বিমল সাহা : দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মহানগর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন হয়নি। দলের শীর্ষ নেতারা একাধিক পদে বহাল থাকায় নতুন করে কেউ পদে আসতে পারছে না মহানগরে। ২০০৬ সালে করা জেলার আহবায়ক কমিটি এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। খুলনায় আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটির তৎপরতা ধীরে ধীরে কমে আসছে। বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক কর্মকান্ডে অংশ নেয়া ছাড়া তেমন কোন কার্যক্রম নেই। দলকে শক্তিশালী করতে হলে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতারা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, একাই তিনটি পদে রয়েছেন মহানগর সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মোশাররফ হোসেন। তিনি একই সাথে মহানগর সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রিয় সহ-সভাপতি ও নগর আওয়ামী লীগের সদস্য। মহানগর সাধারণ সম্পাদক জেড এ মাহামুদ ডন নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেও এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে পদ ত্যাগ করেননি। অপরদিকে ২০০৩ সালে সম্মেলন ছাড়াই জেলায় তিন বছরের জন্য ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি করা হয়। ২০০৫ সালে এই কমিটির সদস্য বাড়িয়ে ৫১ জন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এই কমিটির মেয়াদ ২০০৬ সালে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত নতুন করে সম্মেলন হয়নি। এই কমিটির তিন জন যুগ্ম আহবায়কের মধ্যে দু’জন মারা গেছে। আহবায়ক মালিক ছরোয়ার ও একমাত্র যুগ্ম আহবায়ক মোতালেব হোসেন জেলার কর্ণধার। যদিও মালিক ছরোয়ার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে জেলা ও মহানগরের একাধিক নেতাকর্মি দীর্ঘ দিন দল করা সত্বেও মূল্যায়ন পায়নি। তাই অনেকেই নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ অন্য সহযোগী সংগঠনে যোগ দিয়েছেন। অনেকে দল ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন।
দলের শীর্ষ নেতাদের দাবী খুলনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই তারা দলের সাথে জড়িত। এই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তারা দীর্ঘ দিন শ্রম দিয়েছেন। তারা মনে করেন যোগ্য নেতৃত্ব না পাওয়ায় নতুন করে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তবে চলতি বছরের মধ্যে সম্মেলনের করা সম্ভব না হলেও দলে নতুন যোগ্য নেতৃত্ব যোগ হবে।
খুলনা মহানগর সভাপতি আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন বলেন, নগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ কোন লাভজনক পদ নয়। তাই সমস্যা হয় না। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক মূল দলে পদ পাওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তিনি কম সময় দিতে পারছেন।
তিনি দাবী করে বলেন, খুলনা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আমরা ফাউন্ডার হিসেবে কাজ করছি। তাই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচন করে সম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে চাই। তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ভিতরে নগরের সম্মেলন দেওয়া হবে।
জেলার যুগ্ম আহবায়ক মালিক ছরোয়ার বলেন, ২০০৩ সালে যখন সম্মেলন হয় তখন জেলার মূল দলে আমি সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক ছিলাম। আমাকে জেলায় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৮ ও ২০১২ সালে আমি নতুন করে জেলায় সম্মেলনের জন্য চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বর্ষাকাল শেষ হলেই জেলার সম্মেলন আয়োজন করা হবে। এব্যাপারে কেন্দ্র থেকে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।
খুলনার সাংগঠনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত ও কেন্দ্রিয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. তাপস পাল জানান, খুলনা মহানগর ও জেলায় সম্মেলনের নতুন করে সম্মেলন হয়নি। নির্বাচনরে আগে সেটা নাও হতে পারে। তবে নিস্ক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে দলে নতুন নেতৃত্ব যোগ হবে। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শীর্ষ নেতাদের একাধিক পদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একাধিক বড় পদে থাকা সংবিধান পরিপন্থি। কিন্তু কেউ পদত্যাগ না করলে তখন সমস্যা হয়।
খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অন্তর্গত ৫টি থানার মধ্যে সোনাডাঙ্গা ও খালিশপুর থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। সদর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানায় আহবায়ক কমিটি রয়েছে। মহানগররের ৩৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় ৩০টিতে পূর্ণাঙ্গ ও ৬টিতে আহবায়ক কমিটি রয়েছে বলে দাবী করেন দলের সভাপতি।
অপর দিকে জেলার অন্তর্গত ৯টি উপজেলার মধ্যে ৬টিতে পূর্ণাঙ্গ ও ৩টিতে আহবায়ক কমিটি রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি রয়েছে বলে দাবী করেন জেলার আহবায়ক মালিক সরোয়ার।
আজ স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। দিনটি উদযাপনের লক্ষ্যে পৃথকভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে নগর ও জেলা শাখা। দলীয় কার্যালয়ে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সন্ধ্যায় কেক কেটে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন। জেলার প্রতিটি থানায় পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠা বার্ষিক পালন করা হবে। এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলার আহবায়ক মালিক সরোয়ার।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৬ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় শেখ মোশাররফ হোসেনকে সভাপতি ও জেড এ মাহমদু ডনকে সাধারণ সম্পাদক মনোনিত করা হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সদর থানার সম্মেলনে অংশ নেয়ায় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে মৌখিক ঘোষণা দিয়ে সরে যান জেড এ মাহমুদ ডন। তখন থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তমাল কান্তি ঘোষ। পরে ৫ থানার নেতৃবৃন্দের অভিযোগে ভিত্তিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পুনরায় জেড এ মাহমুদ সাধারণ সম্পাদকের দায়ীত্ব পালন করছেন।