আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন

0
720

করোনা পরিস্থিতিতে দিশাহারা পুরো বিশ্ব। আর স¤প্রতি জানা যাচ্ছে, দেশে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে যা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে ঈদ উপলক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে শপিংমলে ভিড়, স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে ঘর ও কর্মস্থলে যাতায়াত, সংক্রমিত হলেও দ্রæত পরীক্ষা না করানো- মূলত এই তিন কারণে আবার করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। অন্যদিকে খবরে এমনটিও উঠে এসেছে, কর্তৃপক্ষ দায়সারা কিছু বিধিনিষেধ দিয়ে অনেকটা নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়েছে। এতে ফের প্রাণঘাতী ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার আভাস দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে আরও বেশি তৎপর ও সাধারণ মানুষকে দ্রæত টিকার আওতায় না আনতে পারলে যে কোনো সময় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আমরা মনে করি, এই আশঙ্কাকে সামনে রেখে, সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণগুলো ও টিকার বিষয়টি আমলে নিয়ে যত দ্রæত সম্ভব সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে ১৩ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মস্থল বন্ধ ছিল। এই চারদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৩৯ জন। এর আগে দেশে করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮৭ জন শনাক্ত ও ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিধি-নিষেধের মধ্যেই ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটার জন্য শপিংমলগুলোতে ভিড় জমানো ও অধিকাংশ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়। এ সময় একে অন্যে থেকে সংক্রমিত হলেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা অনেক কম হয়েছে। সংক্রমণ-শনাক্তের হার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঈদের আগের দিন বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তার আগের দিন বুধবার ছিল ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ঈদের দিন শুক্রবার শনাক্তের হার বেড়ে ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়। আবার পরদিন শনিবার তা কমে দশমিক ৯৫ শতাংশ ও রোববার শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ হয়। তবে সোমবার থেকে এটি ক্রমান্বয়ে বেড়ে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ, মঙ্গলবার ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং গত বুধবার ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মূলত নমুনা পরীক্ষা বাড়ায় শনাক্তের সংখ্যা বা হার বাড়তে শুরু করেছে। আমরা বলতে চাই, করোনার ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে দ্রæত সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেই উদ্যোগ গ্রহণেরও বিকল্প নেই। এটা আমলে নেওয়া দরকার, মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে গেছে। ঈদ-মার্কেট থেকে শুরু করে বাস-লঞ্চ স্টেশনে উপচেপড়া ভিড়ে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া এর মধ্যেই ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হলেও কোনোটাই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি বলেও খবরের মাধ্যমে জানা গেছে। এ ছাড়া টিকাদান কার্যক্রম আশার আলো দেখালেও মাঝপথে তা থেমে গেছে। সবমিলে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ায় করোনা সংক্রমণ কমেও বারবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত না করতে পারলে পরিস্থিতি ক্রমাগত ভয়ানক হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। যা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যত দ্রæত সম্ভব করোনা সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিন। সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং সার্বিক দিক বিবেচনায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় আগাম সব ধরনের প্রস্তুতির বিষয়টিও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। করোনাকালীন এই পরিস্থিতিতে যথাযথ সতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার ভয়াবহতাকে বিবেচনায় নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের মতামতগুলো আমলে নেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।