ঝালকাঠিতে জেলের জাল ‘ভরছে’ ইলিশে

0
654

ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালীতে গত এক সপ্তাহে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জালে ধরা পড়া ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশের ঝিলিক দেখে জেলেদের মুখে ফুটেছে হাসি।
ঝালকাঠি জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৭ কিলোমিটার প্রবাহমান সুগন্ধা আর বিষখালীর ৩০ কিলোমিটার মিঠা পানিতে প্রতি বছর প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়ে। প্রায় সারা বছরই এই দুই নদীতে জেলেরা ইলিশ শিকার করেন।
সুগন্ধা-বিষখালীর ইলিশ স্বাদে-গন্ধে অনন্য। তাই এখানকার ইলিশ দেশের বিখ্যাত বলে দাবি করেন জেলেরা। ভরা মৌসুমে নদীতে জাল ফেললেই জেলেরা ছোট বড় ইলিশ পেয়ে থাকেন। সারা বছর ইলিশ ধরা পড়লেও আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। তবে ডিসেম্বরেও প্রচুর ইলিশ জালে আটকা পড়ে।

মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, সুগন্ধা-বিষখালীর ইলিশ পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। দেশ ছাড়িয়ে ভারতেও রপ্তানি হয় ঝালকাঠির ইলিশ।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুগন্ধার দীর্ঘ এই ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে বেশির ভাগ জেলেই ইলিশ শিকার করেন ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, কলেজ খেয়াঘাট, নলছিটির বারইকরণ, সরই, মাটিভাঙা, বহরমপুর, চরবহরমপুর, ষাইটপাকিয়া ফেরিঘাট, নলছিটি লঞ্চঘাট, পুরানবাজার, সুজাবাদ, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সারদল, কংসারদীঘি, কুমারখালী ও দপদপিয়া পুরনো ফেরিঘাট এলাকায়। বিষখালী নদীর ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে জেলেরা দিয়াকুল, বাদুরতলা, ভবানীপুর, বাদুরতলা, বড়ইয়া, পালট, শৌলজালিয়া, আওরাবুনিয়া, চল্লিশকাহনিয়া এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাল ফেলে ইলিশ শিকার করেন।

জেলেদের বেশির ভাগই নদীর দুই তীরের বাসিন্দা। ক্রেতা ও পাইকাররা অনেক সময় তরতাজা ইলিশ কিনতে নদীর তীরে এসে বসে থাকেন। জেলেরা মাছ শিকার করে বাড়ি ফেরার পথেই বিক্রি হয়ে যায় অর্ধেকেরও বেশি ইলিশ। বাকি ইলিশগুলো শহর ও গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে বিক্রি করা হয়।
জেলেরা জানান, নদীতে বর্তমানে ৩০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুই-আড়াই কেজিরও ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর একটু বড় ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।

ঝালকাঠি শহরের বড় বাজার, চাঁদকাঠি চৌমাথা বাজার, নলছিটি লঞ্চঘাট বাজার, পুরাতন বাজার, কুমারখালী বাজার, রাজাপুরের বড়ইয়া বাজার, বাদুরতলা বাজার ও মীরের হাটে বছরের সবসময়ই পাওয়া যায় ইলিশের দেখা। মৌসুমের সময় দাম কম থাকে এসব বাজারে। বাকি সময় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয় ইলিশ।
নলছিটি জেলেপাড়ার বাসিন্দা যুধিষ্ঠির দাস জানান, নদীতে সারা বছরই ইলিশ পাওয়া যায়। সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় বাদ দিয়ে তারা দিন-রাত নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরেন। মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে জালে। তাজা ইলিশ নদীর তীরে বসেই অনেকে কিনে নিয়ে যান।

যুধিষ্ঠির আরও জানান, প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ১০ কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। বরিশাল থেকে মাছের আড়তদাররা এসে এখান থেকে ইলিশ কিনে নেন। সেই ইলিশ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। অনেক সময় ভারতেও পাঠানো হয় সুগন্ধার সুস্বাদু ইলিশ।

চরবহরমপুর এলাকার জেলে আবুল কালাম জানান, সুগন্ধার ইলিশ খেতে খুবই সুস্বাদু। আশপাশের এলাকার মানুষ সারা বছরই সুগন্ধার ইলিশ খেতে চান। ইলিশ ধরতে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জোয়ারের শুরুতে জাল ফেলেন তারা। ওই সময় মাছগুলো একত্রিত হয়ে ছোটাছুটি করে। সময়মতো জাল ফেলতে পারলে প্রতি নৌকায় ১০ থেকে ১৫ কেজি করে ইলিশ পাওয়া যায়।
মাটিভাঙা এলাকার জেলে রবিউল ইসলাম জানান, মৌসুমের শুরুতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। একটি জাল ফেলতে সময় লাগে ২০ মিনিট, আর তুলতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। সব মিলিয়ে এক ঘণ্টায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে।
ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বলেন, ‘সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেব করে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে টানা ২২দিন নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা নদীতে নামতে পারে না অভিযানের ভয়ে। সুগন্ধা-বিষখালীর মিঠা পানির ইলিশ খেতে সুস্বাদু। তাই স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে ইলিশ কিনছে জেলেদের কাছ থেকে।’

‘ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার জলসীমায় প্রতি বছর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জেলার সুগন্ধা ও বিষখালী নদী থেকে ৯৮৮ মেট্রিক টন এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১০৭৫ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়ে। বর্তমান অর্থবছরের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।’