দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হলেও সহসা কাটছে না গ্যাস সঙ্কট

0
183

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতির কারণে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শিল্প-কারখানাগুলোর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আবাসিক গ্রাহকরাও গ্যাস সঙ্কটে তীব্র ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু সহসা এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। মূলত জাতীয় গ্রিডে আমদানীকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর এ পরিস্থিতি বজায় থাকবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। কারণ বর্তমানে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। ফলে এ মুহূর্তে স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি সংগ্রহের কোনো পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার নেই। আর আমদানি কমায় জাতীয় গ্রিডেও এলএনজির সরবরাহ কম। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম ১৪ ডলারের (প্রতি এমএমবিটিইউ) আশপাশে ওঠানামা করছে। এ মুহূর্তে এতো উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনে সরবরাহ করার কোনো পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার নেই। ফলে চলতি বছরের বাকি সময়টুকু পর্যন্ত গ্যাসের সঙ্কট থাকবে। তবে শীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাস ব্যবহার এমনিতেই কমে যায়। তার মধ্যে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কমলে সঙ্কটও কমে আসবে। বাংলাদেশ সাধারণত স্পট মার্কেট ও জি-টু-জি চুক্তির ভিত্তিতে এলএনজি সংগ্রহ করে। জাতীয় গ্রিডে স্থানীয় পর্যায়ে উত্তোলিত গ্যাসের পাশাপাশি আমদানীকৃত এলএনজি সরবরাহ হওয়ার কথা দৈনিক ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তুচলতি বছরের শুরুতেই এলএনজির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। তার ধারাবাহিকতায় জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় গ্রিডে এলএনজির দৈনিক সরবরাহ কমতে থাকে এবং দিন দিন সরবরাহ ঘাটতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
সূত্র জানায়, জাতীয় গ্রিডে চলতি মাসের প্রথম দিনে ৬৯৪ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে। পরদিনই তা ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট কমে সরবরাহ ৬০২ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসে। এভাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ কমেছে ১০৬ মিলিয়ন ঘনফুট। মূলত স্পট মার্কেট থেকে স্বল্প মূল্যে এলএনজির কিনতে না পারায় এমন সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে এলএনজি সরবরাহ করা হবে। তার আগে সঙ্কট কাটবে না। তবে এলএনজি সরবরাহ বাড়াতে নতুন করে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হচ্ছে এবং ওই লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সঙ্কটকালীন বণ্টন ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেলেও দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আওতায় ৮০টিরও বেশি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে তার অর্ধেক। ফলে দেশের শিল্প খাতের উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত এপ্রিল থেকেই দেশের শিল্পখাত গ্যাসের চাপস্বল্পতায় ভুগছে। বিশেষ করে শিল্প এলাকায় নির্ধারিত চাপের কম গ্যাস সরবরাহ হওয়ায় উদ্যোক্তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছে। শিল্প অধ্যুষিত গোটা গাজীপুর এলাকায় গত এপ্রিল থেকে কম-বেশি গ্যাসের অপ্রতুল চাপ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তাতে পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র খাতের সুতা-কাপড় উৎপাদনকারী কারখানাগুলোকে ভুগতে হচ্ছে। গাজীপুরের টেক্সটাইল মিলগুলোর গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআইয়ের পরিবর্তে এখন ৩-৫-এ নেমে আসে। যদিও সঙ্কট মোকাবেলায় বড় স্পিনিং, উইভিং ও ডায়িং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিলগুলোয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু ওসব মেশিনারিজের নিরাপদ ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন নিজস্ব খরচে অবকাঠামো নির্মাণ করে গ্যাস দিয়ে অত্যাধুনিক জেনারেটর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের মাধ্যমে মিল পরিচালনা করছে। ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের জন্য গ্যাসই হচ্ছে মুখ্য জ্বালানি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশকিছু মিলে উৎপাদন চালু রাখাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি এলএনজি সরবরাহ সংকট প্রকট হওয়ায় রাজধানীর আবাসিক শ্রেণির গ্রাহকরা গ্যাস সঙ্কটে ভুগছে। মূলত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে শুরুতেই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। তারপর শিল্প গ্রাহকদের। আর সবচেয়ে কম প্রাধান্য পায় আবাসিক গ্রাহকরা।
এদিকে এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ জানান, জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সঙ্কট থাকতে পারে। তিতাসের নিজের যে চাহিদা তা থেকে গ্যাস অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। মূলত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সংগ্রহ করতে না পারায় সঙ্কট বেড়েছে। তিতাসের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৭০০-৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে জিটিসিএল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ৫০০-৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।