জীবনের পড়ন্ত বেলায় নীঁড়ের খোঁজে কপিলমুনির পত্রিকা পরিবেশক মোমিন

0
342

শেখ নাদীর শাহ্:
মোঃ আব্দুল মোমিন গাইন (৫৮)। পেশায় ক্ষুদ্র পত্রিকা পরিবেশক। বর্তমান ঠিকানা উপজেলার হরিঢালীর উত্তর সলুয়াস্থ ছেলেদের খুপড়ি ঘরের বারান্দা। জীবনের প্রায় দু’যুগ কাটিয়েছেন পত্রিকা বিলি করে। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবধি পায়ে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন, হরিঢালী ও কপিলমুনির প্রত্যন্ত এলাকায়। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে স্বামী-স্ত্রীর সংসার। তবে বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মত পা চলেনা। টায়ার-টিউব ও ব্রেকহীন পুরনো বাইকটিও পড়ে আছে বছর দু’য়েক।
মোমিনের আক্ষেপ, সারাজীবন হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রমেও মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে পারলেননা। দু’ছেলে স্থানীয় স’মিল শ্রমিক বহু কষ্ঠে তারা কপিলমুনি ছেড়ে পাশের গ্রামের সলুয়ায় মাত্র ৩ শতক জমি কিনে সেখানে গড়ে তুলেছে দু’খন্ড খুপড়ি। শেষ বয়সে তাদের বরান্দাই একমাত্র ঠিকানা। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না দুর্দশার কথা শুনে একটি বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। তবে ঠিকানার সংস্থান হয়নি আজো। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী আশ্রয়হীন মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। মোমিনের জিজ্ঞাসা, তারও তো ঘর নেই তিনিও কি ঐ ঘরের দাবিদার? যদি দাবিদার হন তাহলে কার কাছে চাইবেন ঘর? গতকাল এমন আক্ষেপমাখা কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে। তিনি বলছিলেন, জীবনের সোনালী সময়ের প্রায় দু’যুগ কাগজের সেবা করে যাচ্ছি। লেখা-পড়াও জানিনা। তাই, সারাটা জীবন পরের খবরই বহন করে গেলাম। এবার আপনারা যদি আমাকে নিয়ে কিছু লিখতেন আর তাতে যদি কতৃপক্ষের চোখ পড়ে! চোখ পড়–ক আর নাইবা পড়–ক নিজেকে নিয়ে লেখা খবরে হাত বুলাতে চান মোমিন। মূলত বিবেকের তাড়নায় আজকের আয়োজন।
মোমিন জানান, তার পিতা মরহুম হাবিবুর রহমান গাইন ছিলেন একজন রেঙ্গুন যোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বহু যোদ্ধাকে ট্রেনিং করিয়েছেন। ছিলেন,বাংলাদেশ বেতারের একজন নিয়মিত বাদ্য শিল্পী। জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠা করেছেন, কপিলমুনি আনসার ও ভিডিপি ক্লাব। পিতার মৃত্যুর পর ৫ ভাই ও দু’বোনের সকলেই কপিলমুনিস্থ বসত-বাড়ীর জমিটুকু বিক্রি করে যার যার মত বিভিন্ন জায়গায় মানবেতর বসবাস করছেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাবে ছেলে-মেয়েদের কেউই পিতার পথ অনুসরণ করতে পারেনি।
মোমিন জানান, দু’ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ৩ শতকের খরিদা জমির উপর খুপড়িই তাদের একমাত্র ভরসা। ছেলেরা খেতে দেয় কিনা জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, একান্নুবর্তী পরিবার ছেড়েছেন সেই কবে! তারাও শ্রমজীবি স্বল্প আয়ের মানুষ। ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু পারেনা। বলতে বলতেই চোখ মুছেন মোমিন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় আজীবন পত্রিকার সেবক মোমিন গাইনের আশ্রয়ের ঠিকানা কে দেবে। মুজিববর্ষে নিরাশ্রয় মানুষের কাতারে মোমিনের দাবি, ভাল না হলেও চলবে-এক খন্ড ছোট্ট ঘর যদি জোটে।