দশমিক ২০ মিটার, ড্রাফট ১ দশমিক ৯৫ মিটার, ডিসপ্লেসমেন্ট ৩০৭ টন, সর্বোচ্চ গতি ২১ নট, জনবল ৩৩ জন, এনডুরেন্স ১৫০০ নটিক্যাল মাইল এবং ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি হচ্ছে চায়না ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি (সিসিএস)।
শহীদ দৌলত (প্যাট্রোল ক্রাফট্ -১) এর নেভিগেশনাল ও কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট এর মধ্যে রয়েছে, ২ x নেভিগেশন র্যাডার (জেআরসি, জাপান), ১ x জাইরো কম্পাস (এ্যানসুজ, জার্মানি), ২ x ইকো সাউন্ডার (জেআরসি, জাপান), ১ x জিপিএস (জেআরসি, জাপান), ২ x এইচএফ সেট (কোডান, অস্ট্রেলিয়া) এবং ২ x ভিএইচএফ/ ইউএইচএফ সেট (আইকম, জাপান)।
শহীদ দৌলত (প্যাট্রোল ক্রাফট্ -১) এর মেশিনারীসমূহ জার্মান, ইংল্যান্ড ও ইউকে থেকে সংযোজন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, ২ x প্রধান ইঞ্জিন (প্রতিটি ৩০৪১ হর্স পাওয়ার, এমটিইউ, জার্মানি), ২ x জেনারেটর (১১৮ কিলোওয়াট, ক্যাটারপিলার, ইংল্যান্ড), ১ x ইমারজেন্সি জেনারেটর (৪৯ কিলোওয়াট, ক্যাটারপিলার, ইংল্যান্ড), ২ x প্রপালশন সিস্টেম (তেইনব্রিজ, ইউকে)।
জানা গেছে, বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড আজ হতে প্রায় ৬৫ বছর আগে তার যাত্রা শুরু করে। আশির দশকে এক পর্যায়ে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড লোকসানের মুখে পড়লে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূর প্রসারী সিদ্ধান্তে ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে হস্তান্তরের পর হতে মৃতপ্রায় এ প্রতিষ্ঠানের হৃত গৌরব পুণরুদ্ধার হয়। এ ইয়ার্ড আজ ক্রমান্বয়ে উন্নয়নশীল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এর নীট মুনাফা ৪৩.২২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
বিগত দিনে, এ ইয়ার্ড যুদ্ধ জাহাজ সহ সর্বসাকুল্যে ৭৭৫টি জাহাজ নির্মাণ ও ২৩৬৩টি জাহাজ মেরামতের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। ইয়ার্ডটি দেশের মাটিতে প্রথম যুদ্ধ জাহাজ অর্থাৎ ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট্ (ব্যাচ-১) এবং ২টি লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট্ তৈরী করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সফলভাবে হস্তান্তর করেছে। এরই ধারাবাহিকতায়, গত বছরের ১৯ মে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট্ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর এর সাথে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।