নিউইয়র্কের পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

0
883

টাইমস রিপোর্ট: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে সপ্তাহব্যাপী সরকারি সফরে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট শুক্রবার সকালে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। নিউইয়র্কে যাওয়ার পথে লন্ডনে যাত্রাবিরতি করবেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডন থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি নিউইয়র্ক যাবেন। রোববার স্থানীয় সময় ১টা ৪০ মিনিটে নিউইয়র্কের লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে তার। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দরে অর্ভথ্যনা পর্ব শেষে একটি সুশোভিত মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে প্রধানমন্ত্রীকে নিউইয়র্কের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের মিডটাউনের হোটেল হিলটনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠেয় ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক হাই-লেভেল ইভেন্টে যোগদান করবেন। সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করবেন তিনি।

পরে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ইকোসক চেম্বারের (ইসিওএসওসি) ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফ্যুজিস আয়োজিত ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফ্যুজিস : এ মডেল ফর গ্রেটার সলিডারিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন’ শীর্ষক হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘ সদরদপ্তরের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। তিনি হোটেল গ্রান্ড হায়াতে যুক্তরাষ্ট চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত গোলটেবিল মধ্যাহ্ন ভোজেও অংশ নেবেন।

ওইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটেও বক্তৃতা প্রদানের কথা রয়েছে। নিউইয়র্কের কনভেন কনফারেন্স সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইমপ্যাক্ট সামিট’-এও তার যোগদানের কথা রয়েছে।

শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদরদপ্তরের কনফারেন্স রুম ১১-তে কানাডার প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ গ্রহণ করবেন। তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূতের আয়োজনে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ৩ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠেয় ‘মেকিং ইমপসিবল পসিবল : আনলকিং হিউম্যান পটেনশিয়াল থ্রু দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স ফ্যাসিলিটি ফর এডুকেশন’ শীর্ষক হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।

ওইদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত স্বাগত সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করবেন। সংবর্ধনাটি নিউইয়র্কের লোটিস্থ নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে আয়োজন করা হবে।

শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশ গ্রহণ করবেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিএ) যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩ নম্বর কক্ষে এটির আয়োজন করবে।

ওইদিন তিনি সাধারণ পরিষদ ভবনের নর্থ ডেলিগেট লাউঞ্জে জাতিসংঘের মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে যোগদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বিকেলে জাতিসংঘ মহাসচিবের হাই-লেভেল ইভেন্ট ‘অ্যাকশন ফর পিস কিপিং’ (এ ফোর পি)-এ অংশগ্রহণ করবেন তিনি।

২৬ সেপ্টেম্বর ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্দি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি মঘেরনিনি জাতিসংঘ সদরদপ্তরের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন কক্ষে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একইস্থানে প্রধানমন্ত্রী এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সচিবালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ১২ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠেয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কিত হাই-লেভেল সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।

ওইদিন প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচি আন্তোনিও গুতেরেজের সঙ্গে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে তার সভাকক্ষে বৈঠক করবেন। আন্তর্জাতিক কমিটি অব রেডক্রসের (আইসিআরসি) প্রেসিডেন্ট পিটার মওরারের জাতিসংঘের দ্বিপাক্ষিক সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

একইদিনে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেওর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এছাড়া ‘নারীর ক্ষমতায়মের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক হাই-লেভেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটি লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্টের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ইন্টার প্রেস সার্ভিসেস (আইপিএস) আয়োজিত সংবর্ধনাতেও যোগদানের কথা রয়েছে।

ওইদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশনে ভাষণ প্রদান করবেন এবং নিউইয়র্কের পার্ক অ্যাভেনিউয়ে গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন আয়োজিত বার্ষিক নৈশভোজে যোগ দেবেন।

অন্যান্যবারের মত এবারো সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ প্রদানের পরের দিন, ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের নিউইয়র্কস্থ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন বিকেলে শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের একটি বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগামী ১ অক্টোবর সকালে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন হয়ে দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে বলে তার প্রেস সচিবের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বাসস।
—————–