নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা জেলার অন্তর্গত ডুমুরিয়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রাম। প্রত্যন্ত এই গ্রামে ১৯৬৯ সালের ২রা মার্চ পঞ্চরাম মন্ডল আর আয়নামতি রাণীর অভাবের সংসারে জন্ম নেন ছোট শিশু তিমির। দারদ্রের চরম জাঁতাকলে পিষ্ট সেই তিমিরই এখন ওই এলাকার আলোকবর্তিকা। একে একে গড়ে তুলছেন স্কুল-কলেজসহ নানা জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। যা দিনে দিনে আলো ছড়াচ্ছে।
প্রকৌশলী তিমির মন্ডল জানান, খুব ছোটবেলাতেই দেখে এসেছেন দারিদ্রতার আসল রূপ। যে কারণে মানুষের সামান্য কষ্ট তাকে ব্যতিত করে। ছোটকাল থেকে স্বপ্ন দেখে বড় হয়েছেন প্রতিকূল শৈশবের মত শৈশব যেন কাউকে বরণ করতে না হয়। কোন পিতাকে যেন সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়তে না হয়। যা তাকে একাজে প্রেষণা দেয়।
তিনি জানান, শিক্ষাই পারে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে । তাই তিনি শিক্ষার বিস্তারে কাজ করে চলেছেন। নানা পৃষ্ঠপোষকতায় নিজ এলাকায় গড়ে তুলছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার সুফল ভোগ করে করছে শিক্ষার্থীরা। অবহেলিত সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যও নির্মাণ করেছেন আলাদা স্কুল। নারী শিক্ষার ব্যাপারেও আছে তার সজাগ দৃষ্টি। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী শক্তিকে বঞ্চিত রেখে সমাজের বৃহৎ কল্যাণ কখনই সম্ভব নয়। যে জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন জিলের ডাঙার মাতৃমন্দির। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন কালভার্ট, ব্রিজ, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানে ও সংস্কারের তিনি সর্বদা নিবেদিত।
এলাকাবাসী জানান, মির্জাপুর গ্রাম ও খড়িয়াগ্রামের মিলনস্থলে অবস্থিত মির্জাপুর মঠে নানা অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন তিমির মন্ডল। মা বাবার স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠা করেছেন পঞ্চরাম-আয়নামতি কল্যাণ ট্রাস্ট। যে ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয় বিভিন্ন সমাজ সেবা মূলক কার্যক্রম। সম্বলহীন, কন্যাদায় গ্রস্ত পিতা কে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ দিয়ে চলেছেন নিয়মিত। এছাড়াও এই ট্রাস্ট, নিঃস্ব পরিবারটিকে সাহায্য করছে তাদের আত্মীর শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে। ওই মঠে একটি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করেছেন, যেখানে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন পরিমাপ সহ শিশু, কিশোরী ও নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা প্রদান করে আসছে। খড়িয়া গ্রামের প্রবেশদ্বারে, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের এর কাজ তার তত্ত¡াবধানে অতি দ্রæত শুরু হবে।
এলাকাবাসী আরও জানান, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, পারিবারিক ভালোবাসা বঞ্চিত বয়োবৃদ্ধ লোকদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে এই মানুষগুলো যেনো জীবনের শেষ ক’টা দিন অন্তত সুখে, শান্ততে অতিবাহিত করতে পারে। সামাজিক অবক্ষয়ের ¯্রােতে পড়া যুব সমাজকে নৈতিক অধঃপতন থেকে দূরে রাখতে প্রতিষ্ঠিত মঠ মন্দিরে গীতা শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছেন। সনাতন ধর্ম পালনে সহায়ক এমন সব অবদান তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। মির্জাপুর মঠ থেকে প্রায় শ’ ফুটেক দূরে শ্মশানের আধুনিকায়ন ও চিতা সংস্কার করেছেন। “স্বর্গের গাড়ি” নামক বিশেষ যানের ব্যবস্থা করেছেন মৃতদেহ বহন ও সংরক্ষণের জন্য। তাছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্টানে অনুদান দেয়ার পাশাপাশি তিনি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মহামারিতে নিজ হাতে ত্রান সহায়তা অব্যহত রেখেছেন।
তিমির মন্ডল বর্তমানে এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ে সিনিয়র প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। তার সংসারে দুই কন্যা আর স্ত্রী। তাদেরকে সবসময় পাশে পেয়েছেন সমাজ সেবা এগিয়ে নিতে। তার পতœী ( দিপা মন্ডল) তাকে অনুপ্রাণিত করে পাশে থেকেছেন সময় অসময়ে। স্বামীর মতই তিনি মানবসেবায় আনন্দ পান। বাবা মার সুশিক্ষায় বেড়ে উঠা তিমির মন্ডলের শেষ ইচ্ছা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস টুকুও যেন মানবের কল্যাণে ব্যয় করতে পারেন। পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া আলোক প্রদীপের মত তিনি আলো ছড়িয়ে দিতে চান।