আশাশুনিতে সুদের চক্রবৃদ্ধির চক্রে নিঃস্ব সংখ্যালঘু পরিবার

0
414

মইনুল ইসলাম, আশাশুনি থেকে:
আশাশুনিতে সুদের চক্রবৃদ্ধির চক্রে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার। এব্যাপারে ভুক্তভোগী লতিকা অধিকারী বাদী হয়ে শুক্রবার বিকালে আশাশুনি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, আশাশুনি উপজেলার ধান্যহাটি গ্রামের বাবলু অধিকারীর স্ত্রী লতিকা অধিকারী তাদের মৎস্য ঘেরের ব্যবসা মন্দা যাওয়ার কারণে স্থানীয় সুদের মহাজন আবদুর রশিদের স্ত্রী নাজমা বেগমের নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা সুদে নেয়। যা হাজারে দিন ১০ টাকা হারে আদায় করেন সুদ মহাজন নাজমা বেগম। জানাগেছে, প্রায় ২ বছর আগে উক্ত সুদের টাকা গ্রহণ করার পর থেকে অদ্যবধি প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা পৃথক পৃথক ভাবে সুদ দিয়েছে ভুক্তভোগী লতিকা অধিকারী। সুদের টাকা দিতে-দিতে বর্তমানে সব হারিয়ে ভিটাবাড়ী ছাড়া আর কিছুই নাই তার। তবুও সুদের মহাজন নাজমা বেগম সংখ্যালঘু লতিকা অধিকারীর নিকট সুদের সুদ, তার সুদ মোট কথায় চক্রবৃদ্ধিহারে মূল টাকাসহ বর্তমানে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দাবী করছে। শুক্রবার সকালে সুদের মহাজন নাজমা বেগম লতিকার বাড়ী উপস্থিত হয়ে বলেন, এক সপ্তাহ সময় দিয়ে গেলাম, এর মধ্যে ভিটাবাড়ী, গরু-ছাগল, হাস-মুরগী যা কিছু আছে বিক্রি করে তার পাওনা টাকা দিতে হুমকি দিয়ে যায়। অন্যথায় নাজমার কাছে থাকা দুই সেট বিলান নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে মোটা অংকের অর্থ লিখে কোর্টে মামলা দায়ের করবে বলে হুমকি দেয়। তার এই বে-আইনি সুদের চক্রবৃদ্ধির চক্রেপড়ে সর্বস্থ হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ধান্যহাটি গ্রামের কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার। সরেজমিন গিয়ে জানাগেছে, ধান্যহাটি গ্রামের তারক সরকারের ছেলে আশুতোষ সরকার ও তার বড় ভাই সুকলাল সরকারের স্ত্রী নমিতা সরকার জানান, তিন বছর পূর্বে নাজমার নিকট থেকে দুই ভাই ৩৫ এবং ৩০ হাজার টাকা সুদে নেয়। ৩ বছর কম-বেশি সুদের টাকা দেয় এবং তাদের মা যমুনা সরকারের নামীয় শেষ সম্বল ১৭ শতক ভিটে বাড়ির ১১ শতক সম্পত্তি নাজমার নামে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার পরও ২ ভাইয়ের কাছে বর্তমানে ৪ লাখ এবং ৮ লাখ মোট ১২ লাখ টাকা দাবি করছে। অনন্ত অধিকারির ছেলে তপন অধিকারি জানান, ২০ হাজার টাকায় ৭০ হাজার টাকা সুদ দেয়ার পরেও বর্তমানে সে ৭০ হাজার টাকা দাবি করছে। ধর্মদাশ চক্রবর্তীর ছেলে দেবব্রত চক্রবর্তী জানান, দেড় বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় আড়াই লাখ টাকা দেয়ার পরে সম্প্রতি আরও ৬ লাখ টাকা দাবি করছে সুদ মহাজন নাজমা বেগম। মৃত বাসুদেব সরকারের ছেলে প্রেমকুমার সরকার জানান, ১ভরি স্বর্ণ রেখে দেড় বছরে ১ লাখ ৯ হাজার টাকায় দেড় লাখ টাকা সুদ দেয়ার পরেও আরও ২ লাখ ১০ হাজার টাকা সুদ দাবি করছে সুদ মহাজন নাজমা বেগম। উল্লেখ্য, প্রত্যেকের নিকট থেকে নাজমা বেগম জামানাত স্বরুপ অলিখিত নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্প ও বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যাংক চেক নিয়ে রেখেছে। ধান্যহাটি গ্রামের একাধিক সংখ্যালঘু পরিবার এ প্রতিবেদককে বলেন সুদের সুদ, তার সুদ মোট কথায় চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের টাকা দিতে-দিতে বর্তমানে আমরা পথের ভিক্ষারী হয়েছি। ন্যায় বিচার না পেলে ঘরবাড়ী ফেলে হয়তো রাতের আধারে কোন একদিন পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। অভিযুক্ত নাজমা বেগমের সাথে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি। এব্যাপারে আশাশুনি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, ভুক্তভোগী পরিবারের নিকট থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।