খুলনায় ছাত্রীকে উত্ত্যক্তর প্রতিবাদ করায় ভাইকে মারপিট : ১২ পুলিশ প্রত্যাহার

0
565

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস:
স্কুলগামী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও ব্যবসায়ীকে বেধরক মারপিটের অভিযোগে খুলনায় ১২ পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আহত ব্যবসায়ী তারেক মাহমুদের অবস্থা আশংকাজনক। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৯জানুয়ারি) সকালে বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদ বাইনতলা এলাকায় এঘটনা ঘটে।
তবে ঘটনার সাথে ৫ পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা হলেন, নায়েক জাহিদ ব্যাচ নং-(৪১৪), কনষ্টেবল নাইম (কং-২২০৮), কনষ্টেবল মামুন (কং-২০৯৭), কনষ্টেবল রিয়াজ (কং-৯৮৫) এবং কনষ্টেবল আবির (কং-১৬৮৩)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, খারাবাদ বাইনতলা এলাকায় যৌথ বাহিনীর ক্যাম্পের পাশে কলেজিয়েট গালর্স স্কুল রয়েছে। ওই স্কুলের ছাত্রীরা ওই ক্যাম্পের সামনে দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করার সময় পুলিশরা উত্ত্যক্ত করতো। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ছাত্রীরা স্কুলে যাওয়ার সময় ওই ৫ জন পুলিশ ক্যাম্পের ছাদে দাড়িয়ে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতে থাকে। পুলিশের অশালীন কথা সহ্য করতে না পেরে দশম শ্রেণীর ছাত্রী রাবেয়া খাতুন পাশেই তার ভাই তারেক মাহমুদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কেঁদে সমস্ত ঘটনা জানায়। এসময়ে তার সাথে আরো ৪/৫ জন স্কুল ছাত্রী ছিলো। তারাও কাঁদতে থাকে। তখন রাবেয়া খাতুনের ভাই তারেক মাহমুদ পুলিশ ক্যাম্পের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করে। ওই যুবক পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন ‘আপনাদেরতো মা-বোন আছে-আপনারা বাজে কথা কেন বলেন’। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে নায়েক জাহিদ তাকে ক্যাম্পের ছাদে আসতে বলে। তারেক মাহমুদ উপরে না উঠে তার কম্পিউটারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যান। তখন নায়েক জাহিদের নেতৃত্বে ওই ৫ পুলিশ সাদা পোশাকে তারেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যায় এবং তাকে টেনে হেচঁরে বের করে বেদম মারপিট করতে থাকে। এসময়ে পুলিশ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারসহ আসবাবপত্র ব্যাপক ভাংচুর করে। তখন আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা অস্ত্র উচিয়ে বলে ‘এখানে আসলে গুলি করা হবে’। এরপর তারেক মাহমুদকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে আরেকদফা অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এখবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গোলদার মিলন ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারেক মাহমুদকে উদ্ধার করে। তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসময়ে স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে ওই ইউপি চেয়ারম্যান ওসিকে খবর দেন। বটিয়াঘাটা থানার ওসি মোজাম্মেল হক মামুন ঘটনাস্থালে আসলে সাধারণ মানুষ এ অন্যায়ের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উত্ত্যপ্ত হতে থাকে। তখন ওসি ফোনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাঈমুল হককে ঘটনা জানান। তিনি দ্রুত সেখানে পৌঁছালে সাধারণ মানুষ ও স্কুল ছাত্রীদের অভিভাবকরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা বর্ণনা করেন। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সাথে সাথে ওই ৫ জনসহ ক্যাম্পের অবস্থানরত ১২ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
ছাত্রী রাবেয়া খাতুনের বাবা মুজিবর রহমান কেঁদে বলেন, ওই ক্যাম্পের পুলিশরা প্রতিদিনই মেয়েদেরকে বাজে কথা বলতো। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলের কি হাল করেছে। এরা কি মানুষ নাকি অন্য কিছু।
স্থানীয় বাইনতলা গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্কুলে যাওয়ার পথে ওই ছাত্রীকে উত্যক্ত করেন কনস্টেবল নাঈম। ছাত্রীটির সঙ্গে থাকা তার ভাই প্রতিবাদ করলে তাকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়। এতে উত্তেজিত হয়ে পড়ে গ্রামবাসী।’
স্থানীয় আমিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গোলদার মিলন বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনাটি ওসিকে জানাই। পরে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে বটিয়াঘাটা থানার ওসি মোজাম্মেল হক মামুন বলেন, ছাত্রীকে উত্যক্তের অভিযোগ সত্য নয়। তবে তরিকুল নামে এক ছাত্র পুলিশের সঙ্গে তর্ক করলে তার সঙ্গে একজন কনস্টেবলের হাতাহাতি হয়। পরে তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে মারধরের অভিযোগ করা হলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানানো হয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই পাঁচজন জনসহ ১২ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করেন।
খুলনার পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা বলেন, বটিয়াঘাটার বাইনতলায় পুলিশের একটি অস্থায়ী ফাঁড়ি রয়েছে। ওই ফাঁড়িতে দায়িত্বরত ১২জন পুলিশ সদস্যকেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া উত্যক্তের অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাঈমুল হককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।