বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিহরণে নানা সংকট চলমান থাকা সওে¦ও বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান সরকারের সাফল্যের রেকর্ড যথেষ্ট সন্তোষজনক। আওয়ামী লীগ নয় বছর আগে ক্ষমতাসীন হওয়ার সময় প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সামর্থ্য প্রত্যক্ষ করেছিল। সেখানে তারা বাড়িয়ে এখন ১৩ হাজারের বেশি মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। যদিও মোট চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে গ্রীষ্মের এই দাবদাহে দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে সমাজের প্রায় সর্বএ অনিয়ম ও র্দুনীতি বাসা বেধেঁছে। সরকার চাইলেও অনেক ক্ষেএে তা দূর করার ক্ষেএে অসহায়। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্য যে জাতি-রাষ্ট্র তাই বলে অদৃষ্টের ক্রীড়নক হতে পারে না। জনপ্রশাসন চাইলে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো অগ্রাধিকার খাতে অনিয়মের লাগাম টানতে পারে। বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে যা ঘটেছে তাকে নৈরাজ্যিক অবস্থার দৃষ্টান্ত হিসেবেই বিবেচনা করতে হয়। কিন্তু এখন আবার আমরা যখন অভিযোগ পাই যে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান সর্বনি¤œ দরদাতা হলেও সিলেট প্রকল্পে ৩৩ কিলোভোল্ট লাইনের খাম্বায় ব্যবহারের ইনস্যুলেটর সরবরাহের জন্য আরসা ইলেকট্রিক নামের এক প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে, যারা ইনস্যুলেটর তৈরি করে নাÑতখন হতাশ না হয়ে উপায় কী!
১০টি কাজের মধ্যে এই সংস্থা ৫টি কাজ পেয়েছে। আরেকটি ক্ষেএে ছাএলীগের সাবেক সভাপতির স্ত্রীর প্রতিষ্ঠান সর্বনি¤œ তিন দরদাতাকেই টেক্কা দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো সরকারঘেঁষা কোনো কোনো মহল ‘রাজনৈতিক প্রভাবে’ এমনভাবে কখনো কাজ বন্টন করছে, মনে হয় দেশে সরকারি ক্রয়নীতি বা আইনের শাসন বলে কিছু কার্যকর নেই। অতীতের সরকারগুলো বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এবং সে তুলনায় বর্তমান সরকার অপেক্ষাকৃত বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এই খাতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলার অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে।
এটা সত্য যে শুধু সর্বনি¤œ দরদাতা হলেই তারা আপনা-আপনি কাজ পাবে না, সরকারে ক্রয়নীতিতে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম কখন, কী কারণে হবে, আইনে তা নির্দিষ্ট করে বলা আছে। এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সেই সব র্শত পূরণ সাপেক্ষে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তার অকাট্য প্রমাণ আমরা পাই না। বরং আইনের শর্ত পূরণ নয়, তা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘনের ইঙ্গিতই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সর্বোচ্চ দরদাতাই শুধু নন, যেভাবে অনভিজ্ঞ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ ক্রয় আইন লঙ্ঘন করে কাজ দেওয়া হচ্ছে, তাতে একধরনের খামখেয়ালিপূর্ণ মনোভাবই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এসব ঘচন দুদক আইনে বিচার্য।
চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ঘাটতি এবং লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা এবং বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক গ্রাহকেরা কিছু ক্ষেএে সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। বিদ্যুৎ নিয়ে গণশুনানির যে উদ্যোগ দুদক নিয়েছে, তা নিশ্চয় ধন্যবাদার্হ। তাদের শুনানির কারণে ভুক্তভোগীদের কান্না পএ-পএিকায় ছাপা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেএে দুর্নীতির টাকা মামলা না করার শর্তে ফেরতের নজিরও তৈরি হয়েছে।
তবে দুদক আইনের আওতায় কঠোর হতে না পারলে গ্রাহক হয়রানি থেকে ভুক্তভোগীদের উল্লেখযোগ্য অংশই অবিচারের শিকার হতে থাকবে। চট্টগ্রামের গণশুনানিতে অংশ নেওয়া মনছুর আলম, যিনি টাকা দিয়ে পাননি, বরং তাঁর বাবাকে জেল খাটতে হয়েছে, সেই রকম লজ্জাজনক ঘটনা চোখের আড়ালে বিস্তৃত হতে থাকবে। দুর্নীতি বন্ধে রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা অপরিহার্য।