আন্তর্জাতিক ডেস্কঃভারতের রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সের (আরকম) মাথার ওপর রয়েছে বিপুল অংকের ঋণের বোঝা। অনিল আম্বানির নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানটি সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে সে ঋণ হ্রাস করতে চাইছে। এর অংশ হিসেবে আরকম ৩ হাজার কোটি রুপিতে তাদের অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনা বিক্রি সম্পন্ন করেছে অনিলেরই বড় ভাই মুকেশ আম্বানির কোম্পানি রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেডের কাছে। খবর ইকোনমিক টাইমস ও টেলিকম এশিয়া।
গতকাল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দাখিলকৃত বিবরণীতে আরকম জানায়, তারা সফলভাবে ফাইবার অপটিক সম্পদের লেনদেন সম্পন্ন করেছে। রিলায়েন্স জিওর কাছে ১ লাখ ৭৮ হাজার কিলোমিটার ফাইবার স্ট্যান্ড হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে রিলায়েন্স জিওর কাছে মিডিয়া কনভারজেন্স নোড (এমসিএন) ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনা বিক্রি সম্পন্ন করেছে আরকম। একে জিওর কাছে ওয়্যারলেস সম্পদ বিক্রির প্রথম ধাপ মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রিলায়েন্স জিওকে গুনতে হয়েছে ২ হাজার কোটি রুপি।
ওয়্যারলেস স্পেকট্রাম, টাওয়ার, ফাইবার ও এমসিএন সম্পদ বিক্রি বিষয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে রিলায়েন্স জিওর সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছায় আরকম। চুক্তি অনুযায়ী, রিলায়েন্স জিওর কাছে ২৫ হাজার কোটি রুপি মূল্যের সম্পদ বিক্রি করবে আরকম। প্রসঙ্গত, ৪৬ হাজার কোটি রুপি ঋণ আরকমের কাছে বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরকমের কাছে সুইডিশ টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা এরিকসনের ১ হাজার কোটি রুপি পাওনা রয়েছে। বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও আরকম পাওনা পরিশোধ না করায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে এরিকসন। ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল (এনসিএলটি) ও ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী এরিকসনকে পাওনা পরিশোধে বাধ্য হচ্ছে আরকম। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এরিকসনকে ৫৫০ কোটি রুপি পরিশোধ করতে হবে।
ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে অপেক্ষাকৃত নতুন অপারেটর রিলায়েন্স জিও। দেশটির এ খাতে জিওর প্রবেশের দুই বছর পূর্ণ হয়নি এখনো। তবে এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক গ্রাহক বাগিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই গ্রাহক টানতে ভয়েস কল ও ডাটা সেবায় বিশেষ ছাড় দিয়েছে। এর ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানে জিওর গ্রাহক বেড়েছে। জিওর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরনো অপারেটরগুলোও ভয়েস কল ও ডাটা সেবায় ছাড় দিচ্ছে। এমন মূল্যযুদ্ধের কারণে অপারেটরদের বার্ষিক রাজস্ব কমছে। বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, ভারতের টেলিকম খাতে রিলায়েন্স জিওর আগমনে যে মূল্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। এ লড়াই প্রশমনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আগামী প্রান্তিকগুলোয় তা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সেলফোন অপারেটরগুলোর সমন্বিত বার্ষিক রাজস্বে (এজিআর)। তাদের মতে, চলতি বছর ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে সেলফোন অপারেটরগুলোর বার্ষিক রাজস্ব ৬ থেকে ৮ শতাংশ কমতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, আরকমের সম্পদ ক্রয়ের মাধ্যমে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে আরো শক্ত অবস্থানে পৌঁছাবে রিলায়েন্স জিও। এর ফলে দেশটির টেলিযোগাযোগ খাত আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস সম্প্রতি জানিয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক, ফিক্সড-লাইন টেলিকম নেটওয়ার্ক ও ডাটা সেন্টার বিক্রি বিষয়ে আই স্কোয়ার্ড ক্যাপিটাল, টিপিজি, ব্ল্যাকস্টোন ও ভার্ডের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে আরকম। উভয় পক্ষ আরকমের অবশিষ্ট সম্পদের মূল্য ১১০ কোটি ডলার নির্ধারণ করেছে।
ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে একসময় দ্বিতীয় বৃহৎ অপারেটর ছিল আরকম। তবে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এবং ধারাবাহিক লোকসানের কারণে টেলিকম ব্যবসা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।