এমপিও ভুক্ত হয়েও চাকরী করছেন হাজী মালেক মাদ্রাসার শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন

0
830

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
খুলনা মহানগরীর লবনচরাস্থ হাজী আব্দুল মালেক ছালেহিয়া দারুচ্ছুন্নাহ এতিমখানায় সুপারিনন্টেড আলহাজ্ব মোঃ শাহাদাৎ হোসেন অনিয়ম দূর্নীতির সংবাদ প্রচারে সাধারন ছাত্র ছাত্রীরা আনন্দ প্রকাশ করেছে । নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও অভিবাবকগন এবং স্থানীয় সাধারন মানুষ দুর্ণিতীবাজ এতিমদের টাকা আত্মসাত মোঃ শাহাদাৎ হোসেনের অপসারন করার দাবী জানিয়েছেন । মোঃ শাহাদাৎ হোসেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সম্পাদক। একইসাথে নিবাসীদের সুপার এবং আরবী শিক্ষক । শিক্ষার্থীরা জানান, শাহাদাৎ হোসেন অধিকাংশ সময় ক্লাসে আসেন না ,ক্লাস রুমে এলেও তার নজর থাকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপর । ক্ষেত্র বিশেষ ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দেন এই আরবী শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন । একাই মাদ্রাসার তিনটি পদে থাকার সুবাদে তার ভয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বা এতিম নিবাসীরা কোন প্রকার টু শব্দ করতে পারছে না । নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক স্থানীয়রা কয়েকজন ব্যাক্তি জানান, হাজী আব্দুল মালেক ছালেহিয়া দারুচ্ছুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানাকে দুর্ণিতীবাজ এতিমদের টাকা আত্মসাতকারী মোঃ শাহাদাৎ হোসেন নিজের সম্পত্তি মনে করেন । এবং তার আচরনগত স্বভাব তেমন একটি ভালো নয় । হাজ্বী হয়েও যে ধরনের আচারন সাধারন শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসার সাথে সংশ্লিষ্ঠদের সাথে করেন বলেই তাকে পিছন থেকে পাজি ধরনের লোক বলে ডাকেন অনেকে । তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তাকে শাহাদাৎ নিজের গুন্ডা বাহিনী দ্বারা

 

হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনি কি এমপিও ভুক্ত আরবী শিক্ষক,জবাবে তিনি বলেন না আমি এমপিও ভুক্ত নই । এর পর এ প্রতিবেদক তাকে পুনরায় প্রশ্ন করেন, আপনি এমপিও ভুক্ত শিক্ষক আপনার ইনডেক্স নন্বরটা দেন । জবাবে তিনি বলেন,আমার মনে নেই ,তারপর তাকে প্রশ্ন করা হয় আপনি শিক্ষক হয়ে নিজের এমপিও ইনডেক্স নন্বর জানেন না তাহলে কি ভাবে আপনি ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস নেন । এ সময় তিনি বলেন, মাদ্রাসার আলমারীতে রয়েছে সময় করে মাদ্রাসায় এলে বলতে পারবো ইনডেক্স নন্বর । এই মাত্র আপনি বললেন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক নন তাহলে কি ভাবে ইনডেক্স নান্বার দিবেন। আমনি যে ভাবে মিথ্যা কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছেন তাতে আপনার আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সাটিফিকেট ভুয়া মনে হয় । আপনি ভূয়া নকল সাটিফিকেট দিয়েই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন,এ কথা বলায় শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আপনি আসেন পঞ্চাশ হাজার,হোক এক লক্ষ টাকা হোট যা লাগে আপনাকে দিবো আপনি আমার ভুয়া সাটিফিকেটের রিপোটটা বাদ দেন । প্রয়োজনে আমার নাম কেটে অফিস সহকারী আঃ রহিমের নাম দিয়ে রিপোট করেন । মাদ্রাসার যত অনিয়ম ও টাকা তছরুপ সবকিছুর সাথে রহিম জরিত আছে ।
তার অনৈতিক প্রস্তাবে প্রতিবেদক বলেন আপনি একজন হাজ্বী মানুষ হয়ে কিভাবে এমন কথা বলতে পারেন ,আপনারতো ইমান আমান বলতে কিছু নেই ,এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি উত্তেজিত কন্ঠে বলেন,আমার বিরুদ্ধে একহাজার রিপোট করেও আমার বাল ছিরতে পারবি না । এ সময় তিনি এমনসব অশালিন ভাষায় প্রতিবেদকে হুমকি প্রদান করেন যে ভাষা প্রকাশযোগ্য নয়। শাহাদাৎ হোসেনকে বার বার স্বরন করিয়ে দেয়া হয় আপনি একজন হজ্ব করা হাজ্বী ও আরবি শিক্ষক আপনার কথার ধরন শুনে মনে হয় আপনি সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকের ন্যায় কথা বলছেন,আপনি ভাষা সংযত করুন । আপনার মধ্যে কোন শিক্ষার আলো নেই অথচ আপনি এমপিও শিক্ষক । তখন তিনি আবারও বলেন আমি এমপিও ভুক্ত শিক্ষক নই । অথট তিনি ভূয়া সাটিফিকেট দিয়ে দিব্যি মাদ্রাসার শিক্ষক,সম্পাদক ও মাদ্রাসার এতিম নিবাসীদের সুপারিনন্টেড পদে রয়েছেন বহাল তবিয়তে ।

উল্লেখ, খুলনা মহানগরীর শিপইয়ার্ড লবনচরা এলাকায় ১৯৮৩ সালে হাজী আব্দুল মালেক ছালেহিয়া দারুচ্ছুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রতিষ্ঠার পর ২০০০ সাল থেকে এতিমখানায় নিবাসীদের মধ্যে ১৭জন শিক্ষার্থী সরকারের ক্যাপিটেশন গ্রান্ড সুবিধা প্রাপ্ত হয়। এমপিও ভুক্ত এ মাদ্রাসাটির শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে ১৬ জন । আর এই মাদ্রাসাটির আর্থিক পরিচালনায় নেই কোন স্বচ্চতা । আর এই অস্বচ্ছ আর্থিক অনিয়মের মুল হোতা মাদ্রাসার অফিস সহকারী আব্দুর রহিম । হাজি আব্দুল মালেক ছালেহিয়া দারুচ্ছুন্নাহ এতিম খানায় কাগজে কলমে ১৭ জন ছাত্র গ্রান্ড পেলেও বাস্তবে ছাত্র রয়েছে ১২জন। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতিমাসে ১৭ হাজার টাকা করে ৬মাস পর পর এক লক্ষ দুই হাজার টাকা এককালিন ক্যাপিটেশন গ্রান্ডের টাকা পেয়ে থাকেন । সে হিসেবে এতিমখানাটি তাদের নিবাসীদের জন্য প্রতি বছরে ২লক্ষ ৪হাজার টাকা ক্যাপিটেশন গ্রান্ড সুবিধা গ্রহন করেন । আর এই দুইলক্ষ ৪হাজার টাকাই নয় এতিমখানায় বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দান এবং চাঁদার রশিদ থেেেক আয় ব্যায়ের নেই কোন স্বচ্ছতা । মাদ্রাসার রেজিষ্টারে দেখা যায় ১-৭-২০১৩ সাল হইতে ৩০-৬-২০১৬ তারিখ পর্যন্ত নিরিক্ষা করা হলো । আর একসাথে এই তিন বছরের নিরিক্ষায় স্বাক্ষর করেন খুলনা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সমাজ সেবা অফিসার(রেজিঃ) শায়লা ইরিন । শায়লা ইরিন ১-৭-০১৩ থেকে ৩০-৬-২০১৬ ইং তারিখ নিরিক্ষা করছেন অথচ তার স্বাক্ষরে নিরিক্ষা তারিখ উল্লেখ আছে ৩০-৫-২০১৭ইং । অপরদিকে এতিমখানার সুপারিনন্টেড আলহাজ্ব মোঃ শাহাদাৎ হোসেন ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালে দায়িত্বে ছিলেন না অথচ খরচের রেজিষ্টারে আয় ব্যায়ের নিরিক্ষার ১৩ সাল থেেেক তার স্বাক্ষর রয়েছে । শাহাদাৎ হোসেন দাবী করেন আমি গত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে এতিমখানার নিবাসীদের দায়িত্ব পালন করছি । এর আগে রহমান নামে এক ব্যাক্তি নিবাসীদের দায়িত্ব পালন করছে । রহমান টাকা পয়সার অনিয়ম করায় তাকে অব্যাহতি দেয়ারপর আমাকে গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ১৭ তারিখ সুপারিনটেন্ড এর দায়িত্ব অর্পন করা হয় । রেজিষ্টার খাতায় ১৩ সাল থেকে ১৬ সালের আয় ব্যায় হিসাবের নিরিক্ষায় সুপারিনটেন্ড হিসেবে আপনার স্বাক্ষর রয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,সমাজ সেবা অফিসার ও আমাদের মাদ্রাসার অফিস সহকারী আব্দুর রহিম আমাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে । ক্যাপিটেশন গ্রান্ড এর ১৭/১৮ অর্থ বছরের হিসাবের বিষয় জানতে চাইলে তিনি একটি টালিখাতা বের করে দেখান । টালি খাতায় দেখাযায় মে ২০১৮ জমা ৫/৫/১৮ এবং ৫০৫৮০৭২নং চেক থেকে উত্তোলন ২৭০০০ টাকা,ফেরদোস স্যার জমা-৭৫০টকা, আবার ১৬-৫-১৮ এবং ৫০৫৮০৭২নং চেক থেকে উত্তোলর ২২০০০টাকা,আবার ২৬-৫-১৮ তারিখ এবং ৫০৫৮০৭২নং চেক থেকে উত্তোলন ২২৬০০টাকা,অপর আরেকটি সাদা কাগজে হিসাবে উল্লেখ আছে জানুয়ারী১ ৮ হইতে ১ জলাই পর্যন্ত সর্বমোট খরচ লেখা মাদ্রাসা সংস্কার ব্যায় ১লক্ষ ৯৪ হাজার দুইশত টাকা,বাজার খরচ ৫১ হাজার ৭০টাকা,বাবুর্চী ও সুপারের বেতন ১৫ হাজার ৫শ টাকা ,সর্বমোট ২লক্ষ ৬০হাজার ৭৭০টাকা । সুপারিনন্টেড আলহাজ্ব মোঃ শাহাদাৎ হোসেন মাদ্রাসার এমপিও ভ’ক্ত আরবি শিক্ষক হওয়া সত্বেও এতিমদের ক্যাপিটেশন গ্রান্ডের টাকা থেকেও বেতন নিচ্ছেন । এ সময় মোঃ শাহাদাৎ হোসেনকে প্রশ্ন করা হয় আপনি সরকারী এমপিও ভুক্ত শিক্ষক হয়েও কিভাবে এতিমখানার টাকা থেকে বেতন নেন । তিনি জানান আমি কোন টাকা নেই না খরচও করিনা প্রয়োজনীয় সময় আমার কাছ থেকে আঃ রহিম স্বাক্ষর নেয় । আপনি একজন আরবি শিক্ষক হয়ে খরচের হিসাব না দেখে কি ভাবে স্বাক্ষর করেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বিভিন্ন ভাবে এ প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন ।
এছাড়াও এতিম নিবাসীদের রেষ্টার নেই, আদায়কৃত ক্যাশ বহি পাওয়া গেলেও ২ বৎসর যাবৎ আয় ব্যায় রেজিষ্টারে লেখা হচ্ছে না, চাঁদা আদায়ের রশিদ বহি দ্বারা চাঁদা অনুদান আদায় করলেও স্বার তারিখ বিহীন আদায় করছেন, বিল ভাউচার সংরক্ষণ করা হয়নি, নিবাসীদের খাওয়া দাওয়ার কোন মেনু নেই এবং খাওয়া দাওয়ার মান সন্তোষ জনক নয়, বর্তমান কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাদাৎ হোসাইন পাশাপাশি তিনি এতিমখানার সুপারেন্টেনডেন্ট হিসেবে মোটা অংকের অর্থ বেতন নেন এবং তিনি হাজী আব্দুল মালেক ছালেহিয়া দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার এমপিও ভুক্ত আরবী শিক্ষক। ১৭ জন নিবাসীর বিপরীতে প্রত্যেক ৬ মাস পর পর ১ লক্ষ ২ হাজার টাকা বরাদ্দ পান সমাজ সেবা অধিদপ্তর খুলনা থেকে এবং এতিমখানার নামে আঞ্চলিক আদায় হয় প্রচুর অর্থ। যার কোন সঠিক হিসাব কমিটির কাছে নেই। এ এতিমখানার নিবাসীদের নামে আদায়কৃত টাকা এ ভাবেই বছরের পর বছর হরিলুট করে খাচ্ছেন সুপারিনন্টেড আলহাজ্ব মোঃ শাহাদাৎ হোসেন ও মাদ্রাসার অফিস সহকারী আব্দুর রহিম ।