আবাসিক হোটেলগুলোতে দেহ ব্যবসা জমজমাট মাদক সেবনের রুম ভাড়া হচ্ছে বিউটি পার্লার ও ভাড়া বাড়িতে অসামাজিকতা

0
1855

কামরুল হোসেন মনি:
দারিদ্রতা ও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে নারীরা অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদক বিক্রি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। মহানগরীর অর্ধশতের বেশি আবাসিক হোটেলে নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে যৌনাচার। এছাড়া নিরালা, বয়রা, খালিশপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিউটি পার্লার ও একাধিক ভাড়া বাড়িতে গড়ে উঠেছে মিনি পতিতালয়। চলতি মাসে নগরীতে কয়েকটি আবাসিক হোটেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কর্মকার অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করে। অভিযানে থেমে নেই হোটেলগুলোতে দেহ ব্যবসা। অসামাজিক এ দেহ ব্যবসা অসাধু কতিপয় পুলিশের মাসিক মাসোহারা চুক্তির ভিত্তিতে নিরাপদেই চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার দেহ ব্যবসার সাথে পুলিশের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার ঘটনাও ঘটেছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) এর মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সোনালী সেন বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আবাসিক হোটেলগুলোতেও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
খুলনা থানার ওসি মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, বিভিন্ন হোটেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনো হোটেলের বিরুদ্ধে অনিয়ম পেলেই তাদেরকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্র মতে, গত ২৫ জুন নগরীর প্রাণকেন্দ্র হোটেল আজম হোসেন ইন্টারন্যাশনাল থেকে ইনসান হোসেন মোল্লা (২৬) নামে এক মোবাইল শো-রুম মালিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই হোটেলের ৫০২নং রুম থেকে এ লাশের মুখ ও নিঙ্গ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার চিহ্ন পাওয়া যায়। এ ঘটনায় জড়িত কথিত প্রেমিকা মোসাঃ মরিয়ম ওরফে তানিয়াকে নড়াইল থেকে খুলনা সদর থানা পুলিশ আটক করেন। পরে আদালতে সে খুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ ঘটনার পর ‘দৈনিক প্রবাহ’ পত্রিকায় ‘আবাসিক হোটেলগুলোতে অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসেন। এর পর পুলিশ নগরীতে কয়েকটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে পুরুষ ও নারীসহ কয়েকজনকে আটক করেন। এর মধ্যে রয়েছে নগরীর পিকচ্যার প্যালেস মোড়ে হোটেল আর্কেডিয়া, হোটেল মুন, থানার সামনে হোটেল স্টার, হাদিস পার্কের সামনে হোটেল সুন্দরবন, নিরালা আবাসিক ও খানজাহান আলী থানার সোনালী জুট মিলের সামনে। এর আগেও ২০১৩ সালে হোটেল আজম হোসেন ইন্টারন্যাশনালে সদর থানা পুলিশের এসআই আকবর হোসেন অভিযান চালিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় এএসআই রিয়াজ ও কনেস্টেবল ফাহিমা বেগম ওরফে আফরিনকে হাতেনাতে আটক করেন। তৎকালীন ওসি শাহাবুদ্দিন আজাদ প্রথমে তারা বিবাহিত বলে অবহিত করলেও পরের দিন থানায়ই ৫ লাখ টাকা দেন মোহরানায় তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। ওই বছরে সোনাডাঙ্গাস্থ হোটেল মিলেনিয়ামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ যুবক ও এক যুবতীকে আপত্তিকর অবস্থায় গ্রেফতার করেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, নিউমার্কেটে প্রায় অর্ধশতাধিক এর বেশি কলগার্ল বিচরণ করে। এক শ্রেণির দালাল তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়। বয়রা এলাকার দুইজন মেয়ে নিউমার্কেট থেকে ক্রেতাদের সাথে কলগার্লদের কন্ট্রাক্ট করে দেয়।
সূত্র মতে, নগরীর হোটেল বসুন্ধরা, হোটেল আমিনা, হোটেল সোহাগ মিলন, হোটেল শাহীন, হোটেল কদর, হোটেল সুফি, খুলনা হোটেল, হোটেল আরাম, বৈশাখী হোটেল, সুন্দরবন হোটেল, হোটেল পার্ক, হোটেল আরাফাত, বরিশাল হোটেল, হোটেল মুন, হোটেল প্যারাডাইস, সাতক্ষীরা হোটেল, হোটেল সানলাইট, হোটেল সানডে, হোটেল গোল্ডেন কিং, হোটেল মালেক গার্ডেন, হোটেল জেলিকো, হোটেল এনিটা, হোটেল মিলেনিয়ামসহ নগরীর ৮০টি হোটেলেই দেহ ব্যবসাসহ মাদকসেবীদের কাছে রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। কিছু হোটেলে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চলমান থাকায় মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীরা ইয়াবা সেবনের জন্য হোটেল রুম ভাড়া করছেন। হোটেল মালিকরাও ঘন্টাখানেক এর জন্য বেশি মুনাফার আশায় এ মাদকসেবীদেরকে মাদক সেবনের জন্য রুম ভাড়া দিয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি অসমাজিক কার্যকলাপও পরিচালনা করছেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দূর্জয় নারী সংঘের সর্বশেষ ২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী নগরীতে পেশাদার যৌনকর্মী ছিলো সাড়ে ৩ হাজার। যা গত ৮ বছরে আরও প্রায় ২ হাজার জন বেড়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশনের সর্বশেষ ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী নগরীতে অপেশাদার যৌনকর্মী রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। যা গত ৭ বছরে আরও ১ হাজার বেড়েছে। এছাড়া রয়েছে ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মী।
সূত্র মতে, শহর সংলগ্ন বিভিন্ন উপজেলা এবং বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের অভাবী মেয়েরা যৌনকাজে লিপ্ত হচ্ছে। তারা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় শহরে আসছে এবং কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এসব যৌনকর্মীদের অধিকাংশই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত। এছাড়া নগরীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা ক্লিনিকগুলোতে কর্তব্যরত নার্স ম্যানেজার, কম্পাউন্ডার, ওয়ার্ডবয়দের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। এক পর্যায়ে তারাই বিভিন্ন চাহিদা পূরণে দেহ বিলিয়ে দিচ্ছেন।