আ. লীগের ভরসা উন্নয়ন, বিএনপির ভাবনায় ঘাঁটি

0
400

বিশেষ প্রতিনিধি : নির্বাচনী রাজনীতির হিসাবে খুলনায় বিএনপির ঘাঁটি। কেননা খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে এ পর্যন্ত একবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তবে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক গত নির্বাচনে তাঁর হারানো চেয়ার পুনরুদ্ধারে লড়বেন। আর বিএনপি ওই চেয়ার দখলে রাখতেই তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রার্থী করেছে। দুই বড় দলের এই ভোটযুদ্ধ নিয়ে আগাম হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে ভোটার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনী বোদ্ধাদের মাঝে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, আগের বারের ভোটের হিসাব নানা কারণে এবার পাল্টে গেছে অনেকখানি।

বিএনপি নেতা শেখ তৈয়েবুর রহমান এখানে একটানা ১৭ বছর মেয়র ছিলেন। তিনি টানা তিনবার জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক জয় পান। পরেরবার আবার খালেককে হারিয়ে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জয়লাভ করেন।

খুলনা সদরের সংসদীয় আসনেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ফল ভালো নয়। ১৯৭৩ সালের পর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান খুলনা সদর আসনে জয়লাভ করেন। খুলনার সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা নিয়ে খুলনা-২ এবং খালিশপুর ও দৌলতপুর নিয়ে খুলনা-৩ আসনের পুরো এলাকাই কেসিসির আওতাভুক্ত। এই দুই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই তাদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে দেখে।

সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তাদের উন্নয়নের রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে মানুষ তাদের সমর্থন দেবে আশা করছে। অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে, তাদের প্রার্থীকে জয়ী করে খুলনাবাসী সরকারের একরোখা ও অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের জবাব দেবে।

দুই দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও নির্বাচনী বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে ভোটের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তাতে পরিস্থিতি নিয়ে আগাম কিছু বলার সময় এখন হয়নি বলে মনে করছেন তারা। তবে কিছু পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। গত নির্বাচনের বাস্তবতা ও এবারের বাস্তবতার মধ্যে বেশ কিছু ফারাকও লক্ষণীয়।

দুই বড় দলের ভোট ব্যাংকে নিয়ামক শক্তির মধ্যে চিহ্নিত জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও হেফাজতের সমর্থনে পরিবর্তন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত নির্বাচনে জামায়াত ও হেফাজত বিএনপি প্রার্থীকে উভয় সিটিতেই একচেটিয়া ভোট দিয়েছে। এমনকি তাদের নেতাদেরও বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। মনে করা হয়, এ দুই দলের তৎপরতাই গত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে বড় ব্যবধান গড়তে সহায়তা করে।

কিন্তু এবারের পরিস্থিতি তেমনটা নেই। হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈরী সম্পর্ক এবার আর নেই। সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে অনেকটাই। সে ক্ষেত্রে তাদের ভোট একচেটিয়া বিএনপির ঘরে যাওয়ার অবস্থা আর নেই। বরং আওয়ামী লীগের বাক্সে হেফাজতের ভোট আসছে এমনটাই ধরে রেখেছেন নৌকা মার্কার সমর্থকরা।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক মাহবুব উল আলম সোহাগ বলেন, ‘খুলনায় বিএনপির প্রভাব বেশি ছিল, এখন তা নেই। খুলনাবাসী এখন উন্নয়নের রাজনীতিতে শামিল হয়েছে। বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামানের ব্যর্থতায় আবারও খুলনাবাসী আওয়ামী লীগ নেতা খালেককে বিজয়ী করতে মুখিয়ে আছে।’

মাহবুব উল আলম সোহাগ আরো বলেন, খুলনাবাসী এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত-সংস্কার, জলাবদ্ধতা নিরসন, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার দেখতে চায়। এই কাজে সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক খুবই সফল হয়েছিলেন। এ কারণে খালেক আবারও মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হবেন বলে তাঁরা আশাবাদী।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকও একাধিক সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, বিএনপি নেতা, বর্তমান মেয়রের ব্যর্থতায় তিনি জয়লাভ করবেন।

তবে বিএনপি নেতা মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুও তাঁর জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘খুলনা বিএনপির ঘাঁটি। খুলনাবাসী বিএনপি প্রার্থীকে বঞ্চিত করবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি খুলনাবাসীর সুখে-দুঃখে দীর্ঘদিন ধরে আছি। খুলনাবাসী আমাকে চেনে, জানে। তারা আমাকে বিজয়ী করবে। নির্বাচিত হলে আমি খুলনাবাসীর প্রধান সমস্যাগুলো সমাধানে নজর দেব। খুলনাকে একটি পরি”ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।’

কেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা চূড়ান্ত : কেসিসি নির্বাচনে কেন্দ্র ও বুথ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। গত বছরের তুলনায় এ বছর একটি কেন্দ্র ও একাধিক বুথ বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের খুলনা আঞ্চলিক দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। এরই মধ্যে একজন মেয়র প্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর মনোনয়ন দাখিল করেছে।

সূত্র জানায়, ২৮৯টি কেন্দ্রের এক হাজার ৫৬১টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। এতে চার হাজার ৯৭২ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিট্রেটের নেতৃত্বে পাঁচটি টিম নির্বাচনী আচরণবিধি রক্ষায় কাজ করছে। প্রতীক বরাদ্দের পর এ সংখ্যা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া কয়েক দিনের মধ্যে গুর“ত্বপূর্ণ ও অধিক গুর“ত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা করে সে অনুযায়ী ব্যব¯’া নেবে নির্বাচন কমিশন।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব দল ও প্রার্থীদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের জন্য নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’