মীর খায়রুল আলম, দেবহাটা:
সাতক্ষীরা জেলার ভারত বাংলা সীমান্তে অবস্থিত দেবহাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত টাউন শ্রীপুর নামক গ্রাম। যেটি তৎকালীন বৃটিশ শাসন আমলে সাত জমিদারের বসতি ও বাংলাদেশের প্রথম পৌরসভা টাউন শ্রীপুর গ্রামে ১৯১৬ সালে কোলকাতা হাই কোর্টের এ্যড.বাবু শরৎচ্চন্দ্র রায় চৌধূরীর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় টাউন শ্রীপুর শরৎচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। যা চলতি ইংরেজি সালের দিনগুলো পার করে ১০১ বছরে উপনিত হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৫শতধীক শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। ইতোপূর্বে বিদ্যালয়টি বেশ সুনাম অর্জন করেছে। সর্বগুনে বিদ্যালয়টি বেশ যশ রয়েছে। তাছাড়া যশোর শিক্ষা বোর্ডেও ১ম স্থান অর্জন করেছে বিদ্যালয়টি। সে সময়ে র্নিমিত দুটি ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন তৈরীর হয়েছে। বিদ্যালয়টি ঔপনিবেশিক শাসন, পাকিস্তানের শোষণ-নিপীড়ন আর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়সহ তিনকালের স্বাক্ষী হয়ে শতবছর পূর্ণ করলো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৬ সালে যাত্রা শুরু করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেবহাটার ১০১বর্ষ বিদ্যালয়টির সাবেক ইংরেজি শিক্ষক দিলিপ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় উপমহাদেশের বিট্রিশ-বাঙালির শিক্ষা-দীক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রাম, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক জীবন্ত প্রতীক।
বিদ্যালয়ের বর্তমান সিনিয়র শিক্ষক উত্তম রায় চৌধুরী জানান, উপমহাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ভারতের টাকিতে যেতে হত। ১৯৩৯ সালে দিকে নৌকা যোগে যাওয়ার পথে নদী পথে দূর্ঘটনায় প্রায় ১৫ জনেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যু হয়। এতে এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। যার কারনে শরচ্চন্দ্র নিজ উদ্যোগে উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের সিন্ধান্ত নেন। তার উদ্যোগে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় এবং তারই নামে নামকরণ করা হয়।
১৯৮৫ সালে এমপিওর অনুমতি দেয়। অবিভক্ত বাংলার যে ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিল এর মধ্যে শরচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়টি রয়েছে বিশেষ সারিতে। ইংরেজ আমলের অবিভক্ত বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ও প্রচারের জন্য অসামান্য খ্যাতির অধিকারী বিদ্যালয়টিতে টাউনশ্রীপুর, ভাতশালা, সুশিলগাঁথী, দেবহাটা, বসন্তপুর, নাংলাসহ বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।
গাছগালাছি, পাখ-পাখালিতে ভরা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্যে ঘেরা নয়নাভিরাম এই ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৫জন শিক্ষক, ৪জন শিক্ষিকা, ৫জন কর্মচারি কর্মরত রেেয়ছ। জমিদারি স্থাপত্যের যেন এক অনন্য নিদর্শন এই বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি।
এই খ্যাতিজোড়া প্রতিষ্ঠানে বহু খ্যাতিমান পন্ডিত, গবেষক ও জ্ঞানতাপসের ছোঁয়া রয়েছে। এখানে পড়েছেন একাত্তরের বীর বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রাণালয়ের উপ-সচিব সলিমুল্লাহ, ৯নং সেক্টরের প্রতিষ্ঠাতা ও সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার, বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আহম্মেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডার ও লেখক খলিলুর রহমান, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামসেদ আলম, বর্তমান ঢাকা বাড্ডা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক, সাবেক এনসিসি ব্যংকের পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, বর্তমান মেহেরপুর গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উজ জামান, উপজেলা জাতীয়পার্টির সাধারন সম্পাদক ও সাবেক সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল ফজল, বর্তমান সদর ইউপি চেয়রম্যান আবু বকর গাজীসহ এদেশের অসংখ্য রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে নামকরা আরো অনেকে। এদিকে, ১০১ বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ২৮ ডিসেম্বর জমকালো অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। নিবন্ধিত হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক।
১০১বর্ষ উদযাপন কমিটির আহŸায়ক বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রাণালয়ের উপ-সচিব সলিমুল্লাহ জানান, একশত একবর্ষের এই উৎসবে বিদ্যালয়টির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতুহল কাজ করছে। আশা করছি বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে প্রাণ ফিরে পাবে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিণত হবে এক মহামিলন মেলায়। তিনি আরো বলেন, আমার বিদ্যালয়টির উৎসব পালনের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছি। তাছাড়া বিদ্যালটিতে আরো সাফল্য বয়ে আনতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকবে।
১০১বছরের বিদ্যালয়টি বর্তমানে শিক্ষা-দিক্ষা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিসহ কোন কিছুতেই থেমে নেই। সব কিছুতে বিশেষ অবস্থান করে নিয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রীড়া নৈপূর্ণতায় জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যয়ে এনে দিয়েছে অসংখ্য সাফল্য বললেন বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক হাসান রেজা মুকুল। তাছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি মাদক প্রতিরোধে সাপ্তাহিক, মাসিক বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগীতার ব্যবস্থাও রয়েছে।
বিদ্যালয়েলর প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১০১বর্ষপূর্তি উদযাপনে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ। আনন্দর্যালী, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, স্মৃতিচারণ, আলোচনাসভা, পুরস্কার বিতরণী, রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি এসময় তিনি আরো বলেন, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় টাউনশ্রীপুর শরচ্চন্দ্র নিজেই একটি ইতিহাস। এই বিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশ-বিদেশে। তাই আমরা ১০১বর্ষপূর্তি উৎসব নিয়ে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আশা করছি সকলের সহযোগিতা পেলে শান্তিময় পরিবেশে আরেক ইতিহাস রচনা হবে।’