খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ,  অগ্নিসংযোগ : পাঁচ মিলে পাওনা সপ্তাহের মজুরী

0
494

এম জে ফরাজী, খুলনাটাইমস :
খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত আট পাটকলে শ্রমিক অসন্তোষে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকরা পাটকলগুলোর উৎপাদন বন্ধ রাখায় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে খালিশপুর শিল্পাঞ্চল। গত বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) শুরু হওয়া কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কর্মবিরতির সপ্তমদিনে খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে সড়ক অবরোধ, টায়ারে আগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এদিন ক্রিসেন্ট, স্টার, ইস্টার্ণ, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলে শ্রমিকদের এক সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হলেও হয়নি প্লাটিনাম, আলীম ও জেজে আই জুট মিলে। ফলে প্লাটিনাম জুট মিল শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে। খুলেছে নোঙ্গরখানা। দুপুরে সেখানেই শ্রমিকরা খেয়েছে।
এদিকে, গত ৬ দিনে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য উৎপাদন বিঘিœত হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটানো শ্রমিকরা বলছেন, বকেয়া সব মজুরি এক সাথে না পাওয়া পর্যন্ত তারা কাজে ফিরে যাবেন না। শ্রমিক আন্দোলনের প্রথম ৭ম দিন মজুরি না পেয়ে দুপুরে প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকরা বিআইডিসি সড়ক অবরোধ করে। একই সাথে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। খালিশপুর জুট মিল শ্রমিকরাও নোঙ্গরখানা খুলেছে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলছেন, মজুরি না পেয়ে অর্থ সংকটে অতি কষ্টে দিন কাটছে। স্ত্রী, সন্তানের চাহিদা মেটানোতো দূরের কথা, তাদের তিন বেলা খাবার যোগানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। মিলে ৯ সপ্তাহ ধরে বিল দেয়া হয় না। এভাবে আর কতদিন চলবে। বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামতে হয়েছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের সাবেক সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে ফুসে উঠেছে। তারা মজুরিপ্রদানসহ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না। তিনি অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদানের দাবি জানান।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম ও যশোরের জেজেআই জুট মিল চালু থাকলে প্রতিদিন প্রায় ২২৫ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হতো। সেই হিসেবে গত ৬ দিনে ১ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন বিঘিœত হয়েছে। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা।
সূত্রটি জানায়, ৮টি পাটকলের ২৬ হাজার ৭১৮ জন শ্রমিকের ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। সবমিলিয়ে শ্রমিকদের পাওনার পরিমাণ ৪০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ৯টি পাটকলে বর্তমানে ২১ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২১৫ কোটি টাকা।
প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ’র সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, মজুরি না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটানো শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অথচ মিল কর্তৃপক্ষ বকেয়া টাকা প্রদানের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের কার্যকরী আহবায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া সব মজুরি এক সাথে পরিশোধ না করা পযন্ত কেউ কাজে ফিরে যাবে না।
আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন, মিলের শ্রমিকরা না খেয়ে রয়েছে। তাদের পরিবারে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে খালিশপুরে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সকল পাটকলের নেতারা ফুসে বেঠক করেছে। বেঠক শেষে বিজেএমসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে লিয়াজো কর্মকর্তার সাথেফু বেঠক হয়েছে। তিনি কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে কাজে যোগদান করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ শাহজাহান বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানে হিমসিম খেতে হচ্ছে।  বৃহস্পতিবার অন্যান্য মিলে এক সপ্তাহের মজুরি দিলেও প্লাটিনামে আর্থিক সংকটের কারণে দেয়া সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা গাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, শ্রমিকদের পাওনার পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা। উৎপাদিত কিছু পণ্য বিক্রয় করা হয়েছে। বিক্রয়লব্ধ অর্থ পাওয়া গেলে পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়টি প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। দ্রæত শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।#