খুলনায় বাড়ছে নৃশংস হত্যাকান্ড

0
529

কামরুল হোসেন মনি:
খুলনায় বাড়ছে নৃশংস হত্যাকা-। ঘরে-বাইরে খুন হচ্ছে মানুষ। শোবার ঘর, আবাসিক হোটেলে ও বিল থেকে প্রতিপক্ষরা নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসে গত ২০ দিনে খুলনায় তিন জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছ প্রতিপক্ষরা। সর্বশেষ শুক্রবার (২০ জুলাই) ফরহাদ হোসেন শেখ ওরফে আপন (৩২) নামে এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েনে। তিনি নগরীর শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি এ নামে কোন কর্মচারী বর্তমানে নেই।
আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের ঠিকাদার এস এম গিয়াস উদ্দিন বলেন, ফরহাদ হোসেন নামে কোন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নেই। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ওই নামে কেউ চাকরি করেননি।
খালিশপুর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল খায়ের শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে জানান, নিহত ফরহাদ পূর্বে আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণিতে চাকরি করতেন। এখন চাকরি নেই। নিহতের বোন সাহানা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পুলিশ জানায়, খালিশপুরের আফজালের মোড়ে একটি বাসাবাড়িতে ফরহাদ হোসেন শেখ ওরফে আপন ভাড়া থাকতেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আপনের ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের সহায়তায় ঘরের তালা ভেঙে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যার পর বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত আপন রূপসা উপজেলার যুগিহাটী গ্রামের আব্দুস সামাদ শেখের ছেলে।
এর আগে গত ১১ জুলাই খুলনার দাকোপ উপজেলায় মো. নাসির সানা (৩৭) নামে এক জেলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন দুপুরে উপজেলার জয়নগর গ্রামের একটি বিল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই জেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নাসির সানা জয়নগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক সানার ছেলে।
পারিবারিক সূত্র ও পুলিশ জানায়, নাসির সানা ১০ জুলাই বিকেলে মাছ ধরার জন্য জয়নগর বিলে যান। কিন্তু রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। পরে বিলে হাত-পা বাঁধা ও গলাকাটা অবস্থায় নাসিরের লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। একই দিনে ১১ জুলাই সন্ধ্যায় নগরীর ব্যস্ততম সাতরাস্তা মোড় এলাকায় কয়েকজন কিশোর ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ নগরীর সাজেস টেকনিক্যাল কলেজের কম্পিউটার বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসানকে (২২) ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত মেহেদী হাসান নগরীর বাগমারা মেইন রোডের রাজমিস্ত্রি মামুন হাওলাদারের ছেলে।
একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনায় নগরবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। একটি খুনের ঘটনার রেষ না কাটতেই আরেকটি নৃশংস হত্যাকা- আলোচনায় আসছে। এছাড়া গত জুন মাসে খুলনা জেলা ও মহানগরীতে পাঁচটি হত্যাকা-, ১০টি ধর্ষণ এবং ১৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে ৫৩৮টি মামলা হয়েছে। গত ৮ জুলাই দুপুরে জেলাপ্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে খুলনা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত জেলাপ্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান।
সভায় জানানো হয়, জুন মাসে খুলনা মহানগরীর আট থানায় চারটি খুন, একটি রাহাজানি, আটটি চুরি, চারটি ধর্ষণ, একটি অপহরণ, আটটি নারী ও শিশু নির্যাতন এবং অস্ত্র আইনে তিনটিসহ ২৪৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। একই সময় জেলার নয় উপজেলায় একটি খুন, ছয়টি ধর্ষণ, ১০টি নারী ও শিশু নির্যাতন, একটি রাহাজানি এবং অস্ত্র আইনে তিনটিসহ ২৯১টি মামলা দায়ের হয়েছে। জুন মাসে বিভিন্ন অপরাধে মহানগরীসহ খুলনা জেলায় মোট ৫৩৮টি মামলা হয়েছে। মে মাসে বিভিন্ন অপরাধে মামলা দায়েরের সংখ্যা ছিল ৫১২টি।