কঠিন চ্যালেঞ্জের নির্বাচনে খুলনায় বড় দু’দলের হ্যাভিওয়েট প্রার্থী

0
467

বিশেষ প্রতিনিধি : আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি ) নির্বাচন বড় দুটি রাজনৈতিক দলের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে ভোটের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চাইছে বিরোধী দল বিএনপি। অপরদিকে ব্যাপক উন্নয়নের দাবিদার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে এই নির্বাচন মাঠের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি মর্যাদার ব্যাপার। যে কারণে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করিয়ে মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেককে। অপরদিকে বর্তমান মেয়রকে সরিয়ে সাবেক এমপি নহরুল ইসলাম মঞ্জুকে মেয়র প্রার্থী করেছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। এ অবস্থায় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরব হয়ে উঠেছে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গন।
আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। এই প্রথম বার দলীয় প্রতীক নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে যাচ্ছে। দলীয় প্রতীক এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। ফলে সিটি নির্বাচনের ফলাফল ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। বিশেষকরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপির কাছে আসন্ন কেসিসি নির্বচন অনেকটা কঠিন চ্যালেঞ্জের নির্বাচন। গত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে পরাজিত করেন। যদিও সেই নির্বাচনে হেফাজত ইসলাম ও আওয়ামী লীগের তীব্র কোন্দল খালেওে পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিলো। এই অবস্থায় হেফাজত ইসলাম এখন আওয়ামী লীগের সাথে এবং দলীয় কোন্দলের ব্যাপারে এবার শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ফলে এবারের নির্বাচন পূরতন সকল সমিকরণ পাল্টে দিতে পারে বলে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নানা হিসেব-নিকাশ ও বিশ্লেষনের মাত্রা ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুলনার মহানগরীর সব বয়স ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে সিটি নির্বাচনের আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে প্রার্থী নির্ধারনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। খুলনার প্রভাবশীলী রাজনীতিক নগর কমিটির সভাপতি তালুকদার আদুল খালেক সৎ ,পরিশ্রমি ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। তিনি রামপাল-মংলা থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কেসিসি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তিনি অনাগ্রহ ছিলেন বরাবরই। এ বিষয়ে গত একমাস পূর্বে তালুকদার আদুল খালেক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জাতীয় গুরুত্বপূর্ন উন্নয়ন কাজে জড়িত থাকায় তিনি কেসিসি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহি নন। এর পরও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবদিক বিবেচনা করে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। একই সাথে দলীয় মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ডেকে নিয়ে সকল বিভেদ ভুলে খালেকের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দলীয় বিরোধ থাকায় বিগত নির্বাচনে বেশ খেসারত দিতে হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগকে। শেখ হাসিনার সাথে খুলনার নেতা-কর্মীদের বৈঠকে এই বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যে কোন নেতা বা কর্মীর সম্পর্কে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান বা ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ পওয়া যাবে তাৎক্ষনিকভাবে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেশেষরা বলছেন,রাজপথের শক্তিশালী বিরোধী দল বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকে বাদ দিয়ে সংগঠনের নগর সভাপতি ও সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে মনোনয়ন দিয়েছে। প্রথমমত প্রার্থী পরিবর্তন সাধারণ মানুষের কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাহলে বর্তমান মেয়র মনি কি ব্যার্থ না তালুকদার আব্দুল খালেকের জনপ্্িরয়তায় বেড়েছে,এমন প্রশ্ন নানা মহলের। যদিও মঞ্জু একজন সু-বক্তা ও পরিশ্রমি নেতা হিসেবে দলীয় শিবিরে পরিচিত। এছাড়া খুলনা মহানগরী বিএনপির ঘাটি হিসেবে দাবি দলটির। তথাপি দলীয় অন্ত:কোন্দল মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়ে বিএনপির জন্য। খোদ মঞ্জুই দলের একটি বিশাল অংশের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পরেছেন। দলীয় প্রধান ছাড়া নেতায় নেতায় এই দ্ব›দ্ব নিরসন অনেকটাই কঠিন বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

উল্লেখ্য,আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ইতোমধ্যে ৫ মেয়র প্রার্থীসহ দুই শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়র পত্র দাখিল করেছেন। মেয়র প্রার্থীরা হচ্ছেন,আওয়ামী লীগ মনোনীত সংগঠনের নগর সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, বিএনপি মনোনীত নগর মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত অধ্যক্ষ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনোনীত দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু।