# ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যাওয়ার চেস্টা
কামরুল হোসেন মনি:
নগরীতে তিন সন্তানের জননী তাসমিন জাহান বেগম নামে এক গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ধামা চাপা দেয়ার জন্য আত্মহত্যা চেষ্টা চালাচ্ছেন নিহতের স্বামী। স্বামী আমিনুর রহমান দ্বিতীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ডের অন্যতম কারণ। যার কারণে লাশটি ময়নাতদন্ত না হওয়ার চেষ্টা চালান নিহতের স্বামী। মৃতের শরীরে আঘাতে চিহৃ রয়েছে। হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে যাওয়া চেষ্টা।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেরটার দিকে নগরীর শেরে বাংলা রোডে ৩১১/৪ সোলায়মান লেনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ তাসমিন জাহান মৃত্যু গোপন রেখে খুমেক হাসপাতালে তার হার্ট অ্যাটাকের তথ্য সরবরাহ করেন।
বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ইএমও) জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এ প্রতিবেদককে বলেন, যখন গৃহবধু তাসমিন জাহানের লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তখন আমাদেরকে বলেন, হার্ট অ্যাটাক করেছেন। লাশটি যখন দেখতে যাই তখন বিষয়টি ধরা পড়ে ওই গৃহবধূর গলায় দাগ রয়েছে। তখর ওদের ধমক দিয়ে বলা হয় মিথ্যার আশ্রয় কেন নিচ্ছেন।
তখন তারা তারাহুরা করে লাশ নেয়ার চেষ্টা চালান। ওই সময় তাদেরকে কড়া ভাষয়া বলা হয় থানার থেকে (ক্লিলিয়ারেন্স) প্রত্যায়নপত্র নিয়ে না আসলে লাশ হস্তান্তর করা হবে না। তখন তারা লাশ রেখে চলে যান।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, নিহত গৃহবধূ তাসমিন জাহান এর স্বামী মোঃ আমিনুর রহমান কিছু দিন আগে আবারও বিয়ে করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবেদ লেগেছিল। তিনি জানতে পারেন মৃতের শ্বাশুড়ী ঘরের দরজা বন্ধ দেখে তার মেয়েকে ডাকদেন। পরবর্তীতে ডাকাডাকি করার পর ঘরের ভেন্ডি লেটার ভেঙ্গে প্রবেশ করেন। তখন তার জানালার সাথে লাশ দাড়িয়ে ছিল। ময়নাতদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না এটি হত্যা না আত্মহত্যা। গৃহবধুর পরিবার পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দিলে তা নেয়া হবে।
জরুরি বিভাগে ওয়ার্ড বয় খলিল রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে গৃহবধূ তাসমিন জাহান হাসপাতালে আনা হয়, তখন জানায় সে হার্ট অ্যাটাক করেছে। যখনই লাশটি কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখেন তখনই ঘারটি হেলে পড়ে। তখন তার গলার কাপড় সরালে দাগের চিহৃ পাওয়া যায়।
শুক্রবার রাত সোয়া ৭টার দিকে ওই নিহত গৃহবধু তাসনিম জাহান বেগমের বাসায় গেলে তার স্বামী মোঃ আমিনুর রহমান বলেন, তার স্ত্রী হার্ট ও মাথায় সমস্যা রয়েছে। ঘটনার দিন তিনি বাসায় ছিলেন বলে দাবি করেন। তিনি ৮-৯ মাস আগে রূপসা উপজেলায় বাসিন্দা মুক্তি নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। তিনি ওইখানে ছিলেন। তিনি বলেন, রাত ১ থেকে দেড়টার দিকে ঘরের দরজা বন্ধ করে তার স্ত্রী আত্মহত্যা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। কোন সারা শব্দ না পেয়ে তার মা ও মেয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে ঝুলানো অবস্থায় দেখেন। কিন্তু তার এই কথার সাথে বাস্তবে কোন মিল খুজে পাওয়া যায়নি। যে ঘরের দরজা ভাঙ্গার কথা বলেন, ওই দরজার ভাঙ্গা চিহৃ পাওয়া যায়নি, এমন যে জানালার সাথে ঝুলানো অবস্থায় ছিল দাবি করা হচ্ছে সেই জানালের সাথে আত্মহত্যা করা যেতে পারে এমন কোন আলামত দেখতে পাওয়া যায়নি। কিভাবে জানালের সাথে একজন আত্মহত্যা করতে পারেন এমন প্রশ্ন করা হলে স্বামী আমিনুর রহমান বলেন, সবাই মনে করেছে সে জানালার সামনে দাড়িয়ে ছিল। ঝুলানোর অবস্থায় ছিল না। কি ভাবে হলো বুঝতে পারছি না। তার স্ত্রীর ভাই নুরুল ইসলাম তাজুর যোগাযোগের নাম্বার চাওয়া হলে তার কাছে নেই বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে জানান, ওই গৃহবধুর তাসমিন জাহান বেগমের তিন সন্তানের জননী। ছোট মেয়ে আফরিন আক্তার বিথী এবার জেসএসসি পরীক্ষা দেবে। বড় মেয়ে আফসানা আক্তার বুলু বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছেলে নুরুজ্জামান সাকিব মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন।
সম্প্রতি ওই তাসমিনের স্বামী আমিনুর রূপসা এলাকার বাসিন্দা মুক্তি নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। এই বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর সাথে প্রায় ঝগড়া হয়। তাকে প্রচন্ড মারধর করতো। তার কোন হার্টের সমস্যা নেই। নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বৃহস্পতিবার তার স্বামী মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় তাসমিন ওই রাতে রূপসা যান। ওই খানেই স্বামীর সাথে তার খুব ঝগড়া বিবাদ ঘটে, ওই সময় তাসমিনকে মারধর করেন। যে মহিলাটি ফরেজগার ছিল সে কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনার এমন কোন আলামত তার ঘরের মধ্যে পাওয়া যাই। যার কারণে লাশটি ময়নাতদন্ত না হওয়ার খুব জোর তদবির চালিয়ে ছিলেন। এলাকাবাসীর সোচ্চার থাকায় তা আর পারেনি।
নিহতের স্বামী আমিনুর রহমানের ভাগ্নে রাধুনী মালিক মোঃ মামুন বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীর সাথে সখ্যতা রয়েছে। বটিয়াঘাটা উপজেলার ৬নং বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বিরাট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমানের কন্যা নিহত গৃহবধূ তাসমিন জাহান বেগম। ##