আশাশুনি প্রতিনিধি:
আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের বদরতলায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক স্কুল ছাত্রী নিহত হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা ঘাতক ট্রাকসহ ড্রাইভার ও হেলপারকে বেদম মারপিট করে তাদেরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। মঙ্গলবার সকালে পারুলিয়া-আশাশুনি সড়কের বদরতলা নামক স্থানে এ দূর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত স্কুল ছাত্রীর নাম তিথী স্বর্ণকার (১৩)। সে উপজেলার কাটাখালী গ্রামের পরিমল স্বর্ণকারের মেয়ে ও বদরতলা জেসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। আশাশুনি বদরতলা জেসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৬ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত রয়েছে। স্কুলের ১৫ জন শিক্ষক ও ২জন কর্মচারী রয়েছে। যার মধ্যে ১০ জনই স্কুলের নিজ ক্লাস রুমেই এ প্রাইভেট বাণিজ্য করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় প্রাইভেট বাণিজ্য যাহা সকাল ৯.৩০টার সময় শেষ হয়। মজগুর খালী মহেন্দ্র নাথ মন্ডলের পুত্র অফিস সহকারি ঠাকুর চরণ মন্ডল ও বিষ্ণু পদ মন্ডল লাইব্রেরিয়ান হয়েও সকাল ৬টা থেকে শুরু করেন কোচিং বাণিজ্য, যাহা সরকারী নীতি পরিপন্থি। ৬ টার মধ্যে যদি কোন ছাত্র প্রাইভেটে হাজির না হতে পারে তাকে শুনতে হয় বিভিন্ন কথা বার্তা। ছাত্র-ছাত্রী প্রতি ৩শ টাকা করে মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে টাকা পরিশোধ না করলে তাদের প্রাইভেট রুমে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না বলে একাধিক অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা এ প্রতিবেদককে জানান। এ সময় ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকগণ আরও জানান, শিক্ষক নিতাই ও ইসমাইল ৬ষ্ঠ শ্রেণির প্রাইভেট পড়ান, ঠাকুর চরণ ও বিষ্ণুপদ ৭ম শ্রেণির, প্রদুত ৯ম শ্রেণির, সঞ্জয় ঘোষ দশম শ্রেণি, ল²ীপদ ঘোষ ৯ম ও ১০ম শ্রেণি, তরুন সরকার, ও তরুন গাইন, চন্দন ৮ম শ্রেণির সবাই ইংরেজি ও গণিত বিষয় প্রাইভেট পড়ান। ৭ম শ্রেণির একজন ছাত্র (নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক) জানান, ১শ ১৯ জন ছাত্র-ছাত্রীরকে বিষ্ণুপদ ও ঠাকুর চরণ ৩শ টাকা হারে ৬টা থেকে প্রাইভেট কয়েক দফায় পড়া শুরু করে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রাইভেট পড়ান। নাম (প্রকাশে অনেচ্ছুক) কয়েক জন ছাত্র জানান, প্রাইভেটের স্যারেরা তাদের প্রাইভেট ক্লাসে মনোযোগ সহকারে পড়ান, কিন্তু স্কুলের ক্লাসে কোচিং ব্যাণিজ্যের জন্য অমনোযোগী ভাবে দায়সারা ক্লাস নিয়ে চলে যান। তিথী স্বর্ণকার প্রতিদিনের ন্যায় তড়িঘড়ি করে প্রাইভেট পড়ার জন্য সাইকেলে স্কুলে যাওয়ার পথে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে। আটক ট্রাক ড্রাইভার সাতক্ষীরা সদরের পুষ্পকাটি গ্রামের শেখ মাহবুবুর রহমানের পুত্র নুর আমিন, তবে হেলপারের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তবে, তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুন কুমার গাইন ৬ থেকে প্রাইভেট পড়ার কথা স্বীকার করে সেটি সুকৌশলে এড়িয়ে কোচিং হিসাবে দাবী করেন এবং সকাল ১০টা থেকে স্কুল শুরু হলেও তিনি ৮টা থেকে ক্লাস শুরু হয় বলে ফোনটি কেটে দেন। এ ঘটনায় নিহতের পিতা পরিমাল র্স্বণকার কান্না ভেঙ্গে পড়ে জানান, বাড়ী থেকে সাড়ে ৫টার সময় বিষ্ণুপদ স্যার ও ঠাকুর চরণ স্যার এর নিকট প্রাইভেট যাওয়ার পথেই এঘটনাটি ঘটেছে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সকালে তিথী প্রাইভেট পড়ার জন্য বাইসাইকেল যোগে বাড়ী থেকে ভোর সাড়ে ৫টায় বের হয়ে প্রাইভেটে স্কুলে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে পারুলিয়া-আশাশুনি সড়কের বদরতলা নামক স্থানে পৌছালে সিমেন্ট ভর্তি একটি ঘাতক ট্রাক তাকে সামনের দিক থেকে ধাক্কা দেয় । এ সময় সাইকেল আরোহী তিথী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের চাকায় পড়ে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এব্যাপারে আশাশুনি থানায় ২৮৭/৩০৪খ ধারায় মামলা নং-(০৮)১৪-০৮-১৮। আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এঘটনায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন, আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফ্ফারা তাসনীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন।